বাগান ক্লাবে নাটকীয় মোড়! সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা স্বপন সাধন বসুর

ময়দানের পরিচিত মুখ, দীর্ঘদিন ধরে মোহনবাগান (Mohun Bagan) ক্লাবের অন্যতম স্তম্ভ স্বপনসাধন বসু। যাঁকে সবাই ভালোবেসে ‘টুটু বসু’ (Tutu Bose) নামে চেনেন, অবশেষে সভাপতির (Prsident)…

Mohun Bagan Tutu Bose Resign

ময়দানের পরিচিত মুখ, দীর্ঘদিন ধরে মোহনবাগান (Mohun Bagan) ক্লাবের অন্যতম স্তম্ভ স্বপনসাধন বসু। যাঁকে সবাই ভালোবেসে ‘টুটু বসু’ (Tutu Bose) নামে চেনেন, অবশেষে সভাপতির (Prsident) পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। তাঁর এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সবুজ-মেরুন সমর্থক ও ক্রীড়া প্রশাসনের অন্দরমহলে। আসন্ন ক্লাব নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি বড় রাজনৈতিক বার্তা বহন করে।

সোমবার দুপুরে ক্লাব সচিব ও কার্যকরী সমিতির সদস্যদের উদ্দেশ্যে পাঠানো এক চিঠিতে টুটু বসু তাঁর পদত্যাগের কথা জানান। চিঠিতে স্পষ্টভাবে তিনি লেখেন, “সভাপতির চেয়ার থেকে কোনও এক পক্ষের প্রচার করা উচিত নয়। চেয়ার কিংবা পদের অপব্যবহার কখনও কিছু আমি করিনি, এবারও করব না।” এই বক্তব্যে একদিকে যেমন তাঁর নৈতিক অবস্থান স্পষ্ট, তেমনই অন্যদিকে নির্বাচনী লড়াইয়ে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনাকেও তিনি দূরে সরিয়ে রাখলেন।

   

Tutu Bose Resign from Mohun Bagan President

প্রবীণ এই ক্রীড়া প্রশাসক আরও বলেন, “মোহনবাগান ক্লাব আমার কাছে মাতৃসম। ক্লাবের প্রতি আমার ভালোবাসা কোনওদিন কমেনি, কমবেও না। এতদিন ধরে ক্লাবের নিত্যপূজার মতো সেবা করে এসেছি। এখনো সেই চেষ্টাই থাকবে। তবে, নির্বাচনের সময়ে সভাপতির চেয়ার ধরে রেখে কোনও পক্ষকে সমর্থন জানানো নৈতিকভাবে ঠিক হবে না।”

টুটু বসুর এই পদত্যাগকে অনেকেই বলছেন ‘বড় বিস্ফোরণ’। কারণ ক্লাবের নির্বাচনী হাওয়া ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম রায়ের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে নির্বাচন পরিচালনার বোর্ড। যদিও এখনো ভোটের নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা হয়নি, তবে বোঝাই যাচ্ছে, মোহনবাগান ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে ভোট উৎসাহ ইতিমধ্যেই তুঙ্গে। প্রায় দশ হাজারেরও বেশি ভোটারের এই লড়াইয়ে যে কোনও সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে।

এই আবহেই ক্লাবের অন্দরমহলে আরও একটি নাটকীয় দৃশ্য সামনে আসে। টুটু বসুর দুই ছেলে—সৃঞ্জয় বসু এবং সৌমিক বসু—দু’জনেই এখন ক্লাব রাজনীতিতে সক্রিয়। সৃঞ্জয় বসু যেখানে বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্তের বিরোধিতায় নামছেন, সেখানে ছোট ছেলে সৌমিক বসু ঠিক উল্টো পথে হেঁটে দেবাশিস দত্তকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন। রবিবার বরানগরে মোহনবাগান নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চে দেখা গেল এই দ্বিধা ও বিভাজনের চিত্র।

সৌমিক বসুর এই অবস্থান অনেকের কাছেই চমকপ্রদ। একদিকে দাদা সৃঞ্জয় বসু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তিনিই শাসক গোষ্ঠীর প্রার্থীকে সমর্থন করে তাঁদের শক্তি বাড়াচ্ছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, মোহনবাগান ক্লাবের রাজনীতিতে ‘পরিবার বনাম মতাদর্শ’ দ্বন্দ্ব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

স্বপনসাধন বসুর পদত্যাগ নিয়ে অনেকেই বলছেন, এটা তাঁর ব্যক্তিগত সততার প্রতিফলন। দীর্ঘদিন ধরে ক্লাবের সেবায় যুক্ত থাকা একজন অভিজ্ঞ প্রশাসক হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছেন, এই সময়ে নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই শ্রেয়। তাঁর কথায়, “আমি চাই, সদস্যরা নির্ভয়ে, স্বাধীনভাবে তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করুন। সেই প্রক্রিয়ায় সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই আমি তাঁদের কাছে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।”

তবে প্রশ্ন উঠছে, টুটু বসুর এই পদত্যাগ কি কেবলমাত্র নৈতিক অবস্থান, না কি এর আড়ালে রয়েছে বড় কোনও কৌশলগত সিদ্ধান্ত? আগামী দিনে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে নির্বাচনের ফলাফলে। তবে এটুকু স্পষ্ট, মোহনবাগান ক্লাবের রাজনীতি এবার অনেক বেশি সংবেদনশীল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে চলেছে।

সবশেষে, মোহনবাগানের সদস্য-সমর্থকদের কাছেই এখন সিদ্ধান্তের ভার। তাঁরা ঠিক করবেন, কে থাকবেন আগামী কমিটিতে। আর টুটু বসু? তিনি সরে গেলেন আলো থেকে, কিন্তু তাঁর প্রভাব এবং অবদান ক্লাবের ইতিহাসে রয়ে যাবে অমলিন।