কলিঙ্গ সুপার কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে এফসি গোয়া (FC Goa) এবং জামশেদপুর এফসি’র (amshedpur FC) মধ্যে একটি রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের প্রতীক্ষায় রয়েছে ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। এই ম্যাচটি শুধু শিরোপা জয়ের জন্য নয়, বরং দুই ভিন্ন ফুটবল দর্শনের সংঘর্ষের মঞ্চ। এফসি গোয়ার কোচ মানোলো মার্কেজের আক্রমণাত্মক, বল পজেশন-ভিত্তিক কৌশল এবং জামশেদপুর এফসি’র কোচ খালিদ জামিলের শৃঙ্খলাবদ্ধ, কাউন্টার-অ্যাটাকিং কৌশলের মধ্যে এই ফাইনাল হবে এক কৌশলগত যুদ্ধ। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা ৭:৩০-এ এই ম্যাচটি দুই দলের শক্তি এবং দুর্বলতার একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে।
এফসি গোয়ার আক্রমণাত্মক কৌশল
মানোলো মার্কেজের এফসি গোয়া ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম আক্রমণাত্মক দল। তাদের খেলার ধরন পজেশন-ভিত্তিক, দ্রুত পাসিং এবং ফ্ল্যাঙ্ক থেকে আক্রমণের উপর নির্ভরশীল। ইকের গুয়ারোটক্সেনা, ব্রিসন ফার্নান্ডেস এবং বোর্জা হেরেরার মতো খেলোয়াড়রা গোয়ার আক্রমণের মূল শক্তি। সেমিফাইনালে মোহন বাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে ৩-১ গোলের জয়ে গোয়া তাদের আক্রমণের ধার প্রদর্শন করেছে। মার্কেজ সাধারণত ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করেন, যেখানে মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহাগ এবং আয়ুশ ছেত্রী পজেশন ধরে রাখতে এবং আক্রমণে গতি সরবরাহ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গোয়ার ফুলব্যাকরা, যেমন সেরিটন ফার্নান্ডেস, প্রায়ই ওভারল্যাপ করে ফ্ল্যাঙ্ক থেকে ক্রস সরবরাহ করে, যা জামশেদপুরের রক্ষণের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। তবে, গোয়ার আক্রমণাত্মক ধরন তাদের রক্ষণকে কিছুটা উন্মুক্ত রাখে, যা কাউন্টার-অ্যাটাকে দক্ষ দলের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে।
জামশেদপুর এফসি’র শৃঙ্খলাবদ্ধ কাউন্টার-অ্যাটাক
খালিদ জামিলের জামশেদপুর এফসি শৃঙ্খলাবদ্ধ রক্ষণ এবং দ্রুত কাউন্টার-অ্যাটাকের জন্য পরিচিত। সেমিফাইনালে মুম্বাই সিটি এফসি’র বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ে তারা তাদের রক্ষণাত্মক দৃঢ়তা প্রমাণ করেছে। জামশেদপুর সাধারণত ৪-৪-২ বা ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যবহার করে, যেখানে স্টিফেন এজে এবং প্রতীক চৌধুরীর মতো ডিফেন্ডাররা শক্তিশালী ব্যাকলাইন গঠন করে। মিডফিল্ডে রেই তাচিকাওয়া এবং ইমরান খান বল পুনরুদ্ধার এবং কাউন্টার-অ্যাটাক শুরু করার দায়িত্ব পালন করেন। আক্রমণে জাভি হার্নান্দেজ, জাভিয়ের সিভেরিও এবং জর্ডান মারে দ্রুত এবং সরাসরি খেলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ সৃষ্টি করে। জামশেদপুরের কাউন্টার-অ্যাটাক গোয়ার উন্মুক্ত রক্ষণের জন্য হুমকি হতে পারে, বিশেষ করে যদি তারা মিডফিল্ডে পজেশন হারায়। তবে, জামশেদপুরের রক্ষণকে গোয়ার অবিরাম আক্রমণ সামলাতে হবে, যা তাদের শৃঙ্খলা এবং স্ট্যামিনার পরীক্ষা নেবে।
মূল যুদ্ধক্ষেত্র
এই ম্যাচের ফলাফল অনেকাংশে মিডফিল্ডের দখল এবং ফ্ল্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করবে। গোয়ার মিডফিল্ডার কার্ল ম্যাকহাগের পাসিং রেঞ্জ এবং আয়ুশ ছেত্রীর গতিশীলতা জামশেদপুরের তাচিকাওয়া এবং খানের শারীরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়বে। ফ্ল্যাঙ্কে, গোয়ার ফুলব্যাকদের ওভারল্যাপ জামশেদপুরের নিখিল বার্লা এবং রিকি লাল্লাওমাওয়ার মতো উইঙ্গারদের রক্ষণাত্মক দায়িত্ব বাড়াবে। জামশেদপুরের কাউন্টার-অ্যাটাক সফল হবে যদি তারা গোয়ার উচ্চ ডিফেন্সিভ লাইনের পিছনে জায়গা খুঁজে পায়। এছাড়া, সেট-পিসে জামশেদপুরের এরিয়াল শক্তি (স্টিফেন এজে’র মাধ্যমে) গোয়ার জন্য হুমকি হতে পারে, যেখানে গোয়ার গোলকিপার ধীরাজ সিংয়ের উচ্চতা একটি সুবিধা হবে।
পূর্বের রেকর্ড এবং মানসিকতা
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) ২০২৪-২৫ মৌসুমে জামশেদপুর এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই জয় পেয়েছিল, যা খালিদ জামিলকে মানোলো মার্কেজের বিরুদ্ধে লিগ ডাবল সম্পন্ন করা প্রথম কোচ বানিয়েছে। তবে, খালিদ জামিল ফাইনালের ভিন্নতার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, “ফাইনালে কোনো দ্বিতীয় সুযোগ নেই। গোয়া একটি শক্তিশালী দল, এবং আমাদের সেরাটা দিতে হবে।” মার্কেজও তাঁর দলের মানসিক শক্তির উপর জোর দিয়ে বলেছেন, “আমরা পূর্বের হার ভুলে এই ম্যাচে নতুন শক্তি নিয়ে নামব।” গোয়ার অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা ফাইনালের চাপ সামলাতে পারলেও, জামশেদপুরের তরুণ দল তাদের প্রথম ফাইনালে কীভাবে পারফর্ম করে, তা দেখার বিষয়।
এফসি গোয়া বনাম জামশেদপুর এফসি ফাইনাল কলিঙ্গ সুপার কাপে একটি কৌশলগত দাবার খেলা হবে। গোয়ার আক্রমণাত্মক ফ্লেয়ার জামশেদপুরের শৃঙ্খলাবদ্ধ কাউন্টার-অ্যাটাকের বিরুদ্ধে লড়বে। মিডফিল্ডের নিয়ন্ত্রণ, ফ্ল্যাঙ্কের দখল এবং সেট-পিসের সুযোগ কাজে লাগানো এই ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণ করবে। গোয়া তাদের দ্বিতীয় শিরোপা এবং এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফেরার স্বপ্ন দেখছে, যখন জামশেদপুর প্রথম শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করতে মরিয়া। এই ম্যাচটি ভারতীয় ফুটবলের জন্য একটি দর্শনীয় লড়াই হবে।