ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ (bangladesh) থেকে উস্কানিমূলক মন্তব্যের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের “চিকেন’স নেক” মন্তব্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেতাদের তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছিল।
ফজলুর রহমানের বিবৃতি
এবার একই ধরনের মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের (bangladesh) অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান। তিনি মন্তব্য করেছেন ভারত যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়, তবে বাংলাদেশের উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দখল করা।
ফজলুর রহমান, যিনি একসময় বাংলাদেশ (bangladesh) রাইফেলসের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রধান ছিলেন, ফেসবুকে বাংলায় লিখেছেন, “ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ করে, তবে বাংলাদেশের উচিত উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য দখল করা।” তিনি চীনকে এই পরিকল্পনায় যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “এ বিষয়ে চীনের সঙ্গে যৌথ সামরিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা শুরু করা উচিত।”
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মন্তব্য থেকে সরকারকে দ্রুত আলাদা করে দেয়। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “এই মন্তব্য বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বা নীতির প্রতিফলন নয়, এবং সরকার এ ধরনের বক্তব্যকে কোনোভাবেই সমর্থন বা অনুমোদন করে না।”
মুহাম্মদ ইউনূসের মন্তব্য
বাংলাদেশের (bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উপদেষ্টা শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ফজলুর রহমানের মন্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত মতামত, এবং এটি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করে না। ভারত সরকার এখনও এই মন্তব্যের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে তুলেছে।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত-বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসবাদকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দুই দেশই এই হামলার পর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন নেতা যুদ্ধের জন্য উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। এই পটভূমিতে ফজলুর রহমানের মন্তব্য তাঁর ভারত-বিরোধী অবস্থানকে আরও স্পষ্ট করে।
পাকিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে ‘প্রলয়’, এই বিপজ্জনক ক্ষেপণাস্ত্রের অর্ডার দিতে চলেছে ভারত
বর্তমানে ফজলুর রহমান (bangladesh)
বর্তমানে ফজলুর রহমান ২০০৯ সালের পিলখানা হত্যাকাণ্ডের (bangladesh) তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দফতরে বিদ্রোহের সময় ৭৪ জন, যার মধ্যে সামরিক কর্মকর্তারাও ছিলেন, নিহত হন। এই দায়িত্বে তাঁর পদমর্যাদা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতির সমতুল্য।
ফজলুর রহমানের মন্তব্যকে অনেকে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের চীনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ইউনূস ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সমুদ্রবিহীন বলে উল্লেখ করে চীনকে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের আমন্ত্রণ জানান এবং বাংলাদেশকে (bangladesh) “সমুদ্রের অভিভাবক” হিসেবে প্রচার করেন।
এই মন্তব্য ভারতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এ বছরের শুরুতে ব্যাঙ্ককের বিমসটেক সম্মেলনের প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইউনূসের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে কঠোর বার্তা দেন। মোদী পরামর্শ দেন, ঢাকার উচিত পরিবেশ নষ্ট করে এমন বক্তব্য এড়ানো।
এস জয়শঙ্কর জবাবে বলেন
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইউনূসের মন্তব্যের জবাবে বলেন, “সহযোগিতা মানে পছন্দমতো বিষয় বেছে নেওয়া নয়।” তিনি আরও জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিমসটেকের জন্য একটি সংযোগ কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসছে, যেখানে রাস্তা, রেল, জলপথ, বিদ্যুৎ গ্রিড এবং পাইপলাইনের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার পর থেকে ইউনূস নিযুক্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের থেকে উস্কানিমূলক মন্তব্যের ধারা অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি আপত্তিকর ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছিলেন, যা পরে “ভুল বোঝাবুঝি”র কারণ দেখিয়ে ফেসবুক থেকে মুছে ফেলেন।
সম্প্রতি তিনি তাঁর কার্যালয়ে লস্কর-ই-তইবার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী হারুন ইজহারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যা বাংলাদেশের (bangladesh) সন্ত্রাসবাদ নীতি নিয়ে তীব্র প্রশ্ন তুলেছে। নজরুল পরে দাবি করেন, তিনি কেবল হেফাজত-ই-ইসলামের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তারা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়।
ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টার পদ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধানমন্ত্রীর সমতুল্য। গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পটভূমিতে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন
এদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে “ঘনিষ্ঠতা” নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, পহেলগাঁও হামলার পর দেশের সশস্ত্র বাহিনীর পাশে দাঁড়াবে অসমের প্রতিটি নাগরিক। এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার জটিল ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বাংলাদেশের সরকার ফজলুর রহমানের মন্তব্য থেকে দূরত্ব বজায় রাখলেও, এই ধরনের বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।