পহেলগাঁও আবহে পাক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব, দুর্ভিক্ষের সম্ভবনা

পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনীতি ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধারের পথে ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) একাধিক ঋণ এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষণ এই…

pakistan economy down

পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনীতি ২০২২ সালে দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে কিছুটা পুনরুদ্ধারের পথে ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) একাধিক ঋণ এবং সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষণ এই আশা জাগিয়েছিল। তবে, কাশ্মীরের পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকারের কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ পাকিস্তানের অর্থনীতির জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে।

ভারতের পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বন্ধ, পাকিস্তানি কূটনীতিকদের বহিষ্কার, সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্প বাতিল এবং ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি স্থগিত। এই পদক্ষেপগুলি পাকিস্তানের ইতিমধ্যেই দুর্বল অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

   

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ধাক্কা (pakistan)

২০২৩ সালের মে মাসে ৩৮% এ পৌঁছানো মুদ্রাস্ফীতি ২০২৫ সালের মার্চে ০.৭%-এ নেমে এসেছিল, যা তিন দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পাকিস্তান (pakistan) ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিক্স (PBS) এই তথ্য প্রকাশ করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়। IMF-এর ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং ৩৭ মাসের এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (EFF) এই পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

তবে, ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এই অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি ৫.৫% থেকে ৭.৫%-এর মধ্যে থাকতে পারে। ইতিমধ্যেই চাল, আটা, শাকসবজি, ফলমূল এবং মুরগির দাম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, চালের দাম কেজি প্রতি ৩৪০ টাকা এবং মুরগির দাম ৮০০ টাকায় পৌঁছেছে।

বাণিজ্য বন্ধের প্রভাব

ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় পাকিস্তানে (pakistan) অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ২০২৪ সালে পাকিস্তান ভারত থেকে প্রায় ৩০৪.৯৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল, যার মধ্যে ১৬৪.১৯ মিলিয়ন ডলারের জৈব রাসায়নিক এবং ১২০.৮৬ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ ছিল। এই আমদানি বন্ধ হলে ওষুধ, রাসায়নিক, ফলমূল, শাকসবজি এবং পোলট্রি ফিডের ঘাটতি তৈরি হবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলবে।

ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি স্থগিত: কৃষির উপর প্রভাব

ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের কৃষি খাতের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনীতির ২৪% এবং কর্মসংস্থানের ৩৭.৪% কৃষির উপর নির্ভরশীল। ইন্ডাস, ঝেলাম এবং চেনাব নদী থেকে পানির প্রবাহ বন্ধ হলে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণ হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানে ১ কোটির বেশি মানুষ চরম দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে।

পনিরের গুনগত মান নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ, রিপোর্ট চাইল খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা

বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা: আর্থিক ক্ষতি

পাকিস্তানের (pakistan) ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলির জন্য আকাশপথ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর একই ধরনের পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তান প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। ওভারফ্লাইট ফি, ল্যান্ডিং এবং পার্কিং ফি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০,০০০ ডলার এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (PIA) প্রতিদিন ৪৬০,০০০ ডলারের ক্ষতি বহন করেছিল। বর্তমান নিষেধাজ্ঞার ফলে অনুরূপ আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ও চ্যালেঞ্জ

IMF এবং বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানের (pakistan) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে। IMF-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ২০২৫ সালের জন্য প্রবৃদ্ধির হার ২.৬% এবং বিশ্বব্যাংক ২.৭% পূর্বাভাস দিয়েছে। দেশটির বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৭.৪%, যা আঞ্চলিক গড়ের প্রায় দ্বিগুণ। পাকিস্তানি মুদ্রার মান কমে ১ ডলারের বিপরীতে ২৮০.৯৫ রুপিতে পৌঁছেছে, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র ১৬.০৪ বিলিয়ন ডলার, যা ভারতের ৬৮৬.২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় নগণ্য।

সন্ত্রাসের মূল্য

ইনফোমেরিক্স ভ্যালুয়েশন অ্যান্ড রেটিংস লিমিটেডের ড. মনোরঞ্জন শর্মা জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের কঠোর পদক্ষেপগুলি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। ২০১৮ সালে ৩ বিলিয়ন ডলারের ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য ২০২৪ সালে ১.২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হলে পাকিস্তানের আমদানি ব্যয় বাড়বে এবং রপ্তানির সুযোগ সীমিত হবে।

পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। ভারতের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পদক্ষেপ, জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে, পাকিস্তানের কৃষি, বাণিজ্য এবং বিমান চলাচল খাতের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে পাকিস্তানের পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা কঠিন হবে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে, যদি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা না কমে।