ভারতের শীর্ষস্থানীয় দুগ্ধজাত পণ্য সংস্থা মাদার ডেয়ারি (Mother Dairy) দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে দুধের দাম লিটারে ২ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর (Hikes Milk Prices) ঘোষণা করেছে। এই মূল্যবৃদ্ধি ৩০ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। সংস্থার একজন কর্মকর্তার মতে, গ্রীষ্মের প্রকোপ এবং তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে কাঁচামালের সংগ্রহ খরচ গত কয়েক মাসে লিটারে ৪-৫ টাকা বেড়েছে, যা এই দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ। মাদার ডেয়ারি দিল্লি-এনসিআরে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ লক্ষ লিটার দুধ নিজস্ব আউটলেট, সাধারণ বাণিজ্য এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি করে।
মূল্যবৃদ্ধির কারণ ও প্রভাব
মাদার ডেয়ারির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা গ্রাহকদের জন্য উচ্চমানের দুধের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, পাশাপাশি আমাদের কৃষকদের জীবিকা সুরক্ষিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, এই মূল্য সংশোধন কেবলমাত্র বর্ধিত খরচের একটি আংশিক প্রতিফলন। এটি কৃষক এবং গ্রাহক উভয়ের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে করা হয়েছে। গ্রীষ্মের তীব্রতা এবং তাপপ্রবাহের কারণে গবাদি পশুর দুধ উৎপাদন কমে গেছে, যা সংগ্রহ খরচ বাড়িয়েছে। এছাড়া, পশুখাদ্য এবং পরিবহনের খরচ বৃদ্ধিও এই মূল্যবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, দিল্লি-এনসিআরে টোন্ড দুধ (বাল্ক ভেন্ডেড) এখন প্রতি লিটারে ৫৪ টাকার পরিবর্তে ৫৬ টাকায় বিক্রি হবে। ফুল ক্রিম দুধ (পাউচড) এর দাম ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৬৯ টাকা প্রতি লিটার হয়েছে। টোন্ড দুধ (পাউচড) এর দাম ৫৬ টাকা থেকে বেড়ে ৫৭ টাকা এবং ডাবল টোন্ড দুধের দাম ৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ৫১ টাকা হয়েছে। গো-দুধের দাম প্রতি লিটারে ৫৭ টাকা থেকে বেড়ে ৫৯ টাকা হয়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধি গ্রাহকদের দৈনন্দিন বাজেটের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য, যারা দুধকে তাদের খাদ্যের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
গ্রাহক ও কৃষকদের প্রতি প্রতিশ্রুতি
মাদার ডেয়ারি জানিয়েছে, তারা গ্রাহকদের জন্য উচ্চমানের দুধের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে এবং কৃষকদের ন্যায্য মূল্য প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংস্থাটি প্রতি বছর লক্ষাধিক কৃষকের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে, যা নেপাল, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের মতো রাজ্যগুলোর গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমর্থন করে। তবে, গ্রীষ্মের তীব্র তাপপ্রবাহ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকদের খরচ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি কৃষকদের জন্য একটি স্বস্তি হিসেবে কাজ করবে, যদিও এটি গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বাজারে প্রতিযোগিতা ও প্রভাব
মাদার ডেয়ারি দিল্লি-এনসিআরের দুগ্ধ বাজারে একটি শীর্ষস্থানীয় নাম। এই অঞ্চলে সংস্থাটি প্রতিদিন ৩৫ লক্ষ লিটার দুধ সরবরাহ করে, যা মোট বাজারের একটি বড় অংশ দখল করে। তবে, আমুল, পারাগ এবং স্থানীয় দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলোও এই বাজারে প্রতিযোগিতা করে। আমুল ইতিমধ্যে গত মাসে দুধের দাম বাড়িয়েছে, এবং মাদার ডেয়ারির এই পদক্ষেপ বাজারে দামের একটি সাধারণ ঊর্ধ্বগতির ইঙ্গিত দেয়। গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষের আশঙ্কা থাকলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুধের চাহিদা অপরিবর্তনীয় থাকবে কারণ এটি ভারতীয় পরিবারগুলোর খাদ্যের একটি অপরিহার্য উপাদান।
এক্স প্ল্যাটফর্মে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়, “মাদার ডেয়ারি দুধের দাম বাড়িয়েছে, কিন্তু কৃষকদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। গ্রাহকদের জন্য এটি আরেকটি আর্থিক চাপ।” আরেকটি পোস্টে বলা হয়, “তাপপ্রবাহের কারণে দুধ উৎপাদন কমে গেছে, তাই দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।” এই প্রতিক্রিয়াগুলো দুধের দাম বৃদ্ধির পেছনে জটিল কারণগুলো তুলে ধরে।
গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ
মূল্যবৃদ্ধির ফলে গ্রাহকদের বাজেটে চাপ পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, গ্রাহকরা দুধের ব্যবহার পরিকল্পনা করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রয় করুন। এছাড়া, ডাবল টোন্ড দুধের মতো তুলনামূলকভাবে সস্তা বিকল্পগুলো বেছে নেওয়া যেতে পারে, যা পুষ্টির দিক থেকে উপকারী এবং দামে কম। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে মাঝে মাঝে ছাড় দেওয়া হয়, যা গ্রাহকরা কাজে লাগাতে পারেন।
মাদার ডেয়ারির ভূমিকা
মাদার ডেয়ারি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভারতের দুগ্ধ শিল্পে একটি নেতৃস্থানীয় নাম। সংস্থাটি দুধ ছাড়াও দই, পনির, বাটার এবং আইসক্রিমের মতো পণ্য সরবরাহ করে। দিল্লি-এনসিআর ছাড়াও, মাদার ডেয়ারি মুম্বাই, হায়দরাবাদ এবং অন্যান্য শহরে তাদের পণ্য বিক্রি করে। সংস্থাটি কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে এবং তাদের জন্য প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও, মাদার ডেয়ারি গুণমান এবং নির্ভরযোগ্যতার প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপপ্রবাহের কারণে দুধ উৎপাদনের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুগ্ধ শিল্পে টেকসই পদ্ধতি এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার খরচ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। মাদার ডেয়ারি ইতিমধ্যে সৌরশক্তি এবং জল সংরক্ষণের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা ভবিষ্যতে খরচ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে, স্বল্পমেয়াদে গ্রাহকদের এই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
মাদার ডেয়ারির দুধের দাম বৃদ্ধি দিল্লি-এনসিআরের গ্রাহকদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যদিও এটি গ্রাহকদের বাজেটে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, কৃষকদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। মাদার ডেয়ারি গুণমান এবং সরবরাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং গ্রাহকদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। দুগ্ধ শিল্পে টেকসই সমাধান এবং সরকারি সহায়তা ভবিষ্যতে দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। গ্রাহকদের জন্য, সঠিক পরিকল্পনা এবং বিকল্প বেছে নেওয়া এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।