UPI পেমেন্ট এখন আরও ফাস্ট, ১৬ জুন থেকে কার্যকর নতুন নির্দেশিকা

ডিজিটাল লেনদেনে আরও দ্রুততা ও নির্ভরযোগ্যতা আনতে UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস)-এর প্রতিক্রিয়া সময় কমিয়ে আনল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)। ২৬ এপ্রিলের একটি বিজ্ঞপ্তিতে…

An Indian woman is using her smartphone to make a digital payment using the UPI system in India. The background is a bright and colorful marketplace

ডিজিটাল লেনদেনে আরও দ্রুততা ও নির্ভরযোগ্যতা আনতে UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস)-এর প্রতিক্রিয়া সময় কমিয়ে আনল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)। ২৬ এপ্রিলের একটি বিজ্ঞপ্তিতে এনপিসিআই জানায়, ২০২৫ সালের ১৬ জুন থেকে এই নতুন সময়সীমা বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর হবে। এর ফলে, ইউপিআই-এর বিভিন্ন সেবায় আরও দ্রুত সাড়া পাওয়ার আশা করছেন ব্যবহারকারীরা।

নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ইউপিআই-এর ‘রেকোয়েস্ট পে’ এবং ‘রেসপন্স পে’ কার্যক্রমে এখন যেখানে ৩০ সেকেন্ড সময় পাওয়া যেত, তা কমিয়ে ১৫ সেকেন্ড করা হয়েছে। ‘চেক ট্রানজাকশন স্ট্যাটাস’ ও ‘ট্রানজাকশন রিভার্সাল’-এর ক্ষেত্রেও সময়সীমা ৩০ সেকেন্ড থেকে কমিয়ে ১০ সেকেন্ডে আনা হয়েছে। এমনকি, ‘ভ্যালিডেট অ্যাড্রেস’-এর সময়ও ১৫ সেকেন্ড থেকে কমিয়ে ১০ সেকেন্ড করা হয়েছে।

   

এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল উদ্দেশ্য হল— ইউজার অভিজ্ঞতা উন্নত করা, লেনদেন সংক্রান্ত বিলম্ব কমানো এবং বিপরীত লেনদেনের (রিভার্সাল) প্রক্রিয়া দ্রুততর করা। তবে, এনপিসিআই সতর্ক করে জানিয়েছে, এই সময়সীমা কমানোর কারণে কোনোভাবেই প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা বা পরিষেবা বিভ্রাট যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক ও পেমেন্ট অ্যাপগুলিকে।

পরপর বিভ্রাট ঘিরে উদ্বেগ
এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এসেছে, যখন মার্চ ও এপ্রিল মাসে ইউপিআই প্ল্যাটফর্মে একাধিকবার বিভ্রাটের ঘটনা ঘটে গেছে। মার্চের ২৬ তারিখ, এপ্রিলের ১ ও ১২ তারিখ পরপর তিন সপ্তাহে তিনটি বড় আকারের বিভ্রাটে সমস্যায় পড়েন বহু গ্রাহক। এর ফলে জিপে (GPay), ফোনপে (PhonePe)-র মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলিতে লেনদেন ব্যাহত হয়। এই ঘটনাগুলি ইউপিআই-এর স্থায়িত্ব এবং নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এনপিসিআই-এর একটি তদন্তে জানা গিয়েছে, এই বিভ্রাটগুলির মূল কারণ ছিল প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং নজরদারির অভাব। বিশেষ করে, ‘চেক ট্রানজাকশন স্ট্যাটাস’ এপিআই অতিরিক্ত হারে ব্যবহারের ফলে সার্ভার-এ অস্বাভাবিক চাপ পড়ে। এমনকি, কিছু PSP ব্যাঙ্ক পুরনো লেনদেনগুলির ক্ষেত্রেও বারংবার ‘চেক ট্রানজাকশন’ অনুরোধ পাঠাচ্ছিল, যা পুরো ব্যবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করে তোলে।

ইউপিআই-এর উপর দেশের নির্ভরতা
বর্তমানে ইউপিআই দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতি মাসে প্রায় ২৫ লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হয় এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। ব্যাঙ্ক, ই-ওয়ালেট, এবং বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে এই পরিষেবার উপর নির্ভরশীল। সেই কারণে একাধিক বিভ্রাটের ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করেছে।

Advertisements

এই পরিস্থিতিতে, ইউপিআই-এর প্রতিক্রিয়া সময় কমিয়ে আনার এই উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন। প্রযুক্তিগত দিক থেকে এটি একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, ব্যবহারকারীদের সুবিধার্থে ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এই ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে।

ভবিষ্যতের রূপরেখা
এনপিসিআই জানিয়েছে, সমস্ত অংশগ্রহণকারী ব্যাঙ্ক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (PSP) এই নতুন গাইডলাইন মেনে চলতে হবে এবং উপযুক্ত প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে, ব্যাঙ্কগুলিকে নিজেদের সার্ভার সক্ষমতা বাড়াতে এবং সফটওয়্যারে উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

প্রযুক্তিগত ত্রুটি এড়াতে ‘ট্রানজাকশন স্ট্যাটাস চেক’-এর উপর একটি সীমা নির্ধারণ করার কথাও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে, যাতে একই লেনদেনের জন্য অকারণে একাধিকবার অনুরোধ না পাঠানো হয়।

যত দ্রুত ডিজিটাল ইকোনমির উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে, ততই প্রয়োজন আরও দৃঢ়, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সিস্টেমের। ইউপিআই একটি বিপ্লব এনেছে ভারতে ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে। এই প্রেক্ষাপটে এনপিসিআই-এর সময়সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও সাহসী পদক্ষেপ। তবে, এর বাস্তবায়ন কতটা সফল হয় এবং তাতে গ্রাহক অভিজ্ঞতা কতটা উন্নত হয়, তা সময়ই বলবে।