ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (RBI) শুক্রবার জলন্ধার-ভিত্তিক ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিলের ঘোষণা করেছে। ব্যাঙ্কের পর্যাপ্ত মূলধন এবং উপার্জন সম্ভাবনার অভাব এই সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ। এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাঙ্কটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাঙ্কিং কার্যক্রম, যার মধ্যে আমানত গ্রহণ এবং আমানত ফেরত প্রদান অন্তর্ভুক্ত, পরিচালনা করতে নিষিদ্ধ হয়েছে।
এছাড়া, পাঞ্জাব সরকারের কো-অপারেটিভ সোসাইটিজের রেজিস্ট্রারকে ব্যাঙ্কটির কার্যক্রম বন্ধ করার আদেশ জারি এবং একজন লিকুইডেটর নিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এই ঘটনা ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করলেও, আমানত বীমা ও ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন (ডিআইসিজিসি) থেকে আমানতকারীদের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
লাইসেন্স বাতিলের কারণ:
RBI জানিয়েছে, ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের বর্তমান আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে এটি আমানতকারীদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিতে অক্ষম। ব্যাঙ্কের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমানতকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং জনস্বার্থের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
RBI-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ব্যাঙ্কের বর্তমান আর্থিক অবস্থার কারণে এটি তার বর্তমান আমানতকারীদের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করতে অক্ষম। ব্যাঙ্ককে আরও ব্যাঙ্কিং ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলে জনস্বার্থ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” এই কারণে, ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, এবং এটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাঙ্কিং কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমানতকারীদের জন্য সুরক্ষা:
ব্যাঙ্কের লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর, প্রতিটি আমানতকারী ডিআইসিজিসি থেকে তাঁদের আমানতের উপর সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বীমা দাবির অর্থ পাওয়ার অধিকারী হবেন। ব্যাঙ্কের জমা দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৯৭.৭৯ শতাংশ আমানতকারী তাঁদের সম্পূর্ণ আমানতের অর্থ ডিআইসিজিসি থেকে পাবেন। ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ পর্যন্ত, ডিআইসিজিসি ইতিমধ্যে মোট বীমাকৃত আমানতের ৫.৪১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এটি আমানতকারীদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্বস্তি, কারণ বেশিরভাগ আমানতকারী তাঁদের অর্থ সম্পূর্ণ ফেরত পাবেন।
ডিআইসিজিসি-এর বীমা সুবিধা ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আমানতকারীদের জন্য একটি নিরাপত্তা জাল হিসেবে কাজ করে। এই বীমা প্রকল্পের মাধ্যমে, আমানতকারীরা ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের আমানতের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকেন। ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে, এই সুবিধা বেশিরভাগ আমানতকারীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।
ব্যাঙ্কের আর্থিক দুর্বলতা:
ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে নাজুক ছিল। পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব এবং উপার্জন সম্ভাবনার ঘাটতি ব্যাঙ্কটিকে তার দায়িত্ব পালনে অক্ষম করে তুলেছিল। আরবিআই-এর মতে, ব্যাঙ্কটির বর্তমান আর্থিক অবস্থা আমানতকারীদের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য অপর্যাপ্ত। এই পরিস্থিতিতে, ব্যাঙ্কের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া আমানতকারীদের আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলত। তাই, আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং জনস্বার্থের সুরক্ষার জন্য লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
লিকুইডেশন প্রক্রিয়া:
লাইসেন্স বাতিলের পর, পাঞ্জাব সরকারের কো-অপারেটিভ সোসাইটিজের রেজিস্ট্রারকে ব্যাঙ্কটির কার্যক্রম বন্ধ করার আদেশ জারি করতে এবং একজন লিকুইডেটর নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। লিকুইডেটর ব্যাঙ্কের সম্পদ বিক্রি এবং ঋণ পরিশোধের প্রক্রিয়া পরিচালনা করবেন। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, আমানতকারীদের ডিআইসিজিসি থেকে বীমা দাবির অর্থ প্রদান নিশ্চিত করা হবে। লিকুইডেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর, ব্যাঙ্কটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
আমানতকারীদের জন্য পরামর্শ:
ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের জন্য এটি একটি উদ্বেগজনক সময় হলেও, ডিআইসিজিসি-এর বীমা সুবিধা তাঁদের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে। আমানতকারীদের উচিত তাঁদের আমানতের বিবরণ যাচাই করা এবং ডিআইসিজিসি-এর দাবি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া। যাঁদের আমানত ৫ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁরা লিকুইডেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবশিষ্ট অর্থ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। আমানতকারীদের ব্যাঙ্কের নিকটস্থ শাখা বা ডিআইসিজিসি-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। এছাড়া, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝুঁকি এড়াতে আমানতকারীদের উচিত আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্কে আমানত রাখা।
অর্থনৈতিক প্রভাব:
ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল ভারতের কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কিং খাতে আর্থিক শৃঙ্খলার গুরুত্ব তুলে ধরে। আরবিআই-এর এই পদক্ষেপ আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আস্থা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই ঘটনা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য এবং তদারকির বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, একাধিক কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের আর্থিক দুর্বলতার কারণে আরবিআই কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এই খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
এই ঘটনা জালন্ধার এবং আশেপাশের অঞ্চলের অর্থনীতিতে স্থানীয় প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ ব্যাঙ্কটি ছোট ব্যবসায়ী এবং সাধারণ গ্রাহকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছিল। তবে, ডিআইসিজিসি-এর বীমা সুবিধা এবং লিকুইডেশন প্রক্রিয়া আমানতকারীদের ক্ষতি কমাতে সহায়ক হবে।
ইম্পেরিয়াল আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল আরবিআই-এর কঠোর নিয়ন্ত্রক ভূমিকা এবং আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। ব্যাঙ্কের আর্থিক দুর্বলতা এবং আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার অক্ষমতা এই সিদ্ধান্তকে অনিবার্য করে তুলেছে। ডিআইসিজিসি-এর বীমা সুবিধার মাধ্যমে ৯৭.৭৯ শতাংশ আমানতকারী তাঁদের সম্পূর্ণ আমানত ফেরত পাবেন, যা তাঁদের জন্য স্বস্তির বিষয়।
তবে, এই ঘটনা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কিং খাতে আরও কঠোর তদারকি এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। আমানতকারীদের উচিত তাঁদের আর্থিক সিদ্ধান্তে সতর্ক থাকা এবং নিরাপদ ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, আরবিআই ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আস্থা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।