বাংলার সৌজন্যে বিশ্ব বাজারে চিনকে টক্কর দিচ্ছে ভারত

বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদক দেশ (Global Rice Production) হিসেবে এতদিন একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল চিন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ভারত খুব দ্রুত সেই ব্যবধান মুছে…

bengal rice production

বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদক দেশ (Global Rice Production) হিসেবে এতদিন একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছিল চিন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ভারত খুব দ্রুত সেই ব্যবধান মুছে ফেলছে। দুই দেশের মধ্যে এখন কার্যত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে চাল উৎপাদনে। ২০১৫ সালে যেখানে চিন উৎপাদন করেছিল ১৪৮.৫০ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল, সেখানে ভারতের উৎপাদন ছিল ১০৪.৪১ মিলিয়ন মেট্রিক টন। তবে ২০২৪ সালে এসে দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান প্রায় নেই বললেই চলে — চিনের উৎপাদন ১৪৫.২৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং ভারতের উৎপাদন ১৪৫.০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন (সূত্র: USDA, ফিনান্সিয়াল টাইমস)।

বিশ্ব চাল বাজারে ভারতের এই বিপুল উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ। দেশের সর্বোচ্চ চাল উৎপাদনকারী রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ প্রতি বছর প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করে। রাজ্যের গরম, আর্দ্র গ্রীষ্ম এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরের বর্ষাকাল ধান চাষের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। অমন, বোরো ও আউশ — এই তিন ধরনের ধানের চাষের জন্য পশ্চিমবঙ্গ বিখ্যাত।

   

ভারত বর্তমানে বিশ্বের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ২৭% যোগান দেয়। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবও চাল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ৩৬% আসে এই তিন রাজ্য থেকে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একাই অবদান রাখছে ১৩.৬২%, উত্তরপ্রদেশ ১২.৮১% এবং পাঞ্জাব ৯.৯৬%।

চাল একটি খরিফ শস্য। এটি সাধারণত বর্ষাকালে চাষ করা হয় এবং সফল চাষের জন্য বার্ষিক ১০০ সেমি-র বেশি বৃষ্টিপাত, উচ্চ আর্দ্রতা ও ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। পশ্চিমবঙ্গে উত্তরের পাহাড়ি অংশ ছাড়া প্রায় সর্বত্র ধান চাষ হয়। বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান জেলার অবদান সর্বাধিক। জেলার বিস্তীর্ণ কৃষিভূমি এবং উন্নত সেচব্যবস্থা ধান চাষের জন্য একে আরও উপযোগী করেছে।

পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের ঐতিহ্যগত অভিজ্ঞতা, উন্নত বীজ প্রযুক্তি এবং কৃষি নীতির উন্নতির ফলে রাজ্যের চাল উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। বর্তমানে জৈব কৃষির দিকে আগ্রহ এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে উৎপাদন আরও গতি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ভারতের এই প্রবৃদ্ধি বজায় থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ভারত বিশ্বে চাল উৎপাদনে চিনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, ভারত চাল রপ্তানিতেও নিজেদের আধিপত্য আরও সুসংহত করছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভারতীয় চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

সব মিলিয়ে, বাংলার কৃষি শক্তি ও ভারতীয় কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আজ ভারত বিশ্বের চাল বাজারে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছে। এই অগ্রগতির জন্য পশ্চিমবঙ্গের অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য।