Amul Hikes Milk Prices: ভারতের শীর্ষস্থানীয় দুগ্ধজাত পণ্য সংস্থা আমুল বুধবার ঘোষণা করেছে যে, ১ মে থেকে দেশের সমস্ত বাজারে তাজা পাউচ দুধের দাম লিটার প্রতি ২ টাকা বাড়ানো হবে। এই ঘোষণা এসেছে প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থা মাদার ডেয়ারির দুধের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরপরই। মাদার ডেয়ারি মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া দুধের দাম লিটারে ২ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর কথা জানিয়েছিল। গুজরাট কো-অপারেটিভ মিল্ক মার্কেটিং ফেডারেশন (জিসিএমএমএফ), যারা আমুল ব্র্যান্ডের মালিক, জানিয়েছে যে এই ২ টাকা বৃদ্ধি দুধের খুচরা মূল্যে (এমআরপি) ৩-৪% বৃদ্ধির সমান, যা গড় খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় অনেক কম।
নতুন দামের বিবরণ
দাম বৃদ্ধির ফলে দিল্লি, মুম্বই এবং উত্তরপ্রদেশের বাজারে আমুল তাজা ব্র্যান্ডের ১ লিটার পাউচের দাম এখন ৫৭ টাকা এবং গো-দুধের (কাউ মিল্ক) ১ লিটার পাউচের দাম ৫৯ টাকা হবে। একইভাবে, মহিষের দুধের (বাফেলো মিল্ক) ১ লিটার পাউচের দাম এখন ৭৫ টাকা, এবং আমুল গোল্ড ব্র্যান্ডের দুধের দাম ৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গুজরাটের আহমেদাবাদ, সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ অঞ্চলে আমুল কাউ মিল্কের ১ লিটার পাউচের দাম ৫৫ টাকা, আমুল গোল্ডের দাম ৬৭ টাকা এবং মহিষের দুধের দাম ৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, টি-স্পেশাল ব্র্যান্ডের ১ লিটার পাউচের দাম ৬৩ টাকা করা হয়েছে। গুজরাটে ৫০০ মিলিলিটার পাউচের ক্ষেত্রে, শক্তি, কাউ এবং তাজা ব্র্যান্ডের দুধের দাম যথাক্রমে ৩১ টাকা, ২৯ টাকা এবং ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জিসিএমএমএফ জানিয়েছে, গত বছর প্রায় পাঁচ মাস ধরে তারা ১ লিটার পাউচে অতিরিক্ত ৫০ মিলিলিটার এবং ২ লিটার পাউচে অতিরিক্ত ১০০ মিলিলিটার দুধ সরবরাহ করেছে। এছাড়া, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে সংস্থাটি সমস্ত বাজারে ১ লিটার পাউচের দাম ১ টাকা কমিয়েছিল। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালের জুন মাসের পর থেকে তাজা পাউচ দুধের দাম বাড়ানো হয়নি।
দাম বৃদ্ধির কারণ
আমুল দাম বৃদ্ধির জন্য দুধ উৎপাদনের কাঁচামালের খরচ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছে। জিসিএমএমএফ-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দুধ উৎপাদনের ইনপুট খরচ বৃদ্ধির কারণে আমাদের ৩৬ লক্ষ দুধ উৎপাদনকারী কৃষকদের জন্য উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।” সংস্থাটি জানিয়েছে, গত এক বছরে তাদের সদস্য ইউনিয়নগুলি কৃষকদের জন্য দুধের দামও একই অনুপাতে বাড়িয়েছে।
আমুলের নীতি অনুসারে, ভোক্তাদের প্রদত্ত প্রতি টাকার মধ্যে প্রায় ৮০ পয়সা দুধ উৎপাদনকারী কৃষকদের কাছে পৌঁছে যায়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই দাম বৃদ্ধি আমাদের দুধ উৎপাদনকারীদের জন্য লাভজনক দাম বজায় রাখতে এবং তাদের উচ্চতর দুধ উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।”
বাজারে প্রভাব
দুধ ভারতীয় পরিবারের একটি অপরিহার্য উপাদান, এবং আমুল ও মাদার ডেয়ারির মতো শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলির দাম বৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি, যারা দৈনন্দিন খরচের জন্য বাজেটের উপর নির্ভর করে, এই দাম বৃদ্ধির কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে। তবে, জিসিএমএমএফ জানিয়েছে যে এই বৃদ্ধি খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির তুলনায় কম, এবং তারা কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আমুল এবং মাদার ডেয়ারির দাম বৃদ্ধি অন্যান্য স্থানীয় এবং আঞ্চলিক দুগ্ধ সংস্থাগুলিকেও দাম বাড়ানোর জন্য প্রভাবিত করতে পারে। এটি সামগ্রিকভাবে দুগ্ধজাত পণ্যের বাজারে দামের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, আমুলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা গ্রাহকদের জন্য মূল্য সাশ্রয়ী রাখতে এবং একই সঙ্গে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আমুলের অবস্থান
আমুল ভারতের দুগ্ধ শিল্পে একটি শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। গুজরাটের কৃষক-মালিকানাধীন এই সমবায় সংস্থাটি দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে তাদের পণ্য সরবরাহ করে। আমুলের দুধ, মাখন, পনির, দই এবং আইসক্রিমের মতো পণ্যগুলি ভারতীয় বাজারে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সংস্থাটি কৃষকদের সরাসরি লাভের অংশীদার করার মাধ্যমে দেশের দুগ্ধ শিল্পে বিপ্লব এনেছে।
জিসিএমএমএফ-এর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা সবসময় কৃষক এবং গ্রাহকদের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। দুধ উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কারণে এই সামান্য দাম বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তবে, আমরা নিশ্চিত করছি যে এই বৃদ্ধি গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে।”
ভবিষ্যৎ প্রভাব
দাম বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত ভারতের দুগ্ধ শিল্পে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। কৃষকদের জন্য লাভজনক দাম নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার উপরও নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে, শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলি এই দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের দৈনন্দিন খরচের বাজেট পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য হতে পারে।
এছাড়া, দুগ্ধ শিল্পে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে আমুল এবং মাদার ডেয়ারির মতো বড় সংস্থাগুলির উপর গ্রাহকদের প্রত্যাশা বাড়ছে। স্থানীয় বাজারে ছোট সংস্থাগুলি কম দামে দুধ সরবরাহ করে প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারে। তবে, আমুলের ব্র্যান্ড মূল্য এবং গুণগত মান তাদের বাজারে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমুলের দুধের দাম বৃদ্ধি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং উৎপাদন ব্যয় মেটানোর জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলেও, এটি ভোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছে যে তারা গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য এবং কৃষকদের জন্য ন্যায্য দামের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতে দুগ্ধ শিল্পে এই ধরনের দামের ওঠানামা অব্যাহত থাকতে পারে, তবে আমুলের মতো সংস্থাগুলির কৌশলগত পদক্ষেপ এই শিল্পের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।