পহেলগাঁওয়ে জবাব দিতে সেনাকে ‘পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ প্রধানমন্ত্রীর

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra ModiNarendra Modi) ভারতীয় সেনাবাহিনীকে হামলার জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে হামলার…

India Pakistan tensions: PM Narendra Modi Grants Armed Forces Full Freedom to Respond

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra ModiNarendra Modi) ভারতীয় সেনাবাহিনীকে হামলার জবাব দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে হামলার পদ্ধতি, লক্ষ্য এবং সময় নির্ধারণে ‘পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তা তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে জানিয়েছেন।

সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর আঘাত হানা আমাদের জাতীয় সংকল্প’ এবং তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর ‘পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রাখেন। বৈঠকের পরপরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পৌঁছান। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা।

   

জঙ্গি হামলা এবং পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা

২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে জৈশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি ক্যাম্পে নির্ভুল বিমান হামলা চালিয়েছিল, যা পাকিস্তান সেনার সমর্থনে পরিচালিত হতো। ছয় বছর পর এবার আরেকটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-এর সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার সংযোগ পাওয়া গেছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্করের প্রক্সি গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, উপলব্ধ প্রমাণ আবারও পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করছে। এই তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, জাপান এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।

ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ

হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। প্রথম ধাপে, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তবে পাক হিন্দু এবং দীর্ঘমেয়াদী থাকার অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এর বাইরে রয়েছেন। চিকিৎসার জন্য দেওয়া ভিসাগুলোও বাতিল করা হয়েছে। গত রবিবার, ২৭ এপ্রিল, সব প্রকাশিত ভিসার মেয়াদ শেষ হয়, ফলে অটারি-ওয়াঘা চেকপয়েন্টসহ সীমান্তে পাকিস্তানি নাগরিকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ১,০০০ পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ছেড়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীদের এই নির্দেশ কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া, ভারত ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দাস ওয়াটার্স ট্রিটি (IWT) স্থগিত করেছে, যা পাকিস্তানের প্রায় ৮৫% জল সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এই স্থগিতাদেশ পাকিস্তানের তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, তারা এটিকে ‘যুদ্ধের কাজ’ বলে অভিহিত করেছে। জবাবে পাকিস্তান ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা বাতিল করেছে এবং শত শত ভারতীয়কে বহিষ্কার করেছে। পাকিস্তান সিমলা চুক্তিসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও স্থগিত রেখেছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দেওয়া মন্তব্যে আগামী কয়েকটি দিনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের সামরিক হামলা আসন্ন। ভারতে এই সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা

পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী তার প্রথম জনসাধারণের মন্তব্যে প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তার সরকার সন্ত্রাসবাদের ‘দুষ্ট এজেন্ডা’ সফল হতে দেবে না। “এখন সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থলকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের ইচ্ছাশক্তি সন্ত্রাসের মূল হোতাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে,” বলে তিনি পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেছেন, ভারত সন্ত্রাসের ভয়ে ভীত নয় এবং এই জঘন্য হামলার পরিকল্পনাকারীসহ প্রত্যেক দায়ী ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেবে। তার ‘মন কি বাত’ সম্প্রচারে তিনি বলেন, “পহেলগাঁও হামলা সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকদের হতাশা এবং কাপুরুষতা প্রকাশ করে। যারা এই হামলার পিছনে রয়েছে, তারা কঠোরতম জবাব পাবে।”

ভারতের কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন

হামলার পর ভারত দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। জি২০ দেশগুলির রাষ্ট্রদূতদের হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছে এবং ভারতের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। তবে, চীন পাকিস্তানের পক্ষে ‘নিরপেক্ষ তদন্তের’ আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরে, নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গিদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে, স্থানীয় নেতারা সতর্কতার সঙ্গে এই অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি না তৈরি হয়।

পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান হামলায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ দাবি করেছেন, লস্কর-ই-তৈবা ‘আর অস্তিত্বে নেই’। তবে, ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর দাবি, TRF হলো লস্করের একটি প্রক্সি, এবং হামলার পিছনে পাকিস্তান সেনা ও আইএসআই-এর ভূমিকা স্পষ্ট।
পাকিস্তান ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে এবং সব বাণিজ্য স্থগিত করেছে। তারা ইন্দাস ওয়াটার্স ট্রিটির স্থগিতাদেশকে ‘যুদ্ধের কাজ’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন মন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিফ ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়েছে।

পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের কঠোর কূটনৈতিক এবং সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সেনাবাহিনীকে দেওয়া ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ এবং ইন্দাস ওয়াটার্স ট্রিটির স্থগিতাদেশ ভারতের শূন্য সহনশীলতার নীতিকে তুলে ধরে। সামনের দিনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে, কারণ ভারত জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে, এবং এই উত্তেজনা কীভাবে সমাধান হয়, তা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

দ্রষ্টব্য: পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। সর্বশেষ তথ্যের জন্য নির্ভরযোগ্য সূত্র যাচাই করুন।