পহেলগাঁও মন্তব্যের জেরে প্রিয়াঙ্কা-স্বামী রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা

এলাহাবাদ হাইকোর্ট আগামী শুক্রবার (২ মে ২০২৫) কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার স্বামী রবার্ট বঢরার (Robert Vadra) বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি পিটিশনের শুনানি গ্রহণ করবে।…

Robert Vadra

এলাহাবাদ হাইকোর্ট আগামী শুক্রবার (২ মে ২০২৫) কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার স্বামী রবার্ট বঢরার (Robert Vadra) বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি পিটিশনের শুনানি গ্রহণ করবে। এই পিটিশনটি পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত বঢরার বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে। হিন্দু ফ্রন্ট ফর জাস্টিস এবং অন্যান্যদের পক্ষ থেকে লখনউ বেঞ্চে এই পিটিশনটি দায়ের করা হয়েছে। পিটিশনটি বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিচারপতি রাজন রায় এবং ওম প্রকাশ শুক্লার বেঞ্চে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত ছিল, কিন্তু তা শুনানি হয়নি।

পিটিশনে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে যাতে রবার্ট বঢরার মন্তব্যের তদন্তের জন্য একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করা হয়। এছাড়াও, এই পিটিশনে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) বিভিন্ন ধারার অধীনে ব্যবসায়ী রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

   

পহেলগাঁও হামলা ও বঢরার মন্তব্য

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পহেলগাঁও ের নিকটবর্তী বাইসারান মেডোতে জঙ্গিরা গুলি চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যা লস্কর-ই-তৈবার একটি শাখা, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জঙ্গিরা হিন্দু পুরুষদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে এবং ইসলামী শ্লোক পাঠ করতে বলে তাদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

এই হামলার পরদিন, ২৩ এপ্রিল, রবার্ট বঢরা, যিনি কংগ্রেসের সংসদীয় দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর জামাতা এবং সাংসদ রাহুল গান্ধীর শ্যালক, একটি বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যখন এই জঙ্গি হামলা ঘটে, তারা (জঙ্গিরা) পরিচয়পত্র দেখছিল… অমুসলিমরা আক্রান্ত হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রীকে বার্তা দেওয়া হয়েছিল। কেন এটা ঘটছে? কারণ তারা (জঙ্গিরা) মনে করে যে ভারতে মুসলিমরা ‘অত্যাচারিত’ হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে, আমরা দেখি যে এই সরকার হিন্দুত্বের কথা বলে, এবং সংখ্যালঘুরা অস্বস্তি এবং সমস্যায় পড়ে… এই ধরনের জিনিস অস্থিরতা এবং সাম্প্রদায়িক সমস্যা সৃষ্টি করে।”

বঢরা যদিও স্পষ্ট করেছেন যে এটি তার ব্যক্তিগত মতামত এবং তিনি কংগ্রেস দল বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলছেন না, তার এই মন্তব্য তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম দেখে না। কিন্তু… আমি মনে করি যখন দেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা থাকে, মানুষ দুর্বল বোধ করে। এতে বিভাজন সৃষ্টি হয় এবং আমরা আমাদের দেশে তা দেখতে পাই।”

বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া

ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বঢরার এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। বিজেপি মুখপাত্র সিআর কেশবন বলেন, “রবার্ট বঢরার এই অত্যন্ত নিন্দনীয় মন্তব্য ক্ষমার অযোগ্য। তিনি কি পাকিস্তানের প্রক্সি, নাকি জঙ্গিদের প্রক্সি? কারণ তিনি এমন ভাষায় কথা বলছেন যেন জঙ্গিদের এই জঘন্য কাজের জন্য কোনো ন্যায্যতা আছে।” বিজেপি জাতীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেন, “বঢরার মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি এই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার উপর রাজনীতি করতে চান, যখন পুরো দেশ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।” তারা বঢরার কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে এবং কংগ্রেসের দ্বিমুখী নীতির প্রশ্ন তুলেছে।

Advertisements

বঢরার স্পষ্টীকরণ

বিতর্কের প্রায় এক সপ্তাহ পর, ২৮ এপ্রিল, রবার্ট বঢরা ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে তার মন্তব্যের স্পষ্টীকরণ দেন। তিনি বলেন, “আমার উদ্দেশ্য ভুলভাবে বোঝানো হয়েছে। আমি সততা, স্বচ্ছতা এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেকে স্পষ্ট করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি কয়েকদিন নীরব থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কিন্তু এটিকে নীরবতা, উদাসীনতা বা দেশপ্রেমের অভাব বলে ভুল করা উচিত নয়।” তিনি পহেলগাঁও হামলাকে “কাপুরুষোচিত” বলে নিন্দা করেন এবং বলেন, “কোনো রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা আদর্শগত যুক্তি নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে সমর্থন করতে পারে না। সন্ত্রাসবাদ মানবতার আত্মার উপর আক্রমণ।” তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসার শিক্ষাকে স্মরণ করার আহ্বান জানান।

পিটিশনের বিবরণ

হিন্দু ফ্রন্ট ফর জাস্টিসের পক্ষে অ্যাডভোকেট রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী এই পিটিশনটি দায়ের করেছেন। পিটিশনে বলা হয়েছে যে বঢরার মন্তব্য দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এটি দাবি করেছে যে তার মন্তব্য জঙ্গিদের ক্রিয়াকলাপের জন্য একটি ন্যায্যতা প্রদান করার চেষ্টা করে, যা দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায়। পিটিশনে এসআইটি গঠনের মাধ্যমে এই মন্তব্যের উদ্দেশ্য এবং প্রভাব তদন্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। এছাড়াও, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারাগুলির অধীনে বঢরার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি

এই পিটিশনটি এমন এক সময়ে শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে যখন পহেলগাঁও হামলা নিয়ে দেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। বঢরার মন্তব্যের পর বিজেপি কংগ্রেসের উপর দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ তুলেছে, যেখানে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে সরকারের সঙ্গে ঐক্য প্রকাশ করলেও বঢরার মন্তব্য তাদের অবস্থানের বিপরীত বলে দাবি করা হচ্ছে। শুক্রবারের শুনানিতে আদালত এই পিটিশনের ভিত্তিতে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেশের রাজনৈতিক ও আইনি মহলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

রবার্ট বঢরার পহেলগাঁও হামলা সংক্রান্ত মন্তব্য এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা পিটিশন দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার সংবেদনশীল বিষয়গুলিকে সামনে এনেছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চে এই মামলার শুনানি এই বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হতে চলেছে। বঢরার স্পষ্টীকরণ সত্ত্বেও, এই মন্তব্যের রাজনৈতিক এবং আইনি প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।