আগামী জনগণনায় অন্তর্ভুক্ত জাতি গণনা

কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, আগামী জাতীয় জনগণনায় (caste census) জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা…

cast census from next census

কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি এবং রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, আগামী জাতীয় জনগণনায় (caste census) জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির (ক্যাবিনেট কমিটি অন পলিটিকাল অ্যাফেয়ার্স) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

মন্ত্রী বৈষ্ণব এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “রাজনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আগামী জনগণনা কার্যক্রমে জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।” এই সিদ্ধান্ত ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা সমাজের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের সঠিক তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

   

জাতি গণনার প্রেক্ষাপট (caste census)

ভারতে জাতি গণনা (caste census) দীর্ঘদিন ধরে একটি স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত বিষয়। ১৯৩১ সালের পর থেকে জাতীয় জনগণনায় জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যদিও সংরক্ষণ নীতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য জাতি-ভিত্তিক তথ্যের প্রয়োজনীয়তা বারবার উঠে এসেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সমাজের বিভিন্ন অংশ জাতি গণনার (caste census) পক্ষে এবং বিপক্ষে মত প্রকাশ করে আসছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি জাতি গণনাকে “অসমতা এবং বৈষম্যের সত্য উন্মোচনের” একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে, বিজেপি এই বিষয়ে কংগ্রেসের অবস্থানের সমালোচনা করে বলেছে, এটি রাজনৈতিক স্বার্থে করা হচ্ছে।

অশ্বিনী বৈষ্ণব তাঁর বক্তব্যে বলেন, “কংগ্রেস সরকার সবসময় জাতি গণনার (caste census) বিরোধিতা করে এসেছে। ২০১০ সালে প্রয়াত ড. মনমোহন সিং বলেছিলেন, জাতি গণনার বিষয়টি মন্ত্রিসভায় বিবেচনা করা উচিত। একটি মন্ত্রীদল গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।” তিনি দাবি করেন, বর্তমান বিজেপি সরকার এই বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

জাতি গণনা (caste census) জাতীয় জনগণনার অংশ হওয়ায় ভারতের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এই গণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য সরকারকে সংরক্ষণ নীতি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পে আরও নির্ভুলভাবে পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে। তবে, এটি বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যেসব সম্প্রদায় মনে করে তাদের জনসংখ্যা কম দেখানো হয়েছে।

কর্ণাটকের সাম্প্রতিক জাতি গণনা রিপোর্ট এই ধরনের বিতর্কের একটি উদাহরণ। লিঙ্গায়েত এবং ভোক্কালিগা সম্প্রদায়ের নেতারা দাবি করেছেন, তাদের জনসংখ্যা রিপোর্টে কম দেখানো হয়েছে। তারা যৌথভাবে এই গণনার বিরোধিতা করছে এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে লবিং, বিক্ষোভ এবং আইনি চ্যালেঞ্জের পরিকল্পনা করছে। কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমার বলেছেন, জাতি গণনা সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করার জন্য, কোনও সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করার জন্য নয়। তবে, বিজেপি এই রিপোর্টকে “অবৈজ্ঞানিক” বলে সমালোচনা করেছে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

জাতি গণনার (caste census) প্রক্রিয়া জটিল এবং ব্যয়বহুল। কর্ণাটকের জাতি গণনায় ১৩৫১টি জাতি গণনা করা হয়েছিল এবং ১.৩৫ কোটি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। জাতীয় স্তরে এই প্রক্রিয়া আরও বিশাল হবে। সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত গণনাকারীদের প্রয়োজন হবে। বিজেপি নেতা আর. অশোক কর্ণাটকের গণনার সমালোচনা করে বলেছেন, অনেক পরিবারের কাছে গণনাকারীরা পৌঁছায়নি, এবং সফটওয়্যার সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়নি।

এছাড়া, জাতি গণনা সামাজিক সমতা আনার পাশাপাশি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। বিজেপি অভিযোগ করেছে, কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার জাতি গণনা রিপোর্ট ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। জাতীয় স্তরে এই ধরনের বিতর্ক আরও তীব্র হতে পারে।

ভারত-পাক যুদ্ধ আবহে রাশিয়া সফর বাতিল মোদীর!

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

জাতি গণনার তথ্য সংরক্ষণ নীতি পুনর্গঠন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে সুযোগ বৃদ্ধি এবং সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। তবে, এই প্রক্রিয়া সফল করতে সরকারকে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্বেগ সমাধানের জন্য সংলাপ এবং সহযোগিতার প্রয়োজন হবে।

অশ্বিনী বৈষ্ণবের ঘোষণা জাতি গণনার পক্ষে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। তবে, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় সরকারকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। জাতি গণনার ফলাফল ভারতের সামাজিক কাঠামোর ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

জাতীয় জনগণনায় জাতি গণনা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ভারতের সামাজিক ন্যায়ের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সরকারকে সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির জন্য নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে। তবে, এই প্রক্রিয়ার সফলতা নির্ভর করবে সঠিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির উপর। এই ঘোষণা ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে, এবং এর ফলাফল দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।