‘সাংসদের নাবালক সন্তান ভারতীয় নয়’, নাম না করে গগৈ কে নিশানা হিমন্তর

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) একটি বিস্ফোরক দাবি করে বলেছেন, “আমি সম্পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে বলছি—অসমের একজন সাংসদের নাবালক সন্তান আর ভারতের নাগরিক নয়। এটি…

himanta askes gourav gogoi

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) একটি বিস্ফোরক দাবি করে বলেছেন, “আমি সম্পূর্ণ দায়িত্বের সঙ্গে বলছি—অসমের একজন সাংসদের নাবালক সন্তান আর ভারতের নাগরিক নয়। এটি কেবল শুরু, আরও অনেক কিছু প্রকাশিত হবে।”

এই মন্তব্যটি তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে করেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যদিও শর্মা সাংসদের নাম উল্লেখ করেননি, তবে এটি কংগ্রেসের লোকসভার উপনেতা গৌরব গগৈকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনা অসমের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

   

পটভূমি ও শর্মার অভিযোগ

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (himanta) এবং গৌরব গগৈয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। এর আগে, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫-এ শর্মা গগৈয়ের স্ত্রী এলিজাবেথ কোলবার্ন গগৈয়ের পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি এনজিও থেকে বেতন নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন এবং গৌরব গগৈয়ের স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।

তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “গৌরব গগৈ কি ১৫ দিনের জন্য পাকিস্তানে ছিলেন ? তার স্ত্রী কি পাকিস্তান-ভিত্তিক একটি এনজিও থেকে বেতন নেন? তার স্ত্রী এবং সন্তানদের নাগরিকত্বের অবস্থা কী? তারা কি ভারতীয় নাগরিক, নাকি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব ধারণ করেন?”

শর্মা আরও দাবি করেন (himanta)

শর্মা (himanta) আরও দাবি করেন, একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) পাকিস্তানি নাগরিক আলি তৌকীর শেখের সঙ্গে গৌরব গগৈয়ের স্ত্রীর সম্পর্কের তথ্য উদঘাটন করেছে এবং আগামী ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে এই বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ করা হবে। তিনি গৌরব গগৈয়ের বাবা, প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নাতি-নাতনিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব না থাকার বিষয়টিকে “হৃদয়বিদারক” বলে উল্লেখ করেন।

গৌরব গগৈয়ের প্রতিক্রিয়া

গৌরব গগৈ এই অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ করে বলেছেন, “আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে কেউই কখনো পাকিস্তানে যায়নি। আমার পরিবারের কোনো সদস্য পাকিস্তান থেকে কোনো বেতন বা আর্থিক সহায়তা নেয়নি। আমার পরিবারের সকল সদস্য, স্ত্রী, ছেলে এবং মেয়ে সহ, ভারতীয় নাগরিক। আমার কোনো সন্তান কখনো ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ বা বাতিল করেনি।”

তিনি শর্মার (himanta) অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তুলেছেন, “আপনি কি আমার এবং আমার স্ত্রীকে শত্রু দেশের এজেন্ট বলে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করবেন? আপনার নিজের স্ত্রী এবং সন্তানদের সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দেবেন? অসমের পাহাড় ধ্বংসকারী কয়লা মাফিয়াদের গ্রেপ্তার করবে রাজ্য পুলিশ?” গগৈ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন, যখন তিনি এই অভিযোগের জবাব দেবেন বলে জানিয়েছেন।

ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের প্রেক্ষাপট

ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর অধীনে, কোনো ভারতীয় নাগরিক যদি স্বেচ্ছায় বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তবে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব হারান (ধারা ৯)। যদি কোনো পিতা বা মাতা তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন, তবে তাদের নাবালক সন্তানরাও নাগরিকত্ব হারায়। তবে, এই সন্তানরা ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার এক বছরের মধ্যে ভারতীয় নাগরিকত্ব পুনরুদ্ধারের জন্য আবেদন করতে পারে।

শর্মার (himanta) দাবি ইতিমধ্যে, গৌরব গগৈয়ের স্ত্রী এলিজাবেথ কোলবার্ন গগৈ একজন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন, যিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব নিয়ে শর্মার অভিযোগের কোনো প্রমাণ এখনো সর্বজনীনভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। গগৈয়ের দাবি অনুযায়ী, তার সন্তানরা ভারতীয় নাগরিক এবং কখনো নাগরিকত্ব ত্যাগ করেনি।

কৃষি উন্নয়নে এগিয়ে অরুণাচল, সিএইউ বোর্ডে দুই প্রতিনিধি

রাজনৈতিক প্রভাব

এই বিতর্ক অসমের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শর্মার (himanta) অভিযোগকে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক কে.সি. বেণুগোপাল “নীচ” এবং “দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরানোর প্রয়াস” বলে সমালোচনা করেছেন। অন্যদিকে, বিজেপি এই ঘটনাকে গৌরব গগৈয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

শর্মার (himanta) দাবি, এই তদন্তের মাধ্যমে আরও তথ্য প্রকাশিত হবে, যা গৌরব গগৈ এবং তার পরিবারের পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রমাণ করবে। এই ঘটনা অসমে আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আইনি ও প্রশাসনিক দিক

ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্ব হারানোর বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহ মন্ত্রণালয়ের (এমএইচএ) এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। নাগরিকত্ব বাতিল বা ত্যাগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, এবং এটি সর্বজনীনভাবে ঘোষণা করা হয়। শর্মার দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এমএইচএ-র কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক নথি বা ঘোষণার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে, এই অভিযোগের সমর্থনে কোনো সরকারি নথি প্রকাশিত হয়নি।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার (himanta) এই দাবি অসমের রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে। গৌরব গগৈ এবং তার পরিবারের নাগরিকত্ব নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি, এবং গগৈ এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।

আগামী দিনে এই তদন্তের ফলাফল এবং শর্মার প্রতিশ্রুত তথ্য প্রকাশ এই বিতর্কের দিক নির্ধারণ করবে। এই ঘটনা অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে এবং জাতীয় পর্যায়ে নাগরিকত্ব আইনের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনাকে উসকে দিয়েছে।