উচ্চমাধ্যমিকে সেমিস্টারের নিয়মে পরিবর্তন সংসদের

কলকাতা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) উচ্চমাধ্যমিক (higher secondary) স্তরে সেমিস্টার পদ্ধতির আওতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী,…

higher secondary semester

কলকাতা, ২৬ এপ্রিল ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (WBCHSE) উচ্চমাধ্যমিক (higher secondary) স্তরে সেমিস্টার পদ্ধতির আওতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের তিনটি ইলেকটিভ বিষয়ে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।

   

পূর্বে তিনটি ইলেকটিভ বিষয়ের মধ্যে যেকোনো একটিতে ৩০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাশ করা যেত। কিন্তু এখন প্রতিটি বিষয়ে ৩০ শতাংশ নম্বর না পেলে তা ফেল হিসেবে বিবেচিত হবে। এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের উপর অধিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

নতুন নিয়মের বিশদ বিবরণ (higher secondary)

উচ্চমাধ্যমিকে (higher secondary) মোট ৫০০ নম্বরের ফলাফল নির্ধারিত হয়। এর মধ্যে প্রথম ভাষা (যেমন বাংলা) এবং দ্বিতীয় ভাষা (যেমন ইংরেজি) বাধ্যতামূলক, এবং শিক্ষার্থীরা চারটি ইলেকটিভ বিষয় বেছে নিতে পারে। তবে, ফলাফলে সর্বাধিক নম্বর পাওয়া তিনটি ইলেকটিভ বিষয়ের নম্বর যোগ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক, একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে প্রথম ভাষা হিসেবে বাংলা, দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ইংরেজি এবং ইলেকটিভ বিষয় হিসেবে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথেম্যাটিক্স এবং বায়োলজি বেছে নিয়েছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, (higher secondary) বাংলা ও ইংরেজি প্রতি সেমিস্টারে এই দুটি বিষয়ে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। ইলেকটিভ বিষয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথেম্যাটিক্স এবং বায়োলজির মধ্যে যেকোনো তিনটি বিষয়ে প্রতি সেমিস্টারে ন্যূনতম ৩০ শতাংশ নম্বর পাশের জন্য বাধ্যতামূলক। যদি কোনো শিক্ষার্থী তিনটির মধ্যে একটিতেও ৩০ শতাংশের কম নম্বর পায়, তবে সে সেই সেমিস্টারে ফেল করবে।

এই নিয়ম শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো ফলাফল করার জন্য উৎসাহিত করবে, তবে এটি তাদের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
সেমিস্টার পদ্ধতির প্রথম ব্যাচ

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিকে সেমিস্টার পদ্ধতির প্রথম ব্যাচ। এই পদ্ধতির আওতায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম চারটি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতি সেমিস্টারে লিখিত পরীক্ষা, প্র্যাকটিক্যাল (যেখানে প্রযোজ্য) এবং অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হবে, এবং ২০২৫ সালের মার্চে পুরনো নিয়মে অনুষ্ঠিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা ছিল শেষ।

পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে ভারতকে রাফাল দেওয়া নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল ফ্রান্স

সংস্কৃত সিলেবাস বদলে অসন্তোষ

সম্প্রতি উচ্চমাধ্যমিকের (higher secondary) তৃতীয় সেমিস্টারের সংস্কৃত বিষয়ের সিলেবাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার পর এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। শিক্ষকদের মতে, মাঝপথে সিলেবাস পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং শিক্ষকদের পড়ানোর পরিকল্পনায় জটিলতা সৃষ্টি করবে।

একজন শিক্ষক বলেন, “ক্লাস শুরু হয়ে যাওয়ার পর সিলেবাস (higher secondary) বদলানো শিক্ষার্থীদের জন্য বিভ্রান্তিকর। এটি তাদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট করতে পারে।” শিক্ষার্থীরাও এই পরিবর্তন নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। একজন শিক্ষার্থী জানান, “আমরা ইতিমধ্যে পুরনো সিলেবাস অনুযায়ী পড়া শুরু করেছি। এখন নতুন সিলেবাসের জন্য আবার নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হবে।”

শিক্ষা সংসদের প্রতিক্রিয়া

উচ্চ মাধ্যমিক (higher secondary) শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, সংস্কৃত সিলেবাসে পরিবর্তন জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP) ২০২০-এর গাইডলাইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে এবং বিষয়টিকে আরও সমসাময়িক করতে করা হয়েছে। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “নতুন নিয়ম এবং সিলেবাস পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধার জন্য। আমরা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং স্কুলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই পরিবর্তন বাস্তবায়ন করছি।”

চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

নতুন নিয়ম এবং সিলেবাস পরিবর্তন বাস্তবায়নে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শিক্ষকদের নতুন সিলেবাস এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ঘন ঘন পরীক্ষা এবং নতুন নিয়মের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তা প্রয়োজন। পরিকাঠামো স্কুলগুলোতে সেমিস্টার পরীক্ষা ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের জন্য পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষা সংসদ এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষকদের জন্য কর্মশালা এবং স্কুলগুলোর জন্য নির্দেশিকা জারির কাজ শুরু করেছে। নতুন নিয়ম শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করবে। তবে, প্রতি বিষয়ে ৩০ শতাংশ নম্বর পাওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং সিলেবাস পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের উপর চাপ বাড়াতে পারে। শিক্ষকদের মতে, এই নিয়ম শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে সহায়ক হলেও, শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতি এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

উচ্চমাধ্যমিকে সেমিস্টার পদ্ধতি এবং নতুন নিয়ম শিক্ষাব্যবস্থায় একটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছে। তবে, সংস্কৃত সিলেবাস বদল এবং কঠোর মূল্যায়ন নিয়মের কারণে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

শিক্ষা সংসদের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা এই পরিবর্তনকে সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে এই নিয়ম কীভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে, তা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠবে।