পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রতীরবর্তী (Digha Jagannath Temple) শহর দিঘা এই মুহূর্তে পরিণত হয়েছে এক বিশাল তীর্থক্ষেত্রে। সারা শহর জুড়ে এখন উৎসবের আবহ, আর তার কেন্দ্রে রয়েছেন জগন্নাথদেব। রবিবার, ২৮ এপ্রিল বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে পুরীর নিয়ম মেনে শুরু হয়েছে দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরে (Digha Jagannath Temple) প্রাণপ্রতিষ্ঠার আচার। তিন দিনের এই মহাযজ্ঞে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত হাজার হাজার পুণ্যার্থী।
৩৩ কোটি দেবতার আহ্বানে মহাযজ্ঞ (Digha Jagannath Temple)
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্যে মহাযজ্ঞ। শাস্ত্র অনুযায়ী এই যজ্ঞের মাধ্যমে ৩৩ কোটি দেবতাকে আহ্বান জানানো হবে। হোমযজ্ঞের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী আটচালা, যেখানে দু’বেলা করে চলেছে পূজা ও বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ (Digha Jagannath Temple) । এই যজ্ঞে ব্যবহৃত হবে ১০০ কুইন্টাল আম ও বেলকাঠ এবং ২ কুইন্টাল ঘি—এই বিপুল আকারের আয়োজন পূর্ব মেদিনীপুরে এই প্রথম।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে এসেছেন ৫৭ জন সেবায়েত, যাঁরা নিজস্ব আচার অনুসরণে এই প্রাণপ্রতিষ্ঠার কাজ পরিচালনা করছেন। তাঁদের সঙ্গে আছেন ইসকনের ১৭ জন সাধু। এই আচার্যরা প্রাচীন রীতিতে প্রতিদিন চলমান যজ্ঞ ও পূজা পরিচালনা করছেন।
মন্দির উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি(Digha Jagannath Temple)
৩০ এপ্রিল, বুধবার, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Digha Jagannath Temple) উপস্থিতিতে হবে মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন ও মূল প্রাণপ্রতিষ্ঠা। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন পুরীর ‘দৈতাপতি’ রাজেশজী, যিনি নিজ হাতে দেবতাদের প্রাণস্থাপন করবেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের জন্য এবং বৃহৎ জনসমাগমের কারণে গোটা দিঘা জুড়ে ট্র্যাফিক ও নিরাপত্তা(Digha Jagannath Temple) ব্যবস্থায় কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল জানান, নন্দকুমার থেকে দিঘার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়ে গেছে। শুধু যাঁদের গাড়ির পাস রয়েছে, তাঁরাই মূল শহরে প্রবেশ করতে পারবেন, বাকিদের জন্য বাইপাস এবং বিভিন্ন পার্কিং পয়েন্টে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ব্যবস্থা (Digha Jagannath Temple)
ওল্ড দিঘা থেকে ১১৬ বি জাতীয় সড়ক ধরে মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিউ দিঘা বাস ডিপো থেকেও পায়ে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছনো যাবে। এছাড়া ট্রেনযাত্রীদের জন্য ওল্ড দিঘা ও বাইপাস রুট দুটোই খোলা রাখা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট বুথ (Digha Jagannath Temple) বসানো হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরা নজরদারিতে রাখা হয়েছে গোটা রাস্তাটি।
বাজার, থানা, ও স্ট্র্যাটেজিক জায়গাগুলিতে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার। কোলাঘাট থেকে দিঘা পর্যন্ত জাতীয় সড়কের পাশে লাগানো হয়েছে মন্দির উদ্বোধনের ফ্লেক্স। প্রতিটি থানাকে দেওয়া হয়েছে নজরদারির নির্দেশ।
“আমরা প্রস্তুত”—জেলা প্রশাসনের আশ্বাস
পূর্ব মেদিনীপুর (Digha Jagannath Temple) জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক জানান, “আমরা জগন্নাথদেবকে স্বাগত জানাতে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে হাজার হাজার ভক্ত দিঘায় আসবেন, তাঁদের জন্য নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হয়েছে।”
দিঘার বুকে এই জগন্নাথ মন্দির শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে। এই মহাযজ্ঞে উপস্থিত থাকা মানে আধ্যাত্মিকতার এক গভীর অভিজ্ঞতার অংশ হওয়া। পুণ্যার্থীদের আগমন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আর রাজ্যের তৎপরতা মিলিয়ে, এই মুহূর্তে দিঘা যেন এক “ধর্মতীর্থ নগরী”।