Petrol Price Today: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে ভারতের জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তেল বিপণন সংস্থাগুলো (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রল ও ডিজেলের দাম সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা এবং মুদ্রা বিনিময় হারের উপর নির্ভর করে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে ভারতে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার জ্বালানির উপর কর হ্রাস করেছিল। তবে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জ্বালানির দাম এবং এর প্রভাব নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
২৬ এপ্রিলের শহরভিত্তিক পেট্রল ও ডিজেলের দাম
তেল বিপণন সংস্থাগুলোর সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, ২৬ এপ্রিল ২০২৫-এ ভারতের প্রধান শহরগুলোতে পেট্রল ও ডিজেলের দাম নিম্নরূপ:
• নয়া দিল্লি: পেট্রল ৯৪.৭২ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮৭.৬২ টাকা/লিটার
• মুম্বাই: পেট্রল ১০৪.২১ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯২.১৫ টাকা/লিটার
• কলকাতা: পেট্রল ১০৩.৯৪ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯০.৭৬ টাকা/লিটার
• চেন্নাই: পেট্রল ১০০.৭৫ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯২.৩৪ টাকা/লিটার
• আহমেদাবাদ: পেট্রল ৯৪.৪৯ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯০.১৭ টাকা/লিটার
• বেঙ্গালুরু: পেট্রল ১০২.৯২ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮৯.০২ টাকা/লিটার
• হায়দ্রাবাদ: পেট্রল ১০৭.৪৬ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯৫.৭০ টাকা/লিটার
• জয়পুর: পেট্রল ১০৪.৭২ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯০.২১ টাকা/লিটার
• লখনউ: পেট্রল ৯৪.৬৯ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮৭.৮০ টাকা/লিটার
• পুণে: পেট্রল ১০৪.০৪ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯০.৫৭ টাকা/লিটার
• চণ্ডীগড়: পেট্রল ৯৪.৩০ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮২.৪৫ টাকা/লিটার
• ইন্দোর: পেট্রল ১০৬.৪৮ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯১.৮৮ টাকা/লিটার
• পাটনা: পেট্রল ১০৫.৫৮ টাকা/লিটার, ডিজেল ৯৩.৮০ টাকা/লিটার
• সুরাট: পেট্রল ৯৫.০০ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮৯.০০ টাকা/লিটার
• নাসিক: পেট্রল ৯৫.৫০ টাকা/লিটার, ডিজেল ৮৯.৫০ টাকা/লিটার
এই দামগুলো প্রতিদিন সকাল ৬টায় সংশোধিত হয় এবং ভারতের তেল বিপণন সংস্থাগুলো, যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসিএল), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল), এই দাম নির্ধারণ করে।
ভারত-পাক উত্তেজনার প্রভাব
পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা, বিশেষ করে পহেলগাঁওয়ে ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের হত্যাকাণ্ড এবং এলওসি-তে পাকিস্তানি সেনার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা, জ্বালানি বাজারে সম্ভাব্য অস্থিরতার আশঙ্কা তৈরি করেছে। ভারত ইন্দাস জল চুক্তি স্থগিত করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে অস্থিরতা এবং ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানির উপর প্রভাব পড়তে পারে। তবে, ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত জ্বালানির দামে কোনও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি।
ওএমসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম সম্প্রতি ৮০ ডলার/ব্যারেলের নিচে নেমেছে, যা জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে। যদিও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার কারণে ভবিষ্যতে তেল সরবরাহে বাধা বা জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়তে পারে। বিশেষ করে, সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে জ্বালানির চাহিদা বাড়বে, যা দামের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
পেট্রল ও ডিজেলের দাম নির্ধারণকারী উপাদান
ভারতের পেট্রল ও ডিজেলের দাম বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে:
• অপরিশোধিত তেলের দাম: অপরিশোধিত তেল পেট্রল ও ডিজেল উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। বিশ্বব্যাপী তেলের দামের ওঠানামা সরাসরি ভারতের জ্বালানি দামকে প্রভাবিত করে।
• মুদ্রা বিনিময় হার: ভারত তার তেলের চাহিদার প্রায় ৮০% আমদানি করে। ভারতীয় রুপির বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি জ্বালানির দাম বাড়ায়।
• কর: কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কর্তৃক আরোপিত আবগারি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) জ্বালানির দামের একটি বড় অংশ গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, মহারাষ্ট্রে ২৬% ভ্যাট এবং প্রতি লিটারে ১০.১২ টাকা অতিরিক্ত সেস আরোপিত হয়, যেখানে দিল্লিতে ৩০% ভ্যাট প্রযোজ্য।
• পরিশোধন ব্যয়: অপরিশোধিত তেলকে পেট্রল ও ডিজেলে রূপান্তরের খরচও দামের একটি উপাদান।
• চাহিদা ও সরবরাহ: জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়ে। বর্তমান উত্তেজনার কারণে সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই জ্বালানির চাহিদা বাড়তে পারে।
এসএমএসের মাধ্যমে দাম যাচাই
গ্রাহকরা সহজেই এসএমএসের মাধ্যমে তাদের শহরের সর্বশেষ পেট্রল ও ডিজেলের দাম জানতে পারেন। ইন্ডিয়ান অয়েলের গ্রাহকরা শহরের কোড সহ “RSP” লিখে ৯২২৪৯৯২২৪৯ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে পারেন। বিপিসিএল গ্রাহকরা “RSP” লিখে ৯২২৩১১২২২২ নম্বরে এবং এইচপিসিএল গ্রাহকরা “HP Price” লিখে ৯২২২২০১১২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে দাম জানতে পারেন।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
পেট্রল ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধি সরাসরি মুদ্রাস্ফীতি, পরিবহন ব্যয় এবং দৈনন্দিন পণ্যের দামের উপর প্রভাব ফেলে। বর্তমানে দাম স্থিতিশীল থাকলেও, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তেল আমদানিতে বাধা সৃষ্টি করলে বা বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়লে ভারতীয় গ্রাহকদের উপর চাপ বাড়বে। বিশেষ করে, কৃষি, পরিবহন এবং লজিস্টিক সেক্টর এই দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে অনেকে জ্বালানির দাম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “যুদ্ধ পরিস্থিতিতে জ্বালানির দাম আরও বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।” তবে, সরকার এবং তেল সংস্থাগুলো জানিয়েছে যে তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত বোঝা চাপানো এড়াতে চেষ্টা করছে।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা সত্ত্বেও, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত পেট্রল ও ডিজেলের দামে কোনও বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, ভবিষ্যতে তেল সরবরাহে বাধা বা চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এবং তেল বিপণন সংস্থাগুলোকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে হবে। গ্রাহকদের জন্য পরামর্শ হলো, নিয়মিত দাম যাচাই করা এবং জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়া।