উত্তর-পূর্ব (north east) ভারতের তিন রাজ্য—অসম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরায়—পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করার অভিযোগে কমপক্ষে ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে রয়েছেন একজন বিধায়ক, সাংবাদিক, ছাত্র, আইনজীবী এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বেশিরভাগ গ্রেফতারই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা মন্তব্যের কারণে হয়েছে। এ পর্যন্ত আসামে সর্বাধিক ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
অসমে গ্রেফতারের বিবরণ (north east)
অসমে (north east) প্রথম গ্রেফতার হন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)-এর বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়। তিনি দাবি করেছিলেন যে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা এবং মঙ্গলবারের পহেলগাঁও হামলা “সরকারের ষড়যন্ত্র”। শুক্রবার তাকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়।
শুক্রবার পর্যন্ত আসামে গ্রেফতার হওয়া অন্যান্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হাইলাকান্দির মোঃ জবির হুসাইন, শিলচরের মোঃ এ কে বাহাউদ্দিন এবং মোঃ জাভেদ মজুমদার, মরিগাঁওয়ের মোঃ মহাহার মিয়া এবং শিবসাগরের মোঃ সাহিল আলি।
এছাড়া, করিমগঞ্জের (north east) মোঃ মুস্তা আহমেদ ওরফে সাহেল শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ পোস্ট করার জন্য গ্রেফতার হন। এদের মধ্যে জবির হুসাইন একজন সাংবাদিক, বাহাউদ্দিন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র এবং মজুমদার একজন আইনজীবী।
শনিবার পুলিশ বিশ্বনাথ থেকে ২৫ বছর বয়সী মোঃ জরিফ আলি এবং সত্র মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদক অনিল বানিয়াকে গ্রেফতার করে। এছাড়া হাইলাকান্দির সুমন মজুমদার ওরফে বুলবুল আলম মজুমদার, নগাঁওয়ের মাশুদ আজহার এবং গৌহাটির নিকটবর্তী হাজো থেকে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের সকলের বিরুদ্ধে “ভারতবিরোধী মন্তব্য” করার অভিযোগ রয়েছে। কাছাড় জেলা পুলিশও সামাজিক মাধ্যমে “পাকিস্তান সমর্থনকারী বিষয়বস্তু” পোস্ট করার জন্য আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে।
কেরালা বধের পর কী বললেন বাস্তব রায়?
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন
আসামের (north east) মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, “প্রয়োজনে আমরা তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিধান আরোপ করব। আমরা সব সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট পরীক্ষা করছি এবং যারা আমাদের মতে জাতিবিরোধী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যব ১৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোনো মিল নেই। এই দুটি দেশ শত্রু রাষ্ট্র এবং এটি এভাবেই থাকবে।”
ত্রিপুরায় গ্রেফতার
ত্রিপুরায় (north east) এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে দুজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। ধলাই জেলায় পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে “রাষ্ট্র বিরোধী মন্তব্য” করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জওহর দেবনাথ এবং কুলদীপ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়। উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকে আরেক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সজল চক্রবর্তী এবং সিপাহীজালা জেলার সোনামুড়া থেকে জহিরুল ইসলামকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
মেঘালয়ে গ্রেফতার
মেঘালয়ে শুক্রবার পূর্ব খাসি পাহাড় জেলা থেকে ৩০ বছর বয়সী সাইমন শ্যালাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি গৌহাটির একটি সংবাদ চ্যানেলের সম্প্রচারিত ভিডিওতে “জাতিবিরোধী মন্তব্য” পোস্ট করেছিলেন।
প্রতিক্রিয়া এবং উদ্বেগ
এই গ্রেফতারগুলি সামাজিক মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেকে মনে করেন যে এই পদক্ষেপগুলি বাকস্বাধীনতার উপর অযাচিত হস্তক্ষেপ। তবে, কর্তৃপক্ষের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার পর সরকার এবং পুলিশ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে, যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট পর্যবেক্ষণের কাজ অব্যাহত রয়েছে এবং পুলিশ জানিয়েছে যে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম চলবে। এই ঘটনা উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।