জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও (pahalgam) তে ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার একদিন আগে, ২১ এপ্রিল, মহারাষ্ট্রের জালনা শহরের এক যুবক, আদর্শ রাউত, দাবি করেছেন যে তিনি বাইসরান উপত্যকায় একটি খাবারের স্টলে একজন সন্দেহভাজন হামলাকারীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
এই হামলা, যা দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার জনপ্রিয় পর্যটন স্থান পাহালগামের কাছে একটি তৃণভূমিতে সংঘটিত হয়েছিল, ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলাগুলির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
আদর্শ রাউতের অভিজ্ঞতা
আদর্শ রাউত, যিনি সম্প্রতি কাশ্মীর থেকে ফিরেছেন, মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে ২১ এপ্রিল তিনি পহেলগাঁও (pahalgam) তে ঘোড়ায় চড়তে গিয়েছিলেন এবং বাইসরান উপত্যকায় একটি “ম্যাগি স্টল” এ খাবারের জন্য থামেন। সেখানে একজন ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করেন, “হিন্দু হো ক্যা? তুমি কাশ্মীরের লোকের মতো দেখতে নও।”
রাউত এই কথোপকথনকে কিছুটা বিরক্তিকর মনে করলেও তখন এর গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। পরের দিন, ২২ এপ্রিল, যখন জঙ্গিরা একই এলাকায় ২৬ জন পর্যটককে নির্মমভাবে হত্যা করে, তখন তিনি ঘটনার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন।
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হামলার পর তিনজন সন্দেহভাজন হামলাকারীর স্কেচ প্রকাশ করে। রাউত দাবি করেছেন, এই স্কেচগুলির মধ্যে একটি তাঁর সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তির সঙ্গে মিলে যায়। তিনি বলেন, “এনআইএ-র প্রকাশিত স্কেচ দেখার পর আমি সবকিছু জুড়ে দিতে পেরেছি।” রাউত ইতিমধ্যে এনআইএ-কে একটি ইমেলের মাধ্যমে তাঁর অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ পাঠিয়েছেন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, “আমি যা যা মনে করতে পেরেছি, সব লিখে পাঠিয়েছি। আমি এও উল্লেখ করেছি যে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমি প্রথমে ম্যাগি স্টলের মালিককে টাকা দিতে পারিনি। আমি তার ফোন নম্বর নিয়েছিলাম এবং পাহাড় থেকে নেমে এসে তাকে পেমেন্ট করেছি।” রাউত জানিয়েছেন, এনআইএ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাননি। তবে তিনি বলেছেন, “যদি তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে, আমি সব রকমের সহযোগিতা করব।”
হামলার বিবরণ
২২ এপ্রিল, পাঁচ থেকে ছয়জন সশস্ত্র জঙ্গি বাইসরান (pahalgam) উপত্যকায়, যা ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, পর্যটকদের উপর গুলি চালায়। এই তৃণভূমি পহেলগাঁও (pahalgam) শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছানো যায়। হামলাকারীরা এম৪ কার্বাইন এবং একে-৪৭ রাইফেলে সজ্জিত ছিল এবং সামরিক পোশাক পরিহিত ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সন্ত্রাসীরা আশেপাশের পাইন বন থেকে বেরিয়ে এসে পিকনিক করা, ঘোড়ায় চড়া বা খাবারের স্টলে থাকা মানুষের উপর গুলি চালায়। হামলায় বেশিরভাগ শিকার হিন্দু পর্যটক ছিলেন, এবং সন্ত্রাসীরা তাদের নাম ও ধর্ম জিজ্ঞাসা করে লক্ষ্যবস্তু নির্বাচন করেছিল।
একজন মহিলা বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি জানিয়েছেন, একজন হামলাকারী তাঁর স্বামী মঞ্জুনাথ রাওকে হত্যা করার পর তাঁকে বলেছিল, “এটা মোদীকে গিয়ে বলো।” এই ঘটনা হামলার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৫-এ সোনা চাহিদা ১৫% কমল, বলছে WGC
তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা (pahalgam)
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হামলার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে এবং ঘটনাস্থলে তদন্ত জোরদার করেছে। তারা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য পরীক্ষা করছে এবং উপত্যকার প্রবেশ ও প্রস্থান পথগুলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় এনআইএ বাইসরান উপত্যকায় প্রমাণ সংগ্রহ করছে।
তদন্তে জানা গেছে, হামলায় চারজন জঙ্গি জড়িত ছিল—তিনজন পাকিস্তানি এবং একজন স্থানীয় জঙ্গি, আদিল থোকার। থোকার ২০১৮ সালে হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দিয়েছিলেন এবং পরে পাকিস্তানে লস্কর-ই-তৈয়বার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
হামলার জন্য দায় স্বীকার করেছিল দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যা লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করা হয়। তবে, চার দিন পর তারা তাদের দাবি প্রত্যাহার করে, যা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পাকিস্তানের ভয় এবং কূটনৈতিক চাপের ফল হিসেবে দেখছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। পাহালগামে অস্থায়ী লকডাউন জারি করা হয়েছে, এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনা হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে, যারা পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের উঁচু এলাকায় পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের ভূমিকা ও ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগের অভিযোগ তুলেছে, মুজাফফরাবাদ এবং করাচিতে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের ডিজিটাল প্রমাণ উল্লেখ করে। তদন্তে জানা গেছে, হামলার সঙ্গে জড়িত একজন পাকিস্তানি জঙ্গি, হাশিম মুসা, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ছিলেন এবং পরে লস্কর-ই-তৈয়বায় যোগ দেন।
হামলার পর ভারত কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করা, আটারি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট বন্ধ করা এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্প স্থগিত করা। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, গ্রেপ্তার বা নির্মূলের জন্য ৬০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
আদর্শ রাউতের অভিজ্ঞতা পহেলগাঁও (pahalgam) হামলার তদন্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে। তাঁর সাক্ষ্য এনআইএ-কে সন্ত্রাসীদের পরিচয় এবং তাদের পরিকল্পনা উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে। এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের কঠোর পদক্ষেপ এবং তদন্তের অগ্রগতি এই ঘটনার পরবর্তী দিক নির্ধারণ করবে।