শতবর্ষ প্রাচীন এমপি হাউসকে নতুন রূপ দিলেন কঙ্গনা

বলিউড অভিনেত্রী ও মান্ডি থেকে সাংসদ কঙ্গনা রানাউত (Kangana Ranaut) সম্প্রতি তাঁর নতুন দিল্লির এমপি হাউসে গৃহপ্রবেশ করেছেন। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করে মান্ডি…

Kangana Ranaut Shares First Look of Her Delhi MP House

বলিউড অভিনেত্রী ও মান্ডি থেকে সাংসদ কঙ্গনা রানাউত (Kangana Ranaut) সম্প্রতি তাঁর নতুন দিল্লির এমপি হাউসে গৃহপ্রবেশ করেছেন। ২০২৪ সালে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করে মান্ডি লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর কঙ্গনা এই শতাব্দী প্রাচীন বাংলোয় স্থানান্তরিত হয়েছেন। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ মুহূর্তে তিনি গৃহপ্রবেশের পূজা সম্পন্ন করেন এবং ইনস্টাগ্রামে এর কিছু ঝলক শেয়ার করেছেন। এই ঘটনা তাঁর অনুরাগীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। নিউজ১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কঙ্গনা এই বাংলোর সংস্কারে অভ্যন্তরীণ ডিজাইনার দর্শিনীর প্রশংসা করেছেন।

গৃহপ্রবেশের শুভ মুহূর্ত

কঙ্গনা তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে গৃহপ্রবেশের পূজার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যার ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “অবশেষে দিল্লির এমপি হাউসে স্থানান্তরের সময় পেলাম।” এই শুভ দিনে তিনি একটি ক্রিম রঙের সিল্কের শাড়ি পরেছিলেন, যার পাড়ে ছিল লাল বর্ডার। এটির সঙ্গে তিনি হাই-নেক ব্লাউজ এবং ঐতিহ্যবাহী সোনার গহনা পরেন। তাঁর চুল বাঁধা ছিল খোঁপায়। পূজার সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর পুত্রবধূ রীতু রানাউত এবং ভাইপোরা। এই ভিডিওতে বাংলোর অভ্যন্তরের একটি ঝলক দেখা গেছে, যেখানে দেয়ালে শিল্পকর্ম এবং কঙ্গনার একটি বড় পোর্ট্রেট বাড়ির সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। তিনি ইনস্টাগ্রামে দর্শিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “একটি শতাব্দী প্রাচীন এমপি হাউস পুনরুদ্ধার করা সহজ ছিল না, প্রিয় @design_by_darshini, এই কাজের জন্য ধন্যবাদ।”

   

শতাব্দী প্রাচীন বাংলোর সংস্কার

দিল্লির এই এমপি হাউসটি একটি ঐতিহাসিক নির্মাণ, যা প্রায় এক শতাব্দী পুরনো। এটির সংস্কারে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশেল ঘটানো হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলোটিতে কাঠের আসবাব, প্রাচীন ঝাড়বাতি এবং ভারতীয় শিল্পকর্ম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। হলওয়েগুলোতে কঙ্গনার পোর্ট্রেটসহ বিভিন্ন ফ্রেম স্থাপন করা হয়েছে, যা বাড়ির বিলাসবহুল চরিত্রকে তুলে ধরে। পূজার জন্য নির্মিত মন্দির এলাকাটি ফুল দিয়ে সুন্দরভাবে সজ্জিত ছিল, যা কঙ্গনা তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন।

এক্স প্ল্যাটফর্মে ভক্তরা কঙ্গনার এই নতুন বাড়ির প্রশংসা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “কঙ্গনার দিল্লির এমপি হাউস ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার একটি অসাধারণ মিশ্রণ। অক্ষয় তৃতীয়ায় তাঁর গৃহপ্রবেশ অত্যন্ত শুভ।”

অক্ষয় তৃতীয়ার তাৎপর্য

অক্ষয় তৃতীয়া হিন্দু ও জৈন সম্প্রদায়ের জন্য একটি অত্যন্ত শুভ দিন। ‘অক্ষয়’ শব্দের অর্থ ‘চিরন্তন’ বা ‘যা কখনো ক্ষয় হয় না’। এই দিনে শুরু করা যেকোনো কাজ বা বিনিয়োগ সমৃদ্ধি এবং সৌভাগ্য নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। ব্যাঙ্কবাজারের তথ্য অনুযায়ী, এই দিনে সোনা কেনা, নতুন ব্যবসা শুরু করা বা গৃহপ্রবেশের মতো কাজ অত্যন্ত শুভ। কঙ্গনা এই শুভ মুহূর্তে তাঁর নতুন বাংলোয় গৃহপ্রবেশ করেছেন, যা তাঁর রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বিদ্যুৎ বিল বিতর্ক

কঙ্গনা সম্প্রতি হিমাচল প্রদেশ স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছিলেন যে তাঁর মানালির বাড়ির জন্য তাঁকে এক মাসের জন্য ১ লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠানো হয়েছে। তবে, বিদ্যুৎ বোর্ড জানিয়েছে, কঙ্গনা পূর্বের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং বিলটি দুই মাসের জন্য ছিল, যার পরিমাণ ৯০,৩৮৪ টাকা। বোর্ড আরও জানায়, কঙ্গনার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের লোড ৯৪.৮২ কিলোওয়াট, যা সাধারণ গৃহস্থালির তুলনায় ১৫০০ শতাংশ বেশি। এই বিতর্ক সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কঙ্গনার ক্যারিয়ার

কঙ্গনা তাঁর অভিনয় জীবনেও ব্যস্ত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘ইমার্জেন্সি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন, যেটি ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সময়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ছবিটি ২০২৫ সালে মুক্তি পেয়েছে, তবে এর বিতর্কিত বিষয়বস্তুর কারণে পাঞ্জাবে নিষিদ্ধ হয়েছে। সাংবাদিক কুমি কাপুর, যাঁর বই ‘দ্য ইমার্জেন্সি: আ পার্সোনাল হিস্ট্রি’ ছবিটির জন্য রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল, কঙ্গনা এবং নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক তথ্য বিকৃতির অভিযোগে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

কঙ্গনা এরই মধ্যে আর মাধবনের সঙ্গে পরবর্তী ছবির শুটিং শেষ করেছেন, যেটি পরিচালনা করেছেন এএল বিজয়। এই ছবিটি একটি মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলার, এবং এটি তাঁদের ‘তনু ওয়েডস মানু’ সিরিজের পর পুনর্মিলন। কঙ্গনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবির টিমের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “সুরেশ স্যারের সঙ্গে কাজ করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।” এছাড়া, তিনি ‘মণিকর্ণিকা: দ্য কুইন অফ ঝাঁসি’-র সিক্যুয়েল ‘দ্য লিজেন্ড অফ দিদ্দা’ নিয়েও কাজ করছেন।

রাজনৈতিক ভূমিকা

২০২৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী হিসেবে মান্ডি থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর কঙ্গনা রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য পরিচিত। তবে, তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য এবং পাঞ্জাবি শিল্পীদের সঙ্গে সংঘাত তাঁকে প্রায়ই খবরের শিরোনামে রাখে। সম্প্রতি তিনি দিলজিৎ দোসাঞ্জের পক্ষে কথা বলেছেন, যখন তাঁর কনসার্টে মদ বা মাদক সংক্রান্ত গানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।

কঙ্গনা রানাউতের দিল্লির এমপি হাউসে গৃহপ্রবেশ তাঁর জীবনের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনে এই ঘটনা তাঁর রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে সমৃদ্ধির প্রতীক। তাঁর বাংলোর ঐতিহ্যবাহী সজ্জা এবং শিল্পকর্ম তাঁর পরিশীলিত রুচির পরিচয় দেয়। একই সঙ্গে, তাঁর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার এবং রাজনৈতিক ভূমিকা তাঁকে ক্রমাগত আলোচনায় রাখছে। সমর্থকরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন, কঙ্গনা তাঁর নতুন বাড়ি থেকে কীভাবে তাঁর রাজনৈতিক এবং শৈল্পিক যাত্রা এগিয়ে নিয়ে যান।