বিপদের দিনে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক

একদিকে সীমান্ত উত্তেজনা, অন্যদিকে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি—দু’দিক থেকে চাপে রয়েছে পাকিস্তান (Pakistan economic crisis)। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। সংস্থাটি…

Pakistan economic crisis

একদিকে সীমান্ত উত্তেজনা, অন্যদিকে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি—দু’দিক থেকে চাপে রয়েছে পাকিস্তান (Pakistan economic crisis)। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। সংস্থাটি সম্প্রতি পাকিস্তানকে ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আর্থিক সহায়তা মূলত দেশটির স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ খাতে খরচ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ভারতের হুঁশিয়ারি

গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর বর্বর জঙ্গিহানায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা দেশ। প্রকাশ্যে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এই ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টেও উঠে এসেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয় মদত থাকার তথ্য। যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

   

ঘটনার পরই ভারত জানিয়ে দেয়, প্রয়োজনে কড়া প্রত্যাঘাত করা হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সেনাবাহিনী সীমান্তে কৌশলগত প্রস্তুতি শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের ওপর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপও বেড়েছে।

ধসে পড়ছে অর্থনীতি

এদিকে পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থাও দিন দিন সংকটজনক হয়ে উঠছে। দেশটির মুদ্রাস্ফীতি আকাশছোঁয়া, বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার প্রায় তলানিতে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও বিদেশি ঋণের বোঝায় জর্জরিত পাকিস্তান সরকারের পক্ষে দেশের অভ্যন্তরীণ খরচ সামাল দেওয়াও দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে। এমন অবস্থায় বিশ্ব ব্যাংকের এই আর্থিক সহায়তা ইসলামাবাদের জন্য আশার আলো।

বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই অনুদানের লক্ষ্য হল পাকিস্তানের স্বাস্থ্যখাত ও সমাজকল্যাণ ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল করা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। বিশেষত, শিশু ও নারীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাই হবে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

Advertisements

আন্তর্জাতিক সমীকরণে হিসাবি অবস্থান?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার আবহেও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এই পদক্ষেপ শুধুই মানবিক নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। বহুদিন ধরেই পাকিস্তানের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। আইএমএফ, এডিবি ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এই ধরনের পরিস্থিতিতে বারবার আর্থিক সহায়তা দিয়ে এসেছে।

তবে এই মুহূর্তে এমন আর্থিক সাহায্য পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ আন্তর্জাতিক মিত্র চীনের প্রভাবকেও তুলে ধরছে বলে অনেকে মনে করছেন। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) এবং অন্যান্য যৌথ প্রকল্পগুলিকে সামনে রেখে পশ্চিমা দুনিয়ার কিছু অংশ ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে চাইছে।

ভারতের নজরে

বিশ্লেষকদের মতে, ভারত খুব কাছ থেকে নজর রাখছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এই পদক্ষেপের ওপর। যদিও এই অনুদান সরাসরি সামরিক খাতে ব্যবহৃত হবে না, তবু পাকিস্তানের আর্থিক স্থিতি কিছুটা হলেও মজবুত হলে তার পরোক্ষ প্রভাব সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর পড়তে পারে।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে পাকিস্তান স্পষ্টতই চাপের মুখে। কিন্তু সেই সংকটে তাকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ১০৮ মিলিয়ন ডলারের অনুদান। তবে এই সহায়তা শুধু সাময়িক উপশম দেবে, না কি দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের পথে পাকিস্তানকে এগিয়ে দেবে, তা সময়ই বলবে।