Invest in India: রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-র গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা (Sanjay Malhotra) শুক্রবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ইউএস-ইন্ডিয়া ইকোনমিক ফোরামে মার্কিন ব্যবসায়ীদের ভারতের অর্থনীতিতে আরও গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই) এবং ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম (ইউএসআইএসপিএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
মালহোত্রা তাঁর ভাষণে জানান, বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধির মধ্যেও ভারত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, “অনেক উন্নত অর্থনীতির যেখানে মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে, সেখানে ভারত শক্তিশালী বৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। দীর্ঘমেয়াদী মূল্য এবং সম্ভাবনার সন্ধানে থাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য ভারত একটি প্রাকৃতিক পছন্দ।”
তিনি আরও বলেন, ভারতের আর্থিক, রাজনৈতিক এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছ ও নীতি-ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা, এবং ব্যবসার জন্য অনুকূল পরিবেশ—এই সমস্ত বিষয়গুলি ভারতের অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করেছে।
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য আদর্শ গন্তব্য ভারত
গভর্নর মালহোত্রা ভারতের নীতিগত ধারাবাহিকতা ও ভবিষ্যতমুখী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিয়ে বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে ভারত কেবল বিনিয়োগের গন্তব্য নয়, এটি সমৃদ্ধির অংশীদারও।” তিনি মার্কিন সংস্থাগুলিকে ভারতে বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের জন্য আহ্বান জানান, যাতে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক বৃদ্ধি সম্ভব হয়।
তিনি সরকারের বিভিন্ন নতুন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন, যা মহাকাশ গবেষণা, সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহন খাতে বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে। একইসঙ্গে, ভারতে SaaS (Software as a Service) এবং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিতে নতুন উদ্ভাবন কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার সুযোগ প্রসারিত হচ্ছে।
ভারতের আর্থিক খাতের দৃঢ়তা এবং প্রসার
গভর্নর ভারতের সাম্প্রতিক আর্থিক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে জানান, ২০২১-২২ থেকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ভারতের গড় বৃদ্ধি হার ৮.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০১০-২০১৯ সময়কালের ৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি বলেন, “৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস যদিও আমাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের তুলনায় কিছুটা কম, তবুও এটি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ।”
ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান প্রসঙ্গে মালহোত্রা জানান, “গত দশ বছরে ভারত বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা সাম্যের (PPP) বিচারে ভারত ইতিমধ্যেই তৃতীয় স্থানে রয়েছে এবং খুব শীঘ্রই নামমাত্র হিসাবেও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে।” তিনি ভারতের ২০৪৭ সালের মধ্যে “বিকসিত ভারত” (Viksit Bharat) গঠনের লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন, যখন দেশ তার স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে।
ব্যাংকিং এবং নন-ব্যাংকিং খাতের উন্নতি
মালহোত্রা ভারতের ব্যাংকিং ব্যবস্থার দৃঢ়তা নিয়ে বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির (SCBs) লাভজনকতা বৃদ্ধি পেয়েছে, অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ কমেছে এবং মূলধন ও তরলতা শক্তিশালী হয়েছে। নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও (NBFCs) ভালো অবস্থানে রয়েছে।
যদিও সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথ হয়েছে, তবে তা এখনও দ্বিগুণ সংখ্যায়—প্রায় ১২ শতাংশে রয়েছে, যা গত দশকের গড় ১০.৫ শতাংশ বৃদ্ধির তুলনায় বেশি।
তিনি যোগ করেন, “আমরা ব্যাংকিং ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ক্ষমতা, সাড়া দেওয়ার দক্ষতা এবং স্থিতিস্থাপকতা আরও বাড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য নীতিগত নিয়ন্ত্রণ ও দক্ষতার মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা।” এছাড়াও তিনি বলেন, ভারতের কম ব্যক্তিগত ঋণ-টু-জিডিপি অনুপাত (private debt-to-GDP ratio) দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের জন্য বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।
ভারত: একটি উন্নততর বৈশ্বিক অংশীদার
সম্মেলনের শেষে মালহোত্রা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা ক্রমাগত বাড়ছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতের অবদানও বাড়ছে। তিনি মার্কিন ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান, তারা যেন ভারতে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান করে এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করে।