ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) সাংসদ তেজস্বী (tejashwi) সূর্য বুধবার কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন যে কংগ্রেস “পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় পিআর” হিসেবে কাজ করছে এবং “দায়িত্বশীল বিরোধী দলের আচরণ” সম্পূর্ণ ভুলে গেছে।
এই আক্রমণের পেছনে রয়েছে কংগ্রেসের একটি সম্প্রতি মুছে ফেলা এক্স পোস্ট। পোস্টে তারা প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব গ্রহণের সময় “গায়েব” বলে উল্লেখ করে একটি কুর্তা-পায়জামা ও কালো স্যান্ডেলের ছবি শেয়ার করেছিল।
বাসবন্না জয়ন্তীতে সূর্যের বক্তব্য (tejashwi)
১২শ শতাব্দীর সমাজ সংস্কারক বাসবন্নার জয়ন্তীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তেজস্বী সূর্য (tejashwi) এএনআই-কে বলেন, “আজ ভারতে কংগ্রেস পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় পিআর হিসেবে কাজ করছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কংগ্রেস সম্ভবত ভুলে গেছে যে একটি দায়িত্বশীল বিরোধী দলের আচরণ কেমন হওয়া উচিত।”
তিনি বিশেষভাবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রয়োজন নেই বলে দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “কর্ণাটকের কিছু মন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে পাকিস্তানের এজেন্টের মতো বক্তব্য দিচ্ছেন, তা দেশের দেশপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত দুঃখজনক। কংগ্রেস দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দায়িত্বহীন বিরোধী দলের মতো আচরণ করছে।”
সিদ্দারামাইয়ার স্পষ্টীকরণ
রবিবার সিদ্দারামাইয়া তার অবস্থান স্পষ্ট করে এক্স-এ লেখেন, “যুদ্ধ নিয়ে আমার বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন আলোচনা আমি লক্ষ করেছি। যুদ্ধ সবসময় একটি দেশের শেষ অবলম্বন হওয়া উচিত—কখনই প্রথম বা একমাত্র বিকল্প নয়। শত্রুকে পরাজিত করার অন্য সব উপায় ব্যর্থ হলে তবেই যুদ্ধে যাওয়া উচিত।”
তিনি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দ্বারা পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “এই হামলা আমাদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটিগুলি স্পষ্ট করেছে। এখন সরকারের দায়িত্ব এই ত্রুটিগুলি সংশোধন করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ট্র্যাজেডি এড়ানো।”
তিনি পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যেমন ইন্দাস জল চুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রতি সমর্থন জানান। তিনি আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, সব পদক্ষেপ প্রকাশ্যে ঘোষণা করার প্রয়োজন নেই।
পহেলগাঁও হামলা ও ভারতের পদক্ষেপ
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। এই হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। হামলার পর ভারত সীমান্ত-সংলগ্ন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এই ঘটনা ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিতর্ক
তেজস্বী সূর্যের (tejashwi) আক্রমণ কংগ্রেসের পাকিস্তান-বিরোধী অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের মুছে ফেলা পোস্ট এবং সিদ্দারামাইয়ার যুদ্ধ-বিরোধী বক্তব্য বিজেপির সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে। বিজেপি দাবি করছে, কংগ্রেসের এই আচরণ জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি তাদের দায়িত্বহীন মনোভাব প্রকাশ করে। অন্যদিকে, কংগ্রেস যুদ্ধের পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধান এবং গোয়েন্দা ব্যর্থতা সংশোধনের উপর জোর দিচ্ছে।
দিল্লির ম্যাচে রাহানের হাতে সেলাই, পরের ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা কতটা?
পাকিস্তানের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের প্রসঙ্গ
এই বিতর্কের মধ্যেই পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ রেখা (LOC) জুড়ে গভীর সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের খবর সামনে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সুড়ঙ্গগুলির মাধ্যমে সন্ত্রাসীরা ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে এবং সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘর্ষে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যবহার করতে পারে।
এই সুড়ঙ্গগুলির মধ্যে কিছু ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং অক্সিজেন পাইপ দিয়ে সজ্জিত। ২০০১ সাল থেকে ভারত ২২টি সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করলেও আরও অনেক থাকতে পারে বলে নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মনে করছেন। পাহালগাম হামলার পর সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (BSF) এবং সেনাবাহিনীকে এই সুড়ঙ্গগুলির তদন্তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ
পহেলগাঁও হামলা ভারতের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। সিদ্দারামাইয়া এই ত্রুটিগুলি সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিএসএফ এই বছরের শুরুতে সীমান্তে অ্যান্টি-টানেলিং খাত খনন করেছে, তবে সুড়ঙ্গ সনাক্তকরণ এখনও একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ১২০-১৬৭ জন সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল।
পহেলগাঁও হামলা এবং পাকিস্তানের সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তেজস্বী সূর্য ও কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করেছে।
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে সুড়ঙ্গ হুমকি মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করতে হবে। একই সঙ্গে, কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখা জরুরি।