Abir Gulaal Faces Boycott: পহেলগাঁও হামলার জেরে ‘আবির গুলাল’ ছবির মুক্তি অনিশ্চিত!

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সংঘটিত মর্মান্তিক জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান এবং ভারতীয় অভিনেত্রী বাণী…

Abir Gulaal Faces Boycott

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সংঘটিত মর্মান্তিক জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানি অভিনেতা ফাওয়াদ খান এবং ভারতীয় অভিনেত্রী বাণী কাপুর অভিনীত আসন্ন চলচ্চিত্র ‘আবির গুলাল’ (Abir Gulaal) তীব্র বিতর্কের মুখে পড়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে ফাওয়াদ খানের মতো পাকিস্তানি অভিনেতার এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কারণে অনেকেই এটি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। ইন্ডিয়ান ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিরেক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইএফটিডিএ) এবং ফেডারেশন অফ ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়া সিনে এমপ্লয়িজ (এফডব্লিউআইসিই)-এর মতো প্রধান চলচ্চিত্র সংগঠনগুলি এই চলচ্চিত্রের মুক্তির বিরোধিতা করেছে, এবং সামাজিক মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের কারণে ছবিটির ভারতে মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

   

হামলার পর বিতর্কের তীব্রতা

১ এপ্রিল ছবির টিজার প্রকাশের পর থেকেই ‘আবির গুলাল’ বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর এই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। হামলায় বৈসরন মেডোতে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চারজন জঙ্গি গুলি চালায়, যার মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিকসহ ২৬ জন নিহত হন। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার প্রক্সি সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) দায় স্বীকার করেছে। এই হামলা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং ফাওয়াদ খানের মতো পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

আইএফটিডিএ-র প্রেসিডেন্ট অশোক পণ্ডিত এই চলচ্চিত্রের মুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে বলেছেন, “এই ঘটনা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের একটি কাজ। এটি প্রথমবার নয়, গত ৩০ বছর ধরে এই ধরনের হামলা চলছে। আমরা, একটি ফেডারেশন হিসেবে, হাতজোড় করে অনুরোধ করেছি যেন পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ না করা হয়। তারা শিল্পী সম্প্রদায় বা সংস্কৃতির মতো অজুহাত দেয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতিকে প্রথমে রাখতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “যদি এই ছবির নায়িকা বা নির্মাতাদের পরিবারের সদস্যরা জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হতেন, তাহলে তারা ফাওয়াদের সঙ্গে কখনোই কাজ করতেন না।”

পণ্ডিত ভারতীয় ক্রিকেটারদেরও সমালোচনা করেছেন, যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ লন্ডন এবং দুবাইয়ে গিয়ে পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে পারফর্ম করেন, ক্রিকেটেও একই কথা। বলে দিন, আমরা ক্রিকেট খেলব না! তারা বন্দুক দিয়ে আমাদের মারছে, আর আমরা ব্যাট-বল নিয়ে তাদের সঙ্গে খেলছি। জনগণের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।” তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা একটি নির্দেশ জারি করব যে, যারা পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করবে, তাদের চলচ্চিত্র শিল্প বয়কট করবে।”

একই সুরে, এফডব্লিউআইসিই-এর প্রেসিডেন্ট বিএন তিওয়ারি ঘোষণা করেছেন, “আমরা ভারতে ‘আবির গুলাল’ মুক্তি দিতে দেব না। যদি তারা ছবিটি মুক্তি দেয়, তাহলে নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এফডব্লিউআইসিই, যিনি ৩২টি ভিন্ন কারিগরি শাখার পাঁচ লক্ষেরও বেশি সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করেন, পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

সামাজিক মাধ্যমে ‘আবির গুলাল’ বয়কটের আহ্বান তীব্র হয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “সরকার যদি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে তাদের ‘আবির গুলাল’ নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি পূর্ণাঙ্গ বয়কটের যোগ্য।” আরেকজন লিখেছেন, “পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরও কি আমরা পাকিস্তানি অভিনেতাদের ভারতীয় সিনেমায় অনুমতি দেব? ‘আবির গুলাল’-এর মতো চলচ্চিত্র ভারতে তৈরি হওয়া উচিত নয়।” হ্যাশট্যাগ #BoycottAbirGulaal সামাজিক মাধ্যমে ট্রেন্ড করছে, এবং অনেকে প্রযোজকদের কাছে ভারতীয় অভিনেতা নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) এর আগেই মহারাষ্ট্রে ছবিটির মুক্তির বিরোধিতা করেছিল। তারা বলেছে, “আমরা মহারাষ্ট্রে ‘আবির গুলাল’ মুক্তি দিতে দেব না।” ২০১৬ সালের উরি হামলার পর থেকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে পাকিস্তানি শিল্পীদের উপর একটি অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এবং এই ঘটনা সেই নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরদার করেছে।

চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ

আরতি এস. বাগড়ি পরিচালিত ‘আবির গুলাল’ একটি রোমান্টিক কমেডি, যা লন্ডনের মনোরম রাস্তায় সেট করা একটি সীমান্তবর্তী প্রেমের গল্প। ছবিটিতে বাণী কাপুর, সোনি রাজদান এবং ঋদ্ধি দোগরা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এটি ৯ মে, ২০২৫-এ মুক্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে, চলচ্চিত্র সংগঠনগুলির বিরোধিতা এবং জনগণের ক্ষোভের কারণে এর থিয়েটার মুক্তি এখন অনিশ্চিত।

২০১৬ সালে ফাওয়াদ খান অভিনীত ‘এ দিল হ্যায় মুশকিল’ উরি হামলার পর অনুরূপ বিতর্কের মুখে পড়েছিল। সেই সময় প্রযোজক করণ জোহর ক্ষমা চেয়ে বলেছিলেন যে তিনি ভবিষ্যতে পাকিস্তানি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করবেন না। ‘আবির গুলাল’-এর নির্মাতারা এখনও এই বিতর্কের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেননি, তবে শিল্প বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে এই পরিস্থিতি ছবির বক্স অফিস সম্ভবতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

পর্যটন শিল্পের উপর প্রভাব

পহেলগাঁও হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে, যা অঞ্চলের অর্থনীতির একটি প্রধান স্তম্ভ। হামলার পর ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা সাত গুণ বেড়েছে, এবং ভবিষ্যতের বুকিং ৪০ শতাংশ কমে গেছে। এই ঘটনা হোটেল মালিক, হাউসবোট মালিক, গাইড এবং কারিগরদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ‘আবির গুলাল’-এর মতো চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে, কারণ এটি অঞ্চলের প্রতি নেতিবাচক ধারণাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা শুধুমাত্র কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, বরং ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের মধ্যেও তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘আবির গুলাল’-এর মতো চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে বয়কটের আহ্বান জাতীয়তাবাদী উত্তেজনা এবং শিল্পী সহযোগিতার মধ্যে জটিল দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছে। চলচ্চিত্র সংগঠনগুলির কঠোর অবস্থান এবং জনগণের ক্ষোভের মুখে এই ছবির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই ঘটনা ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প এবং কাশ্মীরের পর্যটন খাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা এবং শৈল্পিক স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

Advertisements