পশ্চিমবঙ্গের দিঘায় সদ্য নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যেখানে এই মন্দিরকে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পর্যটন উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে, সেখানে বিজেপি একে সরকার কর্তৃক ধর্মীয় প্রচার বলেই দেখাতে চাইছে।
বিজেপি (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) নেতাদের দাবি, সরকারি অর্থে মন্দির নির্মাণ সংবিধান-বিরোধী। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) সোজাসাপটা অভিযোগ, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো হিন্দু। সরকার মন্দির বানাতে পারে না। হিন্দুরা নিজেরা মন্দির গড়ে তোলে, সরকারের অর্থে নয়। রাম মন্দির তৈরি হয়েছে হিন্দুদের অনুদানে, সরকার এক টাকাও দেয়নি।”
শুধু তাই নয়, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) ‘অ্যান্টি-হিন্দু’ বলেও আক্রমণ করেন। মুর্শিদাবাদে হিন্দুদের “মাইগ্রেশন” এবং ধর্মীয় অশান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, “একদিকে হিন্দুদের উপরে আক্রমণ, আরেকদিকে মন্দির নির্মাণ — এই দ্বিচারিতা চলবে না।”
এই বক্তব্যকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুখান্ত মজুমদার বলেন, “সরকারের কাজ মন্দির বা মসজিদ বানানো নয়। দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের জন্য জনগণ অনুদান দিলে ভালো হতো। মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথের কাঁধে ভর করে ভোট জিততে চাইছেন।”
এই তীব্র আক্রমণের পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। দলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিজেপির মতে হিন্দু মানে শুধু ‘জয় শ্রী রাম’ বলা লোকজন। যারা নিরামিষ খায়, গুজরাট বা উত্তরপ্রদেশের ধাঁচে ধর্ম পালন করে — তাদেরই ‘সত্যিকারের হিন্দু’ বলে মানে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের ওরা ছোট করছে।”
তৃণমূলের (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ হিন্দু পরিবার থেকে এসেছেন। তিনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ নেতা, সব ধর্মকে সম্মান করেন। শুভেন্দু অধিকারী, তার বাবা ও ভাই — সবাই তো এক সময় তৃণমূলেই ছিলেন। তখন তো তাদের একবারও মনে হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো হিন্দু!”
দিঘার এই জগন্নাথ মন্দিরটি ওড়িশার (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) ঐতিহাসিক পুরী ধামের আদলে নির্মিত। প্রায় ২৫০ কোটি টাকায় তৈরি এই মন্দির তৈরি করেছে রাজ্য সরকারের হাউসিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (HIDCO)। এটি ২০ একর জমির উপর স্থাপিত এবং রাজ্যের অন্যতম বড় ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
মন্দির (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) উদ্বোধনের আগে কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি হয়েছে দিঘায়। পুলিশ ও সিভিল ড্রেস অফিসারদের পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমে চলছে নজরদারি। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে মহাযজ্ঞ, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকবেন।
দিঘা, যেটি পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রতট পর্যটন কেন্দ্র, সেটিকে আন্তর্জাতিক পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তর করার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, “এই মন্দির পশ্চিমবঙ্গের মুকুটে নতুন পালক যোগ করবে। দিঘা এখন শুধুই সমুদ্র নয়, তা হয়ে উঠবে ধর্মীয় পর্যটনের এক নতুন কেন্দ্র।”
দিঘার জগন্নাথ মন্দির (BJP vs Trinamool In Bengal Temple) আজ শুধুই একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং রাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন একটি বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম, রাজনীতি এবং নির্বাচন — এই তিনের জটিল সমীকরণেই আজ ‘ভুয়ো হিন্দু’ বিতর্কের জন্ম। এখন দেখার বিষয়, এই ধর্মীয় আবেগ রাজনীতির কোন দিকে মোড় নেয় পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন রাজনৈতিক সমীকরণে।