ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন খাতে স্বনির্ভরতা গড়ে তুলতে এবং দেশীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কেন্দ্র সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিম (ECMS)-এর গাইডলাইন ও পোর্টাল। আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই গাইডলাইন ও পোর্টালের উদ্বোধন করেন।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ইসিএমএস (ECMS) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এরপর দ্রুততার সাথে প্রকল্পটির গাইডলাইন তৈরি করে আজ তা জনগণের সামনে উন্মোচিত হলো।
ইসিএমএস প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতা ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং ভারতীয় সংস্থাগুলিকে বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলার (Global Value Chains – GVCs) সঙ্গে সংযুক্ত করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “গত কয়েক বছরে ভারতের ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রপ্তানি ছয় গুণেরও বেশি বেড়েছে। উৎপাদনের বার্ষিক গড় বৃদ্ধির হার (CAGR) ১৭ শতাংশের বেশি এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে তা ২০ শতাংশের উপরে।” তিনি আরও জানান, মোবাইল ফোন, সার্ভার, ল্যাপটপ ও আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে এবং এই শিল্প খাত এখন এক বিরাট উল্লম্ফনের জন্য প্রস্তুত।
মন্ত্রী ECMS প্রকল্পকে একটি “অনুভূমিক প্রকল্প” হিসেবে অভিহিত করেন, যার প্রভাব কেবল ইলেকট্রনিক্স খাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং শিল্প, বিদ্যুৎ, অটোমোবাইলসহ একাধিক খাতকে উপকৃত করবে। তাঁর মতে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ইকোসিস্টেম গড়ে উঠছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি অত্যন্ত ইতিবাচক সঙ্কেত।
উদ্ভাবন ও গুণগত মানের গুরুত্ব তুলে ধরে বৈষ্ণব বলেন, “অনেক সংস্থা এখন নিজেদের ডিজাইন টিম গড়ে তুলছে। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রত্যেক অংশগ্রহণকারী সংস্থার উচিত নিজস্ব ডিজাইন সক্ষমতা তৈরি করা।”
তিনি গুণগত মানের ক্ষেত্রে সিক্স সিগমা (Six Sigma) মানদণ্ড অনুসরণের উপর জোর দেন। মন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, যারা গুণগত মান রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বাজারে টিকতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “ডিজাইন ক্ষমতা ও গুণগত উৎকর্ষতার উপর দুই প্রান্তিক দৃষ্টি দিলেই ভারত ইলেকট্রনিক্স শিল্পে নেতৃত্ব দেবে।”
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং তথ্যভিত্তিক সমাধানে ভারতের অগ্রগতি নিয়েও বৈষ্ণব বিস্তারিতভাবে কথা বলেন। তিনি জানান, বর্তমানে AI Kosh প্ল্যাটফর্মে ৩৫০টি ডেটাসেট আপলোড করা হয়েছে এবং আইআইটি সমূহের সহযোগিতায় তৈরি হওয়া চারটি নতুন AI টুল খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এগুলি দেশের ডিজিটাল প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে আরও মজবুত করবে।
তিনি আরও জানান, ইলেকট্রনিক্স শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে প্রযুক্তিগত ও আইনি সমাধানের (Techno-Legal Solutions) ওপরও কাজ চলছে। এর মাধ্যমে একটি নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ECMS প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যেই বহু প্রকল্প জমা পড়েছে এবং এক শক্তিশালী প্রকল্পের পাইপলাইন প্রস্তুত রয়েছে বলে বৈষ্ণব জানান। তিনি আশাবাদী, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতের ইলেকট্রনিক্স খাতে এক নবজাগরণের সূচনা হবে। তাঁর মতে, “এটা কেবল শুরু। আগামী বছরগুলিতে ভারত বিশ্ব ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের এক বিশাল কেন্দ্র হয়ে উঠবে।”
ইলেকট্রনিক্স কম্পোনেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং স্কিমের (ECMS) মূল বৈশিষ্ট্য:
- দেশীয় উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি
- বৈদেশিক ও দেশীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ
- গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সঙ্গে ভারতীয় সংস্থাগুলির সংযুক্তি
- ডিজাইন ও উদ্ভাবন দক্ষতার উন্নয়ন
- গুণগত মানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জন
- প্রযুক্তিগত এবং আইনি সহায়তার মাধ্যমে শিল্প সুরক্ষা
পরিশেষে, বৈষ্ণব ভারতীয় যুবসমাজ, উদ্যোক্তা এবং স্টার্টআপগুলিকে ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান। তাঁর কথায়, “উদ্ভাবন, গুণগত মান ও দৃঢ় নেতৃত্বের সমন্বয়ে আগামী দশক হবে ভারতের ইলেকট্রনিক্স যুগ।”