অলটারনেটিভ ক্রেডিট স্কোরিং কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে? জেনে নিন বিস্তারিত

ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা নির্ধারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল ক্রেডিট ব্যুরোর স্কোর (Credit Scoring)। তবে এই পদ্ধতি বহু সম্ভাবনাময় ঋণগ্রহীতাকে ঋণের আওতার বাইরে…

Alternative Credit Scoring girl indian

ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা নির্ধারণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল ক্রেডিট ব্যুরোর স্কোর (Credit Scoring)। তবে এই পদ্ধতি বহু সম্ভাবনাময় ঋণগ্রহীতাকে ঋণের আওতার বাইরে রেখে দিয়েছে, বিশেষ করে যারা প্রথমবার ঋণ নিচ্ছেন এবং যাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ক্রেডিট ইতিহাস নেই। এ সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে অলটারনেটিভ ক্রেডিট স্কোরিং (ACS) বা বিকল্প ক্রেডিট মূল্যায়ন পদ্ধতি।
সম্প্রতি ফিনটেক অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজ্যুমার এমপাওয়ারমেন্ট (FACE)-এর এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়, বর্তমানে ভারতের ৮৪ শতাংশ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ক্রেডিট চেকের পাশাপাশি বিকল্প ডেটা ব্যবহার করে ঋণগ্রহীতার ঝুঁকি মূল্যায়ন করছে।

ক্রেডিট মূল্যায়নের নতুন দিগন্ত
ক্রেডজেনিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও চিফ প্রোডাক্ট অ্যান্ড টেকনোলজি অফিসার (CPTO) আনন্দ আগরওয়াল বলেন, “ঐতিহ্যবাহী মূল্যায়ন পদ্ধতির তুলনায় যা শুধুমাত্র ব্যুরোর সীমিত তথ্যের উপর নির্ভর করে, ACS একটি বিস্তৃত তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে গ্রাহকের ঋণগ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণ করে।”

   

এই পদ্ধতিতে গ্রাহকের আর্থিক আচার-আচরণ বিশ্লেষণ করা হয় বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদি) পরিশোধের ইতিহাস
  • বাড়িভাড়ার লেনদেন
  • মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও বিল পরিশোধের ধরন
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের ধরণ
  • ইনস্যুরেন্স ও বিনিয়োগের পরিমাণ
  • ফ্রিল্যান্স বা অনানুষ্ঠানিক আয়ের তথ্য

এই ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে মেশিন লার্নিং এবং প্রেডিকটিভ অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে গ্রাহকের ঋণফেরত দেওয়ার সক্ষমতা পূর্বাভাস করা হয়।

ডেটার পেছনের প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন
সাধারণ একটি স্কোরের পরিবর্তে ACS গ্রাহকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ নিয়মিত সরবরাহকারীদের দ্রুত পেমেন্ট করে, তবে তা তার দায়িত্বশীলতা এবং পেমেন্ট ডিসিপ্লিনের পরিচায়ক হতে পারে, যদিও তার কোনো অফিসিয়াল ক্রেডিট স্কোর না থাকে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণে ভূমিকা
এই বিকল্প পদ্ধতি শুধুমাত্র ঝুঁকি মূল্যায়নেই সহায়তা করছে না, বরং বৃহত্তর জনগণের জন্য ঋণের দরজা খুলে দিচ্ছে। যারা এতদিন ঋণ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, যেমন নতুন চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার, হোম বেইজড ব্যবসায়ী—তাদের জন্য এই পদ্ধতি একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করছে।

জালিয়াতি রোধে সহায়ক
অনেক সময় ভুয়া পরিচয় বা একই ব্যক্তি একাধিক ঋণ নিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। ACS বিভিন্ন স্তরের তথ্য যাচাই করে এই ধরণের ‘সিনথেটিক আইডেন্টিটি ফ্রড’ ও ‘লোন স্ট্যাকিং’ আটকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ঋণদাতার ঝুঁকি কমায়
আনন্দ আগরওয়াল বলেন, “যখন গ্রাহকের ঋণগ্রহণযোগ্যতা নির্ধারণে আরো বিস্তৃত তথ্য ব্যবহৃত হয়, তখন ঋণদাতারা আরও নির্ভুলভাবে ঝুঁকি মূল্যায়ন করতে পারেন। এর ফলে ঋণ খেলাপির হার কমে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।”

ভবিষ্যতের ঋণ ব্যবস্থা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অলটারনেটিভ ক্রেডিট স্কোরিং ভবিষ্যতে ঋণ অনুমোদনের মূল ধারায় পরিণত হবে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে, যেখানে কোটি কোটি মানুষ এখনও আনবেঙ্কড বা আংশিক ব্যাংকড, তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে এই পদ্ধতি হবে একটি বড় চালিকা শক্তি।

অলটারনেটিভ ক্রেডিট স্কোরিং কেবল প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, এটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি প্রতিশ্রুতি। যখন একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র তার মোবাইল বিল বা ঘরভাড়ার নিয়মিত পরিশোধ করে একটি ঋণ পাওয়ার সুযোগ পায়, তখন সেই সমাজে সমতা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে, এই পদ্ধতির আরও বিস্তার শুধুমাত্র ঋণদাতার জন্যই নয়, বরং গ্রাহক ও অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।