২০২৫-এ আয়কর রিটার্নে নতুন নিয়মে চমক

২০২৫ সালের আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) দাখিলের প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। এবছর করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, যা প্রতিটি…

Income Tax Return 2025: New Rule Compares This Year's ITR with Last Year's

২০২৫ সালের আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) দাখিলের প্রক্রিয়া খুব শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে। এবছর করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে, যা প্রতিটি রিটার্ন ফাইলারের জানা অত্যন্ত জরুরি। ২০২৫ সালের ফিনান্স অ্যাক্ট অনুযায়ী, এবারের রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় কর দফতর সেটি গত বছরের রিটার্নের সঙ্গে তুলনা করবে। সরকারের এই পদক্ষেপ কর ফাঁকি রোধ, আয় এবং ছাড় সংক্রান্ত তথ্যের স্বচ্ছতা এবং করদানের ক্ষেত্রে অধিকতর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

অ্যাকুইল’এর ট্যাক্স এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাজর্ষি দাসগুপ্ত বলেন, “আয়কর আইনের ধারা ১৪৩-এ সংশোধন এনে সরকার এই সুবিধা চালু করেছে যাতে কোনো করদাতার চলতি বছরের রিটার্ন এবং গত বছরের রিটার্নের মধ্যে অসঙ্গতি থাকলে সেটি রিটার্ন প্রসেসিংয়ের প্রাথমিক ধাপেই ধরা পড়ে। এর ফলে হঠাৎ আয়, ছাড়, বা কর প্রদানের পরিমাণে বড় রকমের পরিবর্তন দেখা গেলে তা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।”

   

ধারা ১৪৩ কী?

আয়কর আইনের ধারা ১৪৩ অনুযায়ী রিটার্ন ফাইলের সারাংশমূলক যাচাই (summary assessment) করা হয়, যেখানে মূলত অঙ্কগত সঠিকতা এবং রিটার্নে দেওয়া তথ্যের অভ্যন্তরীণ সামঞ্জস্য যাচাই করা হয়। আগে এই ধরণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ শুধুমাত্র বিস্তারিত স্ক্রুটিনির সময় করা হত। এখন, রুটিন প্রসেসিংয়ের সময়ও আগের বছরের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করে সিস্টেম থেকেই অটোমেটিক চেকিং হবে।

দাসগুপ্ত আরও জানান, “এই পরিবর্তনের ফলে করদাতারা রিটার্ন ফাইল করার সময় আরও সতর্ক হবেন এবং আগের বছরের তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সঠিক তথ্য জমা দেবেন। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত নোটিশ বা জরিমানার সম্ভাবনা অনেকটাই কমবে, বিশেষ করে যদি কোনো ভুল সময়মতো সংশোধন করে ফেলা যায়।”

করদাতাদের কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত?

কর বিশেষজ্ঞদের মতে, এবছরের রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় নিচের বিষয়গুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত:

  1. সমস্ত আয় সঠিকভাবে দেখান: চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং, সম্পত্তি ভাড়া, পুঁজি লাভ – সব রকম আয়ের হিসাব প্রমাণপত্র সহ (যেমন ফর্ম ১৬, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, ভাড়া চুক্তিপত্র) রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করুন।
  2. নতুন বা বেশি ছাড় দেখালে প্রমাণ রাখুন: যদি আপনি এবার নতুন কোনও ছাড়ের দাবি করেন বা ছাড়ের অঙ্ক হঠাৎ অনেক বেড়ে যায়, তাহলে তার উপযুক্ত নথি থাকা জরুরি। না হলে তা যাচাইয়ের আওতায় আসতে পারে।
  3. TDS তথ্য মিলিয়ে দেখুন: ফর্ম ২৬AS এবং AIS অনুযায়ী আপনার উপর কতটা টিডিএস কাটা হয়েছে, তা রিটার্নে সঠিকভাবে দেখানো হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
  4. উচ্চ-মূল্যের লেনদেন স্বচ্ছভাবে জানানো উচিত: বড় অঙ্কের নগদ জমা, মিউচুয়াল ফান্ড কেনা বা সম্পত্তি কেনা-বেচার মতো তথ্য আগের বছরের রিটার্নে না থাকলেও এবছর থাকলে, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিন।
  5. পূর্ববর্তী বছরের ক্ষতি বহন করতে চাইলে তা ঠিকভাবে রিপোর্ট করুন: ব্যবসায় বা মূলধনী ক্ষতি থাকলে এবং তা বহন করতে চাইলে, সেটা আগের রিটার্নে রিপোর্ট করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
  6. পুরনো ও নতুন কর ব্যবস্থা মিশিয়ে ব্যবহার নয়: যদি আপনি নতুন কর ব্যবস্থায় চলে এসে থাকেন, তাহলে পুরনো ব্যবস্থার ছাড় দাবি করা যাবে না। এতে রিটার্ন ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
  7. আয়ের হঠাৎ পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিন: যদি আপনার আয় হঠাৎ খুব বেড়ে যায় বা কমে যায় (যেমন চাকরি হারানো, উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়া, ক্যারিয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে), তাহলে তার সঠিক ব্যাখ্যা দিন রিটার্নে বা প্রয়োজনীয় নথি যুক্ত করুন।

কর দফতরের উদ্দেশ্য কী?

এই নতুন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হল, ডেটা-বেসড যাচাইয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি রোধ এবং স্বচ্ছতা আনয়ন। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হল – একদিকে যেমন করদাতাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, অন্যদিকে তেমনি সিস্টেম-চালিত যাচাইয়ের মাধ্যমে ফাইলিং প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করা।

কর বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, “রিটার্ন ফাইল করার সময় আগের বছরের তথ্য মাথায় রেখে এবং সব নথি প্রস্তুত রেখে ফাইল করলে কোনও সমস্যা হবে না। বরং, এই নতুন নিয়ম কর ফাইলিং প্রক্রিয়াকে আরও নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী করে তুলবে।”

করদাতাদের কাছে পরামর্শ – তথ্য গোপন বা ভুল না করে স্বচ্ছ ও সঠিক তথ্য দিয়ে রিটার্ন ফাইল করুন। কারণ এবারে শুধুমাত্র আপনার রিটার্ন নয়, তার পেছনের ইতিহাসও আয়কর দফতরের নজরে আসছে।

২০২৫ সালের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতাদের জন্য সবচেয়ে বড় বার্তা হল — সতর্কতা ও স্বচ্ছতা। নতুন নিয়মের ফলে আয়কর দফতর আগেভাগেই রিটার্ন যাচাই করতে পারবে এবং প্রাথমিক স্তরেই ত্রুটি ধরতে পারবে। ফলে রিটার্ন ফাইল করার আগে একবার আগের বছরের রিটার্ন দেখে নেওয়া এবং সব প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র প্রস্তুত রাখা এই বছরে করদাতাদের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা হতে চলেছে।

আপনার যদি এই নিয়ম নিয়ে আরও প্রশ্ন থাকে বা কোনও নির্দিষ্ট পরামর্শ প্রয়োজন হয়, তাহলে একজন অভিজ্ঞ ট্যাক্স কনসালটেন্টের সাহায্য নিতে পারেন।

Advertisements