জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) মন্তব্য নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যার অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা (লিডার অফ অপোজিশন) আর অশোক মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে “অত্যন্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ” এবং “ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির প্রতিফলন” বলে সমালোচনা করেছেন। শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অশোক সিদ্দারামাইয়ার কাছে এই মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছেন।
অশোকের অভিযোগ: সিদ্দারামাইয়ার ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি (siddaramaiah)
অশোক বলেন, “যখন গোটা দেশ এই সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) বক্তব্য অত্যন্ত ধাক্কাজনক। তাঁর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির মানসিকতা লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, ইসরায়েলে যেমন উৎসবরত নাগরিকদের উপর হামলা হয়েছিল, তেমনই জম্মু ও কাশ্মীরে হিন্দুদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে।
অশোক বলেন, “এই ধরনের জঘন্য কাজকে কেবল সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) মতো ব্যক্তিই ক্ষমা করতে পারেন। দেশের প্রতি তাঁর কোনও দায়বদ্ধতা নেই, শুধু ভোট পাওয়ার চিন্তা তাঁর মাথায়। এটা একজন নীতিহীন ব্যক্তির পরিচয়।”
তিনি সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) বক্তব্যের সংবেদনশীলতার অভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অশোক বলেন, “গোটা দেশ যখন এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, তখন সিদ্দারামাইয়া বলছেন যে হারানো প্রাণ ফিরিয়ে আনা যায় না। যদি তাঁর নিজের পরিবারের উপর এমন ঘটনা ঘটত, তিনি কি এমন কথা বলতেন? এত সংবেদনহীনভাবে কথা বলে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ফুলের মালা পরেন। এটা তাঁর সহানুভূতির অভাবের প্রমাণ।”
কংগ্রেসের দ্বিমুখী নীতির অভিযোগ
অশোক আরও অভিযোগ করেছেন যে, কংগ্রেসের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের পাশে থাকার কথা বললেও, সিদ্দারামাইয়া বিভাজনমূলক কথা বলছেন। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের এই দ্বিমুখী নীতি গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের একতার প্রশ্নে সবাইকে একসঙ্গে কথা বলা উচিত, কিন্তু সিদ্দারামাইয়া ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে বিভেদ সৃষ্টি করছেন।”
পাকিস্তানি নাগরিকদের নিয়ে অভিযোগ
বিজেপি নেতা অশোক আরও অভিযোগ করেছেন যে, কর্ণাটকের ভাটকালে প্রায় এক ডজন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিলেও, রাজ্য সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “কালাবুরাগিতে রাস্তায় পাকিস্তানের পতাকা লাগানো হয়েছিল, যা মুসলিম মহিলারা সরিয়ে দিয়েছেন। আমাদের দেশের মধ্যেই শত্রুরা রয়েছে। এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি নজর রাখা উচিত।”
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও রাজ্য সরকারের ভূমিকা
অশোক রাজ্যের গোয়েন্দা ব্যবস্থার ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “বেঙ্গালুরুর রামেশ্বরম ক্যাফেতে বোমা হামলার সময় কংগ্রেস সরকার কী করছিল? এখানেও অত্যাচার ও ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দা সংস্থা এখানে কেন ব্যর্থ হয়েছে?” তিনি জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের ভূমিকার উপরও জোর দিয়ে বলেন, “নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকার ও গভর্নরের মতামতের উপর নির্ভর করে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কথা বলা উচিত, কিন্তু সিদ্দারামাইয়া ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির স্বরে কথা বলছেন।”
সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য
এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) বলেছিলেন যে, তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে “যুদ্ধের” পক্ষে নন এবং এই হামলায় “নিরাপত্তা ত্রুটির” বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানান। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলেন, “এই ঘটনায় নিরাপত্তা ত্রুটি হয়েছে। আমরা যুদ্ধের পক্ষে নই। কাশ্মীর অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত কাশ্মীরে শান্তি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাড়ানো।”
সবুজ-মেরুন জার্সিতে মধুর প্রতিশোধ সালাউদ্দিনের
হামলার প্রেক্ষাপট
২২ এপ্রিল পহেলগাঁওর বাইসারান মেডোতে এই ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত এবং ১৬ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা ধর্মের ভিত্তিতে পর্যটকদের উপর নির্বাচিতভাবে আক্রমণ চালিয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে, যেখানে বিরোধী দলগুলি সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, “বিরোধী দলগুলি সরকারের যে কোনও পদক্ষেপের জন্য পূর্ণ সমর্থন দেবে।” তবে, সিদ্দারামাইয়ার মন্তব্য এই একতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে বলে অশোক অভিযোগ করেছেন।
পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা নিয়ে কর্ণাটকের রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। অশোকের অভিযোগ এবং সিদ্দারামাইয়ার মন্তব্যের মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ প্রকাশ পেয়েছে। এই ঘটনা কেবল জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিই নয়, কর্ণাটকের রাজনৈতিক সমীকরণকেও নতুন মাত্রা দিয়েছে।