ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) মারাঠা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জীবনের সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক স্থানগুলো ঘুরে দেখার জন্য একটি বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ভ্রমণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ‘ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ সার্কিট’ নামে এই ছয় দিনের ভ্রমণটি ভারত গৌরব ট্যুরিস্ট ট্রেনে (Bharat Gaurav Train) শুরু হবে ৯ জুন, ২০২৫ থেকে। ভ্রমণটি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস (সিএসএমটি), মুম্বাই থেকে শুরু হবে এবং পর্যটকরা দাদর এবং থানে থেকেও ট্রেনে উঠতে পারবেন। এই ভ্রমণে পর্যটকরা শিবাজী মহারাজের জীবনের সঙ্গে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান এবং ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য এবং বুকিংয়ের জন্য পর্যটকরা www.irctctourism.com/bharatgaurav ওয়েবসাইটে যেতে পারেন।
ভ্রমণের বিস্তারিত রুট ও সময়সূচি
প্রথম দিন: ভ্রমণটি মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস থেকে শুরু হবে। ট্রেন কোঙ্কণ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মানগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে, যা রায়গড় দুর্গের নিকটতম রেল সংযোগ। রায়গড় দুর্গে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের রাজ্যাভিষেক (রাজ্যাভিষেক) অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি পরবর্তীতে তাঁর রাজধানী হিসেবে কাজ করেছিল। দর্শন শেষে পর্যটকরা ট্রেনে ফিরে পুনেতে যাবেন, যেখানে তারা হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে রাত্রিযাপন করবেন।
দ্বিতীয় দিন: পুনেতে পর্যটকরা লাল মহল, কসবা গণপতি এবং শিবশ্রুতি পরিদর্শন করবেন। লাল মহল ১৬৩০ সালে শিবাজী মহারাজের পিতা শাহাজী ভোঁসলে তাঁর স্ত্রী জিজাবাই এবং পুত্রের জন্য নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমান কাঠামোটি ১৯৮৪ সালে পুনর্নির্মিত এবং এখানে শিবাজী মহারাজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী চিত্রিত তৈলচিত্রের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। কসবা গণপতি মন্দির, পুনের প্রধান দেবতা হিসেবে পরিচিত, ১৮৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং এটি জিজাবাইয়ের দ্বারা চিহ্নিত বলে মনে করা হয়। এরপর পর্যটকরা শিবশ্রুতি পরিদর্শন করবেন, যা শিবাজী মহারাজের জীবন ও কীর্তিকে প্রদর্শনকারী বিশ্বের বৃহত্তম ঐতিহাসিক থিম পার্ক। এখানে পর্যটকরা ৩ডি-তে শিবাজী মহারাজের জীবন কাহিনী দেখতে পাবেন এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ সেশনে অংশ নিতে পারবেন। রাত্রি পুনেতে কাটানো হবে।
তৃতীয় দিন: পুনের থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে জুন্নারের কাছে শিবনেরী দুর্গ পরিদর্শন করা হবে। এই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত দুর্গটি শিবাজী মহারাজের জন্মস্থান এবং মারাঠা গৌরব ও মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক। দুপুরের খাবারের পর, পর্যটকরা ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরে যাবেন, যা ভারতের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের একটি। এরপর পুনেতে ফিরে রাত্রিযাপন করা হবে।
চতুর্থ দিন: পর্যটকরা ট্রেনে করে সাতারার উদ্দেশে রওনা দেবেন। এখানে প্রধান গন্তব্য হলো প্রতাপগড় দুর্গ, যেখানে ১৬৫৯ সালে শিবাজী মহারাজ এবং বিজাপুর সুলতানতের জেনারেল আফজাল খানের মধ্যে ঐতিহাসিক প্রতাপগড়ের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধ মারাঠা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করেছিল। দর্শন শেষে পর্যটকরা দুপুরের খাবার গ্রহণ করে কোলহাপুরের উদ্দেশে ট্রেনে রওনা দেবেন।
পঞ্চম দিন: ট্রেন ভোরে ছত্রপতি শাহু মহারাজ টার্মিনাস, কোলহাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে। স্নান, পোশাক পরিবর্তন এবং হোটেলে প্রাতঃরাশের পর, পর্যটকরা মহালক্ষ্মী মন্দিরে (যা আম্বাবাই নামে পরিচিত) দর্শন করবেন। এরপর তারা পানহালা দুর্গ পরিদর্শন করবেন। সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণীর উপর অবস্থিত এই পাহাড়ি দুর্গটি অসংখ্য যুদ্ধের সাক্ষী এবং শিবাজী মহারাজের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। এটি ‘সাপের দুর্গ’ নামে পরিচিত, কারণ এর গঠন জিগজ্যাগ আকৃতির। এই দুর্গে শিবাজী মহারাজ ৫০০ দিনেরও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন এবং এখানে তিনি বন্দী হয়েছিলেন এবং পরে পালিয়েছিলেন। দুর্গটি শিবাজী মহারাজের সেনাপতি বাজী প্রভু দেশপাণ্ডের বীরত্বের জন্যও স্মরণীয়।
ষষ্ঠ দিন: সন্ধ্যায় ট্রেন মুম্বাইয়ের উদ্দেশে ফিরতি যাত্রা শুরু করবে এবং ভোরে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাসে পৌঁছাবে।
প্যাকেজের বিবরণ ও খরচ
এই ভ্রমণ প্যাকেজটি তিনটি শ্রেণিতে পাওয়া যাবে: ইকোনমি (স্লিপার ক্লাস) প্রতি ব্যক্তি ১৩,১৫৫ টাকা, কমফোর্ট (থ্রি-এসি) প্রতি ব্যক্তি ১৯,৮৪০ টাকা এবং সুপিরিয়র (টু-এসি) প্রতি ব্যক্তি ২৭,৩৬৫ টাকা। এই সর্ব-সমেত মূল্যে ট্রেন ভাড়া, আরামদায়ক হোটেলে রাত্রিযাপন, শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার, বাসে স্থানান্তর ও দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন, ভ্রমণ বীমা এবং ট্যুর এসকর্ট পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ট্রেনটি এসি ফার্স্ট, এসি সেকেন্ড এবং এসি থার্ড টায়ার কোচের সমন্বয়ে গঠিত এবং এতে ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং তাজা খাবার প্রস্তুতের জন্য একটি সুসজ্জিত প্যান্ট্রি কার রয়েছে।
আইআরসিটিসি’র প্রতিশ্রুতি
আইআরসিটিসি এই ভ্রমণকে নিরাপদ এবং স্মরণীয় করতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাবে। ভারত গৌরব ট্যুরিস্ট ট্রেন ভারত সরকারের ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ এবং ‘দেখো আপনা দেশ’ উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি প্রদর্শনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। পর্যটকদের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ, যারা শিবাজী মহারাজের জীবন ও মারাঠা সাম্রাজ্যের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চান। আরও তথ্যের জন্য পর্যটকরা ৮২৮৭৯৩১৮৮৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।