দামি সানগ্ল্যাস-হ্যান্ড ব্যাগেও গুনতে হবে ‘মোটা’ ট্যাক্স!

ভারত সরকার একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, ১০ লাখ টাকার উপরে মূল্যের বিলাসবহুল পণ্যের (Luxury goods) উপর এখন থেকে ১ শতাংশ হারে ট্যাক্স…

Luxury goods tax India

ভারত সরকার একটি নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে যে, ১০ লাখ টাকার উপরে মূল্যের বিলাসবহুল পণ্যের (Luxury goods) উপর এখন থেকে ১ শতাংশ হারে ট্যাক্স কালেক্টেড অ্যাট সোর্স (টিসিএস) আরোপ করা হবে। এই নতুন করের আওতায় থাকবে হাতঘড়ি, শিল্পকর্ম (প্রাচীন বস্তু, পেইন্টিং, ভাস্কর্য), সংগ্রহযোগ্য বস্তু (মুদ্রা, ডাকটিকিট), ইয়ট, রোয়িং বোট, ক্যানো, হেলিকপ্টার, সানগ্লাস, হ্যান্ডব্যাগ, পার্স, জুতো, ক্রীড়া সরঞ্জাম (যেমন গলফ কিট, স্কি পোশাক), হোম থিয়েটার সিস্টেম, রেস ক্লাবে ঘোড়দৌড়ের জন্য ঘোড়া এবং পোলোর জন্য ঘোড়া। এই বিজ্ঞপ্তি অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে।

   

টিসিএস বা ট্যাক্স কালেক্টেড অ্যাট সোর্স হলো এমন একটি কর, যা বিক্রেতাকে প্রদান করতে হয়, কিন্তু এটি ক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই পদক্ষেপ সম্পর্কে বিডিও ইন্ডিয়ার ট্যাক্স বিভাগের প্রধান মুঞ্জল আলমৌলা বলেন, “এই পদক্ষেপ কর স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং উচ্চমূল্যের ভোগব্যবস্থার প্রবণতা ট্র্যাক করার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। এটি বিশ্বব্যাপী কর নজরদারি এবং কর স্বচ্ছতার প্রবণতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

নতুন করের বিবরণ

এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যের বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়ের সময় ক্রেতাদের ১% টিসিএস দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ১৫ লাখ টাকার একটি রোলেক্স ঘড়ি কেনেন, তবে তাকে ১৫,০০০ টাকা অতিরিক্ত টিসিএস হিসেবে প্রদান করতে হবে। এই ট্যাক্স বিক্রেতা সংগ্রহ করবেন এবং সরকারের কাছে জমা দেবেন। এই করের উদ্দেশ্য হলো উচ্চমূল্যের লেনদেনের উপর নজর রাখা এবং কর ফাঁকি রোধ করা।

এই নিয়মের আওতায় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কেনা পণ্যই নয়, বরং শখের জন্য সংগ্রহ করা বস্তু, যেমন প্রাচীন শিল্পকর্ম বা সংগ্রহযোগ্য মুদ্রা, এবং এমনকি বিলাসবহুল ক্রীড়া সরঞ্জামও অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, ঘোড়দৌড় বা পোলোর মতো অভিজাত ক্রীড়ার জন্য কেনা ঘোড়ার উপরও এই কর প্রযোজ্য হবে।

অর্থনীতি ও ভোক্তাদের উপর প্রভাব

এই নতুন টিসিএস নিয়ম বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতে বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, বিশেষ করে উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে। তবে, এই অতিরিক্ত ১% করের ফলে এই পণ্যগুলির দাম কিছুটা বাড়বে, যা ক্রেতাদের ক্রয় সিদ্ধান্তের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ২০ লাখ টাকার হেলিকপ্টার কেনার সময় ক্রেতাকে ২০,০০০ টাকা টিসিএস হিসেবে দিতে হবে, যা মোট খরচ বাড়িয়ে দেবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চমূল্যের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহের একটি কৌশল। এটি আয়কর বিভাগকে বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়কারী ব্যক্তিদের আর্থিক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করবে। তবে, কিছু ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা মনে করছেন যে, এই অতিরিক্ত কর বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে চাহিদা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।

ব্যবসায়ীদের জন্য প্রভাব

বিলাসবহুল পণ্যের বিক্রেতাদের জন্য এই নতুন নিয়ম বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে আসবে। তাদের এখন ক্রেতাদের কাছ থেকে টিসিএস সংগ্রহ করতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারের কাছে জমা দিতে হবে। এটি তাদের হিসাবরক্ষণ এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে, বিডিও ইন্ডিয়ার মুঞ্জল আলমৌলা বলেন, “এই পদক্ষেপ বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং অবৈধ লেনদেনের সম্ভাবনা কমাবে।”
বিলাসবহুল পণ্য বিক্রয়কারী ব্র্যান্ড, যেমন রোলেক্স, গুচি, লুই ভিটন এবং অন্যান্য, এই নতুন নিয়মের ফলে তাদের মূল্য নির্ধারণ কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে পারে। কিছু ব্র্যান্ড এই অতিরিক্ত করের বোঝা ক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে, আবার কেউ কেউ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য এটি নিজেরাই বহন করার চেষ্টা করতে পারে।

ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ

যারা বিলাসবহুল পণ্য কিনতে চাইছেন, তাদের এই নতুন টিসিএস নিয়ম সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। এই কর প্রদানের পর ক্রেতারা তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় টিসিএস-এর পরিমাণ ক্রেডিট হিসেবে দাবি করতে পারেন, যদি তাদের আয় করযোগ্য হয়। তবে, যাদের আয় করযোগ্য সীমার নিচে, তাদের এই ট্যাক্স ফেরত পাওয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, বিলাসবহুল পণ্য ক্রয়ের আগে ক্রেতাদের বিক্রেতার কাছ থেকে টিসিএস সংগ্রহের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেওয়া উচিত। এছাড়া, পণ্যের চালানে টিসিএস-এর পরিমাণ আলাদাভাবে উল্লেখ করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কর সংক্রান্ত কোনো জটিলতা না হয়।

১০ লাখ টাকার উপরে মূল্যের বিলাসবহুল পণ্যের উপর ১% টিসিএস আরোপের এই সিদ্ধান্ত ভারতের কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ভোগব্যবস্থার উপর নজরদারি বাড়াবে। তবে, এই নিয়ম বিলাসবহুল পণ্যের বাজারে চাহিদা এবং ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কৌশলের উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা আগামী দিনে স্পষ্ট হবে। ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের এই নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

Advertisements