সৌদি থেকে ফিরেই তড়িঘড়ি বৈঠকে মোদী, সম্ভাবনা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের

Modi Holds Urgent Meeting After Return from Saudi: Possibility of Surgical Strike Looms সৌদি সফর থেকে ফিরেই জরুরি ক্যাবিনেট বৈঠকে বসেছেন নরেন্দ্র মোদী (modi)। জম্মু…

modi meeting for pahalgam attack

Modi Holds Urgent Meeting After Return from Saudi: Possibility of Surgical Strike Looms

   

সৌদি সফর থেকে ফিরেই জরুরি ক্যাবিনেট বৈঠকে বসেছেন নরেন্দ্র মোদী (modi)। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে মঙ্গলবার বৈসারান উপত্যকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই পর্যটক। এই হামলা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এই ঘটনার পর ভারত সরকার কঠোর প্রতিক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (modi) বাসভবনে বুধবার সন্ধ্যায় ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে এই হামলার প্রতিক্রিয়া এবং ভারতের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

সিসিএস বৈঠক: উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, (modi) যিনি এই হামলার জন্য সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে মঙ্গলবার রাতেই দিল্লি ফিরে এসেছেন, সিসিএস বৈঠকের নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল উপস্থিত ছিলেন। অমিত শাহ এর আগে মঙ্গলবার রাতে শ্রীনগরে পৌঁছে হামলার শিকার পরিবার ও আহতদের সঙ্গে দেখা করেন এবং বৈসরান মেডো পরিদর্শন করেন। তিনি শ্রীনগর থেকে ফিরে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে যোগ দেন।

রাজনাথ সিংয়ের কঠোর হুঁশিয়ারি (modi)

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বুধবার এক কঠোর বার্তায় বলেন, “আমি দেশবাসীকে আশ্বাস দিচ্ছি, ভারত সরকার এই ঘটনার জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত সব পদক্ষেপ নেবে। আমরা কেবল এই হামলাকারীদের ধরব না, যারা পর্দার আড়ালে থেকে এই জঘন্য কাজের ষড়যন্ত্র করেছে, তাদেরও ছাড়া হবে না।” তিনি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। এর আগে রাজনাথ সিং প্রায় আড়াই ঘণ্টার একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক করেন, যেখানে অজিত ডোভাল, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

হামলার ভয়াবহতা

মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বৈসরান মেডোতে, যা ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, সন্ত্রাসীরা স্থানীয় পুলিশের পোশাক পরে পর্যটকদের উপর অতর্কিত গুলি চালায়। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার মধ্যে দুজন বিদেশি নাগরিক (নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের) এবং দুজন স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। আহত হন আরও অন্তত ২০ জন।

পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার একটি ছায়া গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ থেকে ছয়জন সন্ত্রাসী, যাদের মধ্যে পাকিস্তানি বিদেশি সন্ত্রাসীও ছিল, হামলার কয়েকদিন আগে কিশতওয়ার থেকে অনুপ্রবেশ করে এবং কোকরনাগ হয়ে বৈসরানে পৌঁছায়। হামলার পরিকল্পনা ছিল সুচিন্তিত, এবং সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই এলাকার রেকি করেছিল।

হায়দরাবাদ ম্যাচের পূর্বে দলের মনোবল বাড়াতে বার্তা সেমিনলেন ডুঞ্জেলের

ভারতের প্রতিক্রিয়া ও অতীতের পদক্ষেপ

প্রধানমন্ত্রী মোদী (modi) হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “এই জঘন্য কাজের পিছনে যারা রয়েছে, তাদের ছাড়া হবে না। তাদের মন্দ উদ্দেশ্য কখনো সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংকল্প অটুট এবং আরও দৃঢ় হবে।” তিনি আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

ভারত অতীতে সন্ত্রাসী হামলার জবাবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৬ সালের উরি হামলা এবং ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর ভারত লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি) পেরিয়ে সন্ত্রাসী শিবিরে সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং বিমান হামলা চালিয়েছিল। পাহালগাম হামলার পর সিসিএস বৈঠকে ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। সূত্রের মতে, এই বৈঠকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামলার পর বিশ্বনেতারা ভারতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার কথা বলেছেন। পুতিন বলেন, “এই নৃশংস অপরাধের কোনো ন্যায্যতা নেই। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”

তদন্ত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তিনজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী—আসিফ শেখ, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহার স্কেচ প্রকাশ করেছে, যারা মূসা, ইউনুস এবং আসিফ নামে কোডনেম ব্যবহার করেছিল। তাদের সম্পর্কে তথ্যের জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) পাহালগামে পৌঁছে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে। দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক ডজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

এছাড়া, জম্মু অঞ্চলকে হাই অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। দিল্লি, মুম্বই, জয়পুর এবং অমৃতসরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বুধবার সকালে বারামুল্লার উড়ি সেক্টরে এলওসি বরাবর অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে সেনাবাহিনী দুজন সন্ত্রাসীকে নিহত করে।

শোক ও সমর্থন

জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের পরিবারের জন্য ১০ লাখ টাকা, গুরুতর আহতদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং আহতদের জন্য ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। অমিত শাহ শ্রীনগরের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “ভারত সন্ত্রাসের কাছে মাথা নত করবে না।”

পাহালগামের এই হামলা ভারতের পর্যটন শিল্পে গভীর আঘাত হেনেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে ভ্রমণের ৮০-৮৫% বুকিং বাতিল হয়েছে। তবে, ভারত সরকার এবং জনগণের দৃঢ় সংকল্প এই সন্ত্রাসীদের পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে।

পাহালগাম হামলা ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সিসিএস বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। অতীতের সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং বিমান হামলার মতো পদক্ষেপ ভারতের দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করে। নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে দেশ এই অন্ধকার সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।

Advertisements