কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে (madhya pradesh) বসবাসরত ২২৮ জন পাকিস্তানি নাগরিককে আগামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ত্যাগ করতে হবে। এই নির্দেশ জারি হয়েছে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষিতে, যেখানে গত ২২ এপ্রিল ২৬ জন, বেশিরভাগই পর্যটক, নিহত হন। এই ঘটনা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে যে, ২৭ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা সকল ভিসা বাতিল করা হবে।
সিনিয়র রাজ্য সরকারি কর্মকর্তা বলেন (madhya pradesh)
একজন সিনিয়র রাজ্য সরকারি কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশে (madhya pradesh) ২২৮ জন পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব হলো কেন্দ্রকে এই ব্যক্তিদের সম্পর্কে অবহিত করা।” তিনি আরও জানান, এই নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ এবং তাদের দেশত্যাগ নিশ্চিত করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
পহেলগাঁয়ের বদলায় পাক-অধিকৃত কাশ্মীর পুনর্দখলের দাবি বাংলাপক্ষের
পহেলগাঁও হামলা: উত্তেজনার মূল কারণ
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক ছিলেন। এই হামলা ২০১৯ সালে ধারা ৩৭০ বাতিলের পর কাশ্মীরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর একটি। ভারত সরকারের দাবি, এই হামলার পিছনে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত রয়েছে। এই ঘটনার পর ভারত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং দেশত্যাগের নির্দেশ অন্যতম।
হামলার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকল রাজ্য সরকারকে তাদের অঞ্চলে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের তথ্য প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছে। মধ্যপ্রদেশ (madhya pradesh) সরকার এই নির্দেশ মেনে কাজ শুরু করেছে। সরকারি সূত্র জানায়, যারা এখনও দেশ ত্যাগ করেননি, তাদের তথ্য আজ রাতের মধ্যে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।
ভিসা বাতিল ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
ভারত সরকার ২৪ এপ্রিল ঘোষণা করে যে, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সকল ভিসা সার্ভিস বন্ধ করা হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষিতে এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, ২৭ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য জারি করা সকল ভিসা বাতিল করা হবে।” তবে, হিন্দু পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসা (LTV) বৈধ থাকবে। মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে, পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে অনুরূপ উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করা হচ্ছে। উভয় দেশের হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনা হবে, যা ১ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তান সরকার হামলায় তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ভারতের পদক্ষেপকে ‘অযৌক্তিক’ বলে সমালোচনা করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ভিসা সার্ভিস স্থগিত করেছে। এছাড়া, ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশে ব্যবস্থা
মধ্যপ্রদেশে (madhya pradesh) পাকিস্তানি নাগরিকদের চিহ্নিত করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয় হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই নাগরিকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি সূত্র জানায়, এই ব্যক্তিরা বেশিরভাগই ব্যবসা, শিক্ষা বা পারিবারিক কারণে ভারতে অবস্থান করছিলেন। তাদের দেশত্যাগ নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে।
স্থানীয় ও জাতীয় প্রতিক্রিয়া
পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ ও শোক প্রকাশ করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের দারুল উলুম দেওবন্দ সহ বিশিষ্ট মুসলিম প্রতিষ্ঠানগুলো হামলার নিন্দা করেছে। দেওবন্দের ভাইস-চ্যান্সেলর মুফতি আবুল কাসিম নোমানি বলেন, “নিরীহ মানুষের উপর হামলা ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী। আমরা জাতীয় ঐক্য ও শান্তির পক্ষে।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হামলার পর এক জনসভায় বলেন, “আমরা সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সমর্থকদের শাস্তি দেব। ভারত কখনো সন্ত্রাসবাদের কাছে মাথা নত করবে না।” তিনি জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পহেলগাঁও হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রদেশে (madhya pradesh) থাকা ২২৮ পাকিস্তানি নাগরিকের দেশত্যাগের নির্দেশ এই সংকটের একটি অংশ। ভিসা বাতিল, কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি এবং বাণিজ্য স্থগিতকরণ দুই দেশের মধ্যে বিরোধকে আরও তীব্র করেছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কীভাবে এগোয়, তা নির্ভর করবে উভয় দেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপের উপর।