নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে সুশৃঙ্খলভাবে চাকরির জগতে প্রবেশ করানোর লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার “প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ স্কিম”কে (PM Internship Scheme) আরও বিস্তৃত করতে উদ্যোগী হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত পাঁচটি কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রকল্পের অন্যতম এই স্কিমটি, যাতে দেশের তরুণদের জন্য কর্পোরেট ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এবার এই প্রকল্পকে ব্যাপক আকারে সম্প্রসারণ করতে উদ্যোগপতিদের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছে কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক।
লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লক্ষ যুবক প্রতি রাউন্ডে
বর্তমানে প্রতি রাউন্ডে যেখানে প্রায় ১ লক্ষ ইন্টার্নশিপ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রের লক্ষ্য ভবিষ্যতে প্রতি রাউন্ডে প্রায় ১৫ লক্ষ (১.৫ মিলিয়ন) যুবককে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা। এই স্কিমের মূল উদ্দেশ্য, আগামী পাঁচ বছরে দেশের শীর্ষ ৫০০ টি কর্পোরেট সংস্থার মাধ্যমে ১ কোটি (১০ মিলিয়ন) যুবক-যুবতীকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দেওয়া।
এই শীর্ষ ৫০০ টি সংস্থা নির্ধারিত হয়েছে তাদের গত তিন বছরের গড় কর্পোরেট সামাজিক দায়িত্ব (CSR) খরচের ভিত্তিতে। এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিতে হলেও, সরকারের তরফ থেকে যুব সম্প্রদায় এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে একযোগে যুক্ত করার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
ইন্টার্নদের জন্য ভাতা এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা
এই প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী সংস্থাগুলিকে কেন্দ্র সরকার প্রতি ইন্টার্ন প্রতি মাসে ৪,৫০০ টাকা ভাতা প্রদান করবে। পাশাপাশি সংস্থাকেও প্রতি ইন্টার্নের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ, এক একজন ইন্টার্ন প্রতি মাসে মোট ৫,০০০ টাকা পাবেন।
গত মার্চ মাসে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এই প্রকল্পের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপও লঞ্চ করেন। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রার্থীরা আধার ফেস অথেনটিকেশনের মাধ্যমে সহজেই নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। থাকছে ব্যক্তিগত ড্যাশবোর্ড, রিয়েল টাইম আপডেট, ও সমর্থন টিমের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধাও।
তৃতীয় দফার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলছে
এই প্রকল্প বর্তমানে পরীক্ষামূলক পর্যায়ে চলছে। ইতিমধ্যেই তৃতীয় দফার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তা চালু থাকবে। এই রাউন্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় বহু কর্পোরেট সংস্থা প্রায় ১ লক্ষ ইন্টার্নশিপের অফার দিয়েছে।
নতুন পরামর্শ ও সুপারিশ
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলমান আলোচনার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে। যেমন, এই প্রকল্পের আওতা শুধু শীর্ষ ৫০০ সংস্থার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আরও অনেক সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে। পাশাপাশি অনেক প্রার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা নিজের জেলা বা রাজ্যের মধ্যে থেকেই ইন্টার্নশিপ করতে ইচ্ছুক, কারণ বাইরে গেলে থাকার খরচ বাড়ে এবং তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়।
এই পরিস্থিতিতে, স্থানীয় স্তরের আরও সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে, হোম টাউনের কাছাকাছি ইন্টার্নশিপের সুযোগ বাড়ানো যায় কি না, তাও কেন্দ্র ভাবনাচিন্তা করছে।
কেন্দ্রের লক্ষ্য – ইন্টার্ন থেকে স্থায়ী কর্মী
এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র অস্থায়ী প্রশিক্ষণ নয়, বরং এই ইন্টার্নশিপকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতে যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীদের স্থায়ী চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া। কর্মদক্ষতা বাড়াতে এবং ভারতের যুব সমাজকে কর্পোরেট সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত করতে এই স্কিম একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দেশে যুবক-যুবতির সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাকরির সুযোগ বাড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে PM Internship Scheme-এর মতো উদ্যোগ দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে। সরকারের সদিচ্ছা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলির সহযোগিতা মিললে, এই প্রকল্প ভবিষ্যতের একটি মাইলস্টোন হতে পারে। এখন দেখার, এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়িত হয়।