নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরের (krishnanagar) এক যুবক পুলিশের তদন্তের আওতায় এসেছে। সে তার ফেসবুক স্টোরিতে পাকিস্তানি বন্ধুদের সঙ্গে এ কে-৪৭ ধরনের রাইফেল হাতে ছবি পোস্ট করেছেন। ছবির ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘পাকিস্তানি ভাইয়া’। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর দেশজুড়ে উচ্চ সতর্কতার মধ্যে এই পোস্ট পুলিশের নজরে আসে।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “যুবকটি বর্তমানে তদন্তের আওতায় রয়েছে। শনিবার কৃষ্ণনগর (krishnanagar) কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার ফেসবুক প্রোফাইল গোয়েন্দারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছেন।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহজনক ছবি পাওয়ার পরপরই গোয়েন্দা সূত্রে যুবকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তাকে সর্বশেষ ঈদের সময় তার গ্রামে দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এক পুলিশ সূত্র জানায়, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, যুবকটি তিন বছর আগে বাড়ি ছেড়ে কাতারে কাজের জন্য গিয়েছিল। এক বছর আগে সে কাতার থেকে ভারতে ফিরে আসে, কিন্তু কয়েক দিন পর মুম্বইয়ে এক আত্মীয়ের হোটেলে কাজে যোগ দেয়।”
এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টি বেশ সন্দেহজনক। আমরা সব সম্ভাব্য দিক থেকে তদন্ত করছি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সে বিদেশে থাকাকালীন এই ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেছিল। আমরা তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।”
যুবকের বাবা-মা জানিয়েছেন (krishnanagar)
যুবকের বাবা-মা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিন বছর আগে এক বিবাহিত হিন্দু মহিলার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে গ্রাম (krishnanagar) থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তারপর থেকে তাদের সঙ্গে ছেলের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে এবং বর্তমানে যাচাই করা হচ্ছে।
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে । লস্কর-ই-তৈবা (LeT)-এর শাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
রাবণের উদাহরণ টেনে হামলাকারীদের শিক্ষা দেওয়ার ‘মোহন-বার্তা’
পহেলগাঁওয়ের হামলা
এই ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে ঠেকেছে। নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেছে। ভারত সরকার কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং উভয় দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা কমানো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “এই জঘন্য হামলার পিছনে থাকা দোষীদের ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দিল্লি ফিরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) হামলার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং পাঁচজন সন্ত্রাসীকে চিহ্নিত করেছে, যাদের মধ্যে তিনজন পাকিস্তানি—আসিফ ফৌজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা—এবং দুজন স্থানীয়—আদিল গুরি এবং আহসান। প্রত্যেকের জন্য ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে নিরাপত্তা উদ্বেগ
নদিয়ার (krishnanagar) এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুবকের ফেসবুক পোস্টটি প্রথমে স্থানীয় গোয়েন্দা সূত্রে ধরা পড়ে। পোস্টে তিনি পাকিস্তানি বন্ধুদের সঙ্গে অস্ত্র হাতে ছবি শেয়ার করেছেন, যা পহেলগাঁও হামলার পর সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। পুলিশ এখন তার ফেসবুক প্রোফাইলের সমস্ত কার্যকলাপ, যোগাযোগ এবং পোস্ট বিশ্লেষণ করছে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, যুবকটি (krishnanagar) তিন বছর আগে গ্রাম ছাড়ার পর কাতারে কাজ করতে যায়। সেখানে তার এই ‘পাকিস্তানি বন্ধুদের’ সঙ্গে পরিচয় হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয় যে এই বন্ধুরা জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কি না। যুবকের বর্তমান অবস্থান জানতে পুলিশ মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পহেলগাঁও হামলায় নিহত তিন বাঙালি—বিতান অধিকারী, সমীর গুহ এবং মণীশ রঞ্জন—এর পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। তবে, নদিয়ার এই ঘটনা রাজ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, “এই ধরনের পোস্ট জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে আরও জটিলতা যোগ করেছে। পুলিশ এখন যুবকের সমস্ত বিদেশি যোগাযোগ এবং তার সম্ভাব্য জঙ্গি সংযোগ খতিয়ে দেখছে। তদন্তের অগ্রগতি এই ঘটনার পিছনের সত্য উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।