ভারত-পাক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সম্ভবত বাতিল হচ্ছে এশিয়া কাপ

এশিয়া কাপ ২০২৫-এর (Asia Cup 2025) ১৭তম সংস্করণ, যা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে…

Asia Cup 2025 Likely Cancelled Amid India-Pakistan Political Tensions

এশিয়া কাপ ২০২৫-এর (Asia Cup 2025) ১৭তম সংস্করণ, যা আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তা বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা, বিশেষ করে গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর এই সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার জেরে ভারত সরকার এবং দেশের নাগরিকদের তরফে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট সংক্রান্ত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠেছে। শুধু এশিয়া কাপই নয়, আগামী আগস্টে ভারতের বাংলাদেশ সফরও এই উত্তেজনার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

পহেলগাঁও হামলা ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে নতুন করে তলানিতে নিয়ে গেছে। ভারতের অভিযোগ, এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। হামলার পর ভারত সরকার একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্দুস জলচুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করা এবং ভারতে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ। এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (বিসিসিআই)-এর উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে যাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ খেলা থেকে বিরত থাকা হয়।

   

এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ
এশিয়া কাপ ২০২৫-এর আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এই টুর্নামেন্টটি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যা ২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে কাজ করত। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং হংকং-এর মতো আটটি দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়া এই টুর্নামেন্টের বাণিজ্যিক মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, কারণ এই দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিশ্বব্যাপী দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) মিডিয়া অধিকারের জন্য ১৭০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে, যার একটি বড় অংশ নির্ভর করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উপর।

প্রাথমিকভাবে ভারত এই টুর্নামেন্টের আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল, কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে এটি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের সম্ভাবনা ছিল। শ্রীলঙ্কা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্ভাব্য ভেন্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্টটি পিছিয়ে দেওয়া বা বাতিল করার সম্ভাবনাই বেশি বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সফরের অনিশ্চয়তা
এশিয়া কাপের পাশাপাশি ভারতের আগামী আগস্টে বাংলাদেশ সফরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভারতীয় দলের তিনটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল ঢাকার শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ছাড়াও বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বিতর্কিত মন্তব্য এই সফরকে আরও জটিল করে তুলেছে। মেজর জেনারেল (অব.) এএলএম ফজলুর রহমান ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন যে বাংলাদেশের উচিত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য দখলের কথা ভাবা। এই মন্তব্যের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা ক্রিকেট সফরের উপর প্রভাব ফেলছে।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, “সফরটি আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের অংশ, কিন্তু এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতের বাংলাদেশে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সফরে না যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।”

ক্রিকেটের উপর রাজনীতির প্রভাব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সীমিত। ২০১২-১৩ সালের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কোনো দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ হয়নি। শুধুমাত্র আইসিসি এবং এসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টে এই দুই দল মুখোমুখি হয়। সর্বশেষ ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ে ভারত পাকিস্তানকে ছয় উইকেটে পরাজিত করে।

পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ক্রীড়া ও রাজনীতিকে আলাদা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ভিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ, জো রুটের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হলে আমরা ভাইয়ের মতো মিশি। রাজনীতিকে খেলাধুলার সঙ্গে মেশানো উচিত নয়।” তবে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট বয়কটের দাবি আরও জোরালো হয়েছে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান ব্যস্ততা
বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেটাররা আইপিএল ২০২৫-এ ব্যস্ত। আইপিএল শেষ হওয়ার পর দলটি ইংল্যান্ড সফরে যাবে, যেখানে ২০ জুন থেকে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে। এই সফরের পরই বাংলাদেশ সফর এবং এশিয়া কাপের কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটি ইভেন্টই অনিশ্চিত।

পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অবনতি এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ভাগ্যকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ছাড়া এই টুর্নামেন্টের আকর্ষণ এবং বাণিজ্যিক মূল্য কমে যায়, যা এসিসি এবং সম্প্রচারকারীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ভারতের সফরকে আরও জটিল করে তুলেছে। ক্রিকেট প্রেমীরা এই টুর্নামেন্ট এবং সফরের জন্য অপেক্ষায় থাকলেও, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই আশাকে ম্লান করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এসিসি এবং বিসিসিআই কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।