২০২৫ সালের ভারতের বড় রাজ্যগুলোর সামগ্রিক পারফরম্যান্স র্যাঙ্কিংয়ে বাংলার (West Bengal ) অবস্থান উদ্বেগজনকভাবে ১৩ নম্বরে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রেডিট রেটিং সংস্থা কেয়ারএজ (CareEdge Ratings) সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে অর্থনৈতিক, আর্থিক, পরিকাঠামো, সামাজিক, প্রশাসনিক, পরিবেশগত এবং আর্থিক উন্নয়নের ভিত্তিতে রাজ্যগুলোর মূল্যায়ন করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্র শীর্ষে থেকে তালিকার প্রথম স্থান অধিকার করেছে ৫৬.৫ স্কোর নিয়ে। এরপরেই গুজরাট (৫২.৪), কর্ণাটক (৫১.৯), তেলেঙ্গানা (৫১.৪) এবং তামিলনাড়ু (৫০.১) যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই পাঁচটি রাজ্য উন্নয়নের বিভিন্ন মাপকাঠিতে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ স্কোর করেছে, যা তাদের সার্বিক প্রশাসনিক দক্ষতা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার পরিচয় বহন করে।
বাংলার স্কোর ৩৮.৯, যা পশ্চিমবঙ্গকে তালিকার ১৩তম স্থানে ফেলেছে। এমনকি ওড়িশা (৪৪.৩), পাঞ্জাব (৪৩.৯) ও ছত্তিশগড় (৪০.৯) – যারা ঐতিহাসিকভাবে বাংলার তুলনায় পিছিয়ে ছিল বলে মনে করা হতো – তারাও এই র্যাঙ্কিংয়ে পশ্চিমবঙ্গকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
কেন পিছিয়ে বাংলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলার পিছিয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। রাজ্যে বকেয়া দেনার পরিমাণ বৃদ্ধি, রাজস্ব সংগ্রহে ধীরগতি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগের অভাব এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গতি কম থাকাও বাংলার র্যাঙ্কিং নিচে নামিয়ে দিয়েছে।
পরিবেশগত সূচকে বাংলা তুলনামূলকভাবে ভালো করলেও, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে রাজ্যর পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কিছু অগ্রগতি হলেও সামগ্রিকভাবে তা দেশের শীর্ষ রাজ্যগুলোর ধারে কাছে যেতে পারেনি।
অন্যান্য রাজ্যের সাফল্যের কারণ
তালিকার শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে পরিচিত। মুম্বইয়ের মতো বাণিজ্যিক শহরের উপস্থিতি, বহুজাতিক বিনিয়োগ, এবং পরিবহন ও শিল্প পরিকাঠামোর শক্ত ভিত্তি রাজ্যটিকে বারবার সেরা স্থানে নিয়ে এসেছে।
কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানা তথ্যপ্রযুক্তি ও স্টার্টআপ সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে। গুজরাট ও তামিলনাড়ু শিল্প ও উৎপাদন খাতে স্থায়ী বিনিয়োগ আকর্ষণে সফল হয়েছে।
পথ খোঁজার ডাক
এই র্যাঙ্কিং স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে, বাংলাকে আরও পরিকল্পিত ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিতে হবে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের জন্য। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে ভবিষ্যতে আরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে বাংলার জন্য একটি সুদূরপ্রসারী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা এখন সময়ের দাবি। রাজ্য সরকার যদি এই সতর্কবার্তা হিসাবে র্যাঙ্কিংকে গ্রহণ করে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তবে আগামী দিনে বাংলাও ফের শীর্ষ দশের তালিকায় ফিরতে পারে।