পাকিস্তান (pakistan), নিয়ন্ত্রণ রেখা (LOC) জুড়ে গভীর সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যার উদ্দেশ্য ভারতীয় ভূখণ্ডে সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ সহজতর করা এবং সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় সৈন্য পাঠানো, এমনটাই জানা গেছে একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে। এই তথ্য সামনে এসেছে সংবাদ মাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে, যেখানে নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
সুড়ঙ্গের উদ্দেশ্য ও গঠন (pakistan)
প্রতিবেদন অনুসারে, এই সুড়ঙ্গগুলি (pakistan) এতটাই গভীর এবং অত্যাধুনিক যে এগুলি কেবল সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশের জন্য নয়, বরং যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সৈন্যদের ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সুড়ঙ্গগুলির মধ্যে কিছু প্রায় ২০০ মিটার দীর্ঘ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সুবিধার জন্য অক্সিজেন পাইপ দিয়ে সজ্জিত।
উদাহরণস্বরূপ, জৈশ-ই-মোহাম্মদ (জেএম) প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারের ভাইপো উমর ফারুক ২০১৮ সালের এপ্রিলে সাম্বা সেক্টরে একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, যিনি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এছাড়াও, ২০১৬ সালের নাগরোটা ক্যাম্প হামলার চারজন আক্রমণকারীও একটি সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে সীমান্ত অতিক্রম করেছিল।
নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিক্রিয়া
এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের বিষয়ে সতর্ক হয়ে ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী তদন্ত শুরু করেছে। পাহালগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর, যেখানে ২৬ জন নিহত হয়েছেন, বিএসএফ এবং সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গভীর ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে।
একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “পাকিস্তান (pakistan) গভীর সুড়ঙ্গ খনন করেছে কিনা, যার মুখ ভারতীয় ভূখণ্ডে অজান্তে থেকে গেছে, তা খুঁজে বের করা আমাদের লক্ষ্য।” ২০০১ সাল থেকে ভারত প্রায় ২২টি সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেছে, তবে কর্মকর্তারা মনে করছেন আরও অনেক সুড়ঙ্গ থাকতে পারে।
মন্দির ধ্বসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকজ্ঞাপন রাষ্ট্রপতির
পাকিস্তানের কৌশল
নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান (pakistan) সীমান্তের কাছে প্রাক্তন সেনা সদস্যদের মোতায়েন করেছে, যারা প্রথম প্রতিক্রিয়াকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সুড়ঙ্গ খননের কাজে সহায়তা করছে। এছাড়াও, পাকিস্তান সীমান্তের কিছু এলাকায় লম্বা এলিফ্যান্ট ঘাসের আড়ালে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি লুকিয়ে রাখছে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১২০-১৬৭ জন সন্ত্রাসী সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল। এদের মধ্যে ৮০% লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং বাকিরা জৈশ-ই-মোহাম্মদ ও আল-বদরের সঙ্গে যুক্ত।
বিএসএফের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা
এই বছরের জানুয়ারিতে, বিএসএফ একটি বড় মাপের অভিযান শুরু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের সুড়ঙ্গের মাধ্যমে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা। ৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২৫ কিলোমিটার জুড়ে অ্যান্টি-টানেলিং খাত খনন করা হয়েছিল। এই পদক্ষেপ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছিল, যা ২০২৫ সালে অনুপ্রবেশের উচ্চ ঝুঁকির কথা জানিয়েছিল।
ইতিহাস ও পূর্বের ঘটনা
পাকিস্তান (pakistan) দীর্ঘদিন ধরে সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের ভারতে অনুপ্রবেশ করাচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে জম্মু সীমান্তে বিএসএফ মোট ১২টি সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করেছে। ২০১২ সালে, ৫৪০ মিটার দীর্ঘ একটি সুড়ঙ্গ ভারতীয় ভূখণ্ডে পাওয়া গিয়েছিল, যা পাকিস্তান থেকে শুরু হয়েছিল। গোয়েন্দা সংস্থার মতে, পাকিস্তানের এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে চীন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা থাকতে পারে।
ভারতের চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
সুড়ঙ্গ সনাক্তকরণ একটি জটিল কাজ, কারণ এগুলি প্রায়শই গভীর ভূগর্ভে এবং সীমান্তের ভারতীয় দিকে ৭০-৮০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। বিএসএফ ড্রোন-মাউন্টেড গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তবে সম্পূর্ণ সীমান্ত জুড়ে শারীরিক পরিদর্শন এখনও চ্যালেঞ্জিং। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে এই হুমকি মোকাবিলায় আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করতে হবে।
পাকিস্তানের (pakistan) এই সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনাগুলি এই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সম্ভাবনাকে আরও স্পষ্ট করেছে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এই হুমকি মোকাবিলায় সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে এই বিষয়ে সহযোগিতা বাড়িয়ে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।