কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভায় দলের উপনেতা গৌরব গগৈ (gaurav gogoi) শনিবার অসমে অবৈধ কয়লা খননের ‘সাম্রাজ্য’ উন্মোচনের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে ধন্যবাদ জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, এই অবৈধ কার্যকলাপ মুখ্যমন্ত্রীর ‘নাকের ডগায়’ চলছিল, যিনি বারবার এর অস্তিত্ব অস্বীকার করে এসেছেন। গগৈ (gaurav gogoi) প্রশ্ন তুলেছেন, “অসমের আসল ‘সিন্ডিকেট রাজা’ কে?” এবং রাজ্য সরকারের কাছে এর জবাব দাবি করেছেন।
ইডি কি করেছে
ইডি গত বৃহস্পতিবার অসম ও মেঘালয়ের ১৫টি স্থানে অবৈধ কয়লা খনন এবং কোক প্ল্যান্ট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচারের তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযান চালায়। এই অভিযানে ১.৫৮ কোটি টাকা নগদ, ডিজিটাল ডিভাইস, নথিপত্র এবং দুটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
ইডি জানিয়েছে, মেঘালয়ে খননের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, ‘র্যাট-হোল’ পদ্ধতিতে অমানবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন প্রায় ১,২০০ টন কয়লা অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। এই কয়লা অসমের বঙ্গাইগাঁও জেলার জগিঘোপার ডিপোতে সংরক্ষণ করা হয় এবং পরে সিমেন্ট, ইটভাটা, লোহা-ইস্পাত শিল্প এবং অবৈধ কোক প্ল্যান্টে সরবরাহ করা হয়।
গগৈ সামাজিক মাধ্যমে বলেন (gaurav gogoi)
গগৈ (gaurav gogoi) সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলেন, “ইডি অসমের অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্য উন্মোচন করেছে! ১.৫৮ কোটি টাকা নগদ জব্দ, জাল চালান উদ্ধার। মার্ঘেরিটা, জগিঘোপা, গুয়াহাটিতে প্রতিদিন ১,২০০ টন অবৈধ কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। এসব হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নাকের ডগায়, যিনি অবৈধ খননের কথা অস্বীকার করে এসেছেন!” তিনি আরও জানান, (gaurav gogoi) কয়লা মাফিয়ারা প্রতি ট্রাকে ১.২৭ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা দিয়ে মেঘালয়-অসম সীমান্তে কয়লা পরিবহনের অনুমতি নিচ্ছে।
ইডির তদন্তে উঠে এসেছে, অসম ও মেঘালয়ের একটি সিন্ডিকেট এই অবৈধ কয়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা জাল চালান তৈরি করে অবৈধ কয়লাকে বৈধ খনি থেকে সংগৃহীত বলে দেখায়, যা একটি সুসংগঠিত অর্থ পাচার নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দেয়। জগিঘোপার ডিপো পরিচালনাকারীরা এই জাল বিল তৈরিতে জড়িত, যা কয়লা বাণিজ্যকে বৈধ রূপ দেয়। ইডি জানিয়েছে, এই লেনদেনের বেশিরভাগই নগদে হয় এবং সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই নগদ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করে।
ভারতের পদক্ষেপে ভীত পাকিস্তান, সীমান্তে মোতায়েন করল JF-17, F-16 যুদ্ধবিমান
গগৈ অভিযোগ করেছেন
গগৈ (gaurav gogoi) অভিযোগ করেছেন, এত বড় মাপের অবৈধ কার্যকলাপ সরকারি সুরক্ষা ছাড়া সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “এই লুণ্ঠন কি সরকারের সুরক্ষা ছাড়া সম্ভব? অসমের আসল ‘সিন্ডিকেট রাজা’ কে? দিসপুরকে জবাব দিতে হবে। অসমের মানুষ জবাবদিহি চায়।” তিনি রাজ্য সরকারের কাছে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির দাবি জানিয়েছেন।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার আক্রমণ
হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেসের উপর পাল্টা আক্রমণ করেছেন। তিনি দলটির ‘দ্বিমুখী আচরণ’-এর সমালোচনা করে বলেন, কংগ্রেস নিজেদের দুর্নীতির ইতিহাস লুকিয়ে এখন তাঁর সরকারের উপর দোষ চাপাচ্ছে। তবে, ইডির তদন্তে উঠে আসা তথ্যগুলো রাজ্যের অবৈধ কয়লা বাণিজ্যের গভীরতা এবং সরকারি তদারকির ঘাটতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনার তাৎপর্য
এই ঘটনা অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। কংগ্রেস দল ইডির তদন্তকে হাতিয়ার করে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে। ইডির অভিযানে মার্ঘেরিটা, জগিঘোপা এবং গুয়াহাটির মতো এলাকায় অবৈধ কয়লা খননের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রকাশ পেয়েছে। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, এই কয়লা সিমেন্ট কারখানা, ইটভাটা এবং অবৈধ কোক প্ল্যান্টে সরবরাহ করা হচ্ছে, যা পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এর আগে, গত জানুয়ারিতে দিমা হাসাও জেলার উমরাংসোতে একটি অবৈধ র্যাট-হোল কয়লা খনিতে জল ঢুকে ৯ জন শ্রমিক আটকা পড়েন, যাদের মধ্যে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। গগৈ তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে এই ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠনের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, জাতীয় সবুজ ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)-এর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবৈধ খনন অব্যাহত রয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।
ইডির সাম্প্রতিক তদন্ত অসম ও মেঘালয়ের অবৈধ কয়লা বাণিজ্যের পরিমাণ এবং এর সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের জটিলতা প্রকাশ করেছে। তদন্তে আরও বলা হয়েছে, খনি মালিকরা প্রতি ট্রাকে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা মুনাফা করছে, যা পরিবেশ ধ্বংস এবং শ্রমিক শোষণের মাধ্যমে অর্জিত হচ্ছে।
এই ঘটনা অসমের পরিবেশ এবং অর্থনীতির উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। গগৈয়ের দাবি, এই সিন্ডিকেটের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে এবং অবৈধ কয়লা বাণিজ্য বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, “অসমের মানুষ সত্য জানতে চায়। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করতে হবে।” তদন্তের অগ্রগতি এবং সরকারের পদক্ষেপ এই ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।