মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের তারকা পেসার জসপ্রিত বুমরাহ (Jasprit Bumrah) আইপিএল ২০২৫-এর ৪৫ নম্বর ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (এলএসজি) বিরুদ্ধে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ইতিহাস গড়েছেন। রবিবার অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে বুমরাহ চারটি উইকেট তুলে নিয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ৫৪ রানের দাপুটে জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই ম্যাচে তিনি শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি পেসার লসিথ মালিঙ্গাকে ছাড়িয়ে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ইতিহাসে আইপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির রেকর্ড গড়েন, ১৭১টি উইকেট নিয়ে।
বুমরাহর ঐতিহাসিক কীর্তি
৩১ বছর বয়সী জসপ্রিত বুমরাহ এই বড় মাইলফলকটি অর্জন করেন এলএসজি-র রান তাড়ার তৃতীয় ওভারে। তিনি একটি ব্যাক-অফ-লেংথ ডেলিভারির মাধ্যমে এলএসজি-র ওপেনার এইডেন মার্করামকে আউট করেন। মার্করাম ১১ বলে ৯ রান করে নমন ধীরের হাতে ক্যাচ দেন, এবং এই উইকেটের মাধ্যমে বুমরাহ তার ১৭১তম উইকেট তুলে নিয়ে মালিঙ্গার ১৭০ উইকেটের রেকর্ড ভেঙে দেন। মালিঙ্গা ১২২ ম্যাচে এই উইকেট সংখ্যা অর্জন করেছিলেন, যেখানে বুমরাহ তার ১৩৯তম ম্যাচে এই কীর্তি গড়েন।
বুমরাহর এই অসাধারণ পারফরম্যান্সে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দর্শকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের মালিক নীতা আম্বানি এবং আকাশ আম্বানি এই কীর্তির পর বুমরাহকে স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেন। বুমরাহ এই ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন, যার মধ্যে মার্করাম, ডেভিড মিলার, আব্দুল সামাদ এবং আবেশ খানের উইকেট ছিল।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকা
- জসপ্রিত বুমরাহ – ১৭১ উইকেট
- লসিথ মালিঙ্গা – ১৭০ উইকেট
- হরভজন সিং – ১২৭ উইকেট
- মিচেল ম্যাকক্লেনাঘান – ৭১ উইকেট
- কাইরন পোলার্ড – ৬৯ উইকেট
বুমরাহ এখন আইপিএল-এ একটি দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সুনীল নারিনের পিছনে রয়েছেন, যিনি ১৮৭ উইকেট নিয়েছেন।
আইপিএল-এ একটি দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট
- ১৮৭ – সুনীল নারিন (কেকেআর)
- ১৭১ – জসপ্রিত বুমরাহ (এমআই)
- ১৭০ – লসিথ মালিঙ্গা (এমআই)
- ১৫৭ – ভুবনেশ্বর কুমার (এসআরএইচ)
- ১৪০ – ডোয়াইন ব্রাভো (সিএসকে)
উল্লেখযোগ্যভাবে, বুমরাহ আইপিএল ২০২৫-এর প্রথম চারটি ম্যাচ মিস করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সফরের সময় পিঠের চোটের কারণে। তবুও, ফিরে এসে তিনি তার অসাধারণ ফর্ম প্রদর্শন করেছেন এবং মুম্বইয়ের বোলিং আক্রমণের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছেন।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দাপুটে জয়
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স আইপিএল ২০২৫-এ তাদের পঞ্চম টানা জয় নথিভুক্ত করেছে, রবিবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে ৫৪ রানের বিশাল জয়ের মাধ্যমে। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুম্বই ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানের বিশাল স্কোর গড়ে। ওপেনার রায়ান রিকেলটন ৩২ বলে ৫৮ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন, যেখানে চারটি ছক্কা ছিল। সূর্যকুমার যাদবও ২৮ বলে ৫৪ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন, এবং এই ইনিংসের সুবাদে তিনি আইপিএল ২০২৫-এর অরেঞ্জ ক্যাপ দখল করেন, ৪২৭ রান নিয়ে। নমন ধীর ১১ বলে অপরাজিত ২৫ এবং ডেবিউটান্ট করবিন বশ ১০ বলে ২০ রান করে মুম্বইয়ের স্কোর ২০০ পার করতে সাহায্য করেন।
জবাবে, এলএসজি ২০ ওভারে ১৬১ রানে অলআউট হয়ে যায়। মিচেল মার্শ ২৪ বলে ৩৪ এবং আয়ুষ বড়নি ২২ বলে ৩৫ রান করলেও, বুমরাহ এবং ট্রেন্ট বোল্টের (৩/২০) দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে তারা টিকতে পারেনি। উইল জ্যাকসও ২/১৮ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন, নিকোলাস পুরান (২৭) এবং ঋষভ পন্থকে (৪) একই ওভারে আউট করে। এলএসজি-র পক্ষে মায়াঙ্ক যাদব এবং আবেশ খান ২টি করে উইকেট নেন।
ম্যাচের হাইলাইটস
মুম্বইয়ের ব্যাটিং ইনিংস শুরু হয় রোহিত শর্মা এবং রিকেলটনের ওপেনিং জুটির মাধ্যমে। তবে, মায়াঙ্ক যাদব, যিনি চোট থেকে ফিরে এই ম্যাচে প্রথমবার খেলছিলেন, রোহিতকে ৫ বলে ১২ রানে আউট করেন। এরপর রিকেলটন এবং সূর্যকুমার ৫৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন। মাঝের ওভারে তিলক বর্মা এবং হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট পড়লেও, মুম্বইয়ের রানের গতি কমেনি। শেষ দিকে ধীর এবং বশের ক্যামিও মুম্বইকে ২১৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরে পৌঁছে দেয়।
বোলিংয়ে বুমরাহ শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করেন। তৃতীয় ওভারে মার্করামকে আউট করার পর তিনি ১৬তম ওভারে মিলার, সামাদ এবং আবেশকে আউট করে এলএসজি-র মধ্যম ও নিম্ন ক্রম ভেঙে দেন। বোল্ট তার শুরুর ওভারে মার্শকে আউট করেন এবং শেষ ওভারে দিগভেশ রাঠিকে ফিরিয়ে মুম্বইয়ের জয় নিশ্চিত করেন। জ্যাকসের ডাবল স্ট্রাইক এলএসজি-র রান তাড়ার সম্ভাবনা শেষ করে দেয়।
আইপিএল পয়েন্টস টেবিলে প্রভাব
এই জয়ের ফলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্টস টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে, তাদের প্লে-অফের সম্ভাবনাকে আরও শক্তিশালী করে। অন্যদিকে, এলএসজি ৯ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে, তাদের নেট রান রেটের কারণে।
বুমরাহর আইপিএল যাত্রা
২০১৩ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএলে অভিষেকের পর থেকে বুমরাহ ধারাবাহিকভাবে দলের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠেছেন। তিনি মুম্বইয়ের পাঁচটি আইপিএল শিরোপা (২০১৩, ২০১৫, ২০১৭, ২০১৯, ২০২০) জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার ইয়র্কার, স্লো বাউন্সার এবং চাপের মুহূর্তে শান্ত থাকার ক্ষমতা তাকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর বোলারে পরিণত করেছে। মালিঙ্গার মেন্টরশিপে গড়ে ওঠা বুমরাহ এখন তার গুরুর রেকর্ড ভেঙে নিজেকে মুম্বইয়ের সর্বকালের সেরা বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
জসপ্রিত বুমরাহর এই ঐতিহাসিক কীর্তি এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স আইপিএল ২০২৫-কে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। বুমরাহর নেতৃত্বে মুম্বইয়ের বোলিং আক্রমণ এবং রিকেলটন, সূর্যকুমারের মতো ব্যাটসম্যানদের বিস্ফোরক ফর্ম দলকে প্লে-অফের দৌড়ে শক্তিশালী অবস্থানে রেখেছে। এলএসজি-র বিরুদ্ধে এই জয় মুম্বইয়ের ১৫০তম আইপিএল জয় হিসেবেও চিহ্নিত হয়েছে, যা আইপিএল ইতিহাসে প্রথম কোনো দলের জন্য এই মাইলফলক। বুমরাহর এই অর্জন ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যাবে, এবং তার এই ফর্ম অব্যাহত থাকলে মুম্বই ষষ্ঠ আইপিএল শিরোপার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।