Abandoned and Visually Impaired, Mala Papalkar Triumphs Over Adversity to Become a Government Officer
জীবনের প্রতিকূলতাকে জয় করে এক অসাধারণ গল্পের নায়িকা হয়ে উঠেছেন মালা পাপলকর (mala papalkar)। পঁচিশ বছর আগে মহারাষ্ট্রের জলগাঁও রেলস্টেশনের একটি আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া এই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারী মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশন (এমপিএসসি) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করতে প্রস্তুত। মালা এখন নাগপুর কালেক্টরেটে রাজস্ব সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এই তরুণী অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে।
মাত্র ২৬ বছর বয়সে মালা (mala papalkar) তাঁর নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং শীঘ্রই নাগপুর কালেক্টরেটে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাঁর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত সমাজসেবী শঙ্কর বাবা পাপলকরের অবদান।
শঙ্কর বাবা
শঙ্কর বাবা কেবল মালাকে তাঁর নামই দেননি, বরং তাঁকে অপরিসীম ভালোবাসা ও যত্নে বড় করে তুলেছেন। মালা (mala papalkar) নিজেই বলেছেন, “শঙ্কর বাবা আমার জন্য শুধু একজন পিতৃতুল্য ব্যক্তিই নন, তিনি
আমার শক্তির উৎস। তিনি শত শত অনাথ ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আশা ও আশ্রয়ের প্রতীক।”
মালার জীবনের শুরু (mala papalkar)
মালার (mala papalkar) জীবনের শুরুটা ছিল অত্যন্ত কঠিন। জন্মের পরই তাকে জলগাঁও রেলস্টেশনের একটি আবর্জনার স্তূপে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে আমরাভতির একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
শঙ্কর বাবা পাপলকরের তত্ত্বাবধানে তিনি এই কেন্দ্রে বড় হন। শঙ্কর বাবা, যিনি গত জানুয়ারিতে সমাজসেবার জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন, তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন প্রতিবন্ধী, অনাথ ও নিঃস্ব শিশুদের কল্যাণে। ৮১ বছর বয়সী এই সমাজসেবী আমরাভতি জেলার ওয়াজ্জারে একটি আশ্রম পরিচালনা করেন, যেখানে ১২৩ জনেরও বেশি অনাথ ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশু বসবাস করেন।
মালা (mala papalkar) তাঁর শৈশব থেকেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতা তাঁর জন্য শিক্ষা ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। শঙ্কর বাবার সমর্থন এবং পুনর্বাসন কেন্দ্রের সহায়তায় তিনি নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যান। তাঁর লক্ষ্য ছিল মহারাষ্ট্র পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ক্লার্ক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। অসীম ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি গত বছরের মে মাসে এই পরীক্ষায় সফল হন। এই সাফল্য তাঁকে রাজস্ব সহকারী পদে নিয়োগের পথ প্রশস্ত করে।
মালা এক সাক্ষাৎকারে বলেন
মালা সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমার এই সাফল্য শঙ্কর বাবার জন্য উৎসর্গ করছি। তিনি আমাকে শুধু জীবনই দেননি, আমার স্বপ্ন পূরণের পথও দেখিয়েছেন। তাঁর আশ্রম আমার মতো অনেক শিশুর জন্য একটি পরিবার।” তিনি আরও বলেন, “আমি চাই আমার গল্প অন্যদের অনুপ্রাণিত করুক। প্রতিবন্ধিতা বা দারিদ্র্য কখনো স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যদি আমরা হাল না ছাড়ি।”
রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে তোলপাড় শুরু
শঙ্কর বাবা পাপলকরের আশ্রম
শঙ্কর বাবা পাপলকরের আশ্রমটি কেবল একটি আশ্রয়কেন্দ্র নয়, এটি শত শত শিশুর জন্য নতুন জীবনের প্রতীক। এই আশ্রমে শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া হয়। শঙ্কর বাবার দীর্ঘদিনের সমাজসেবার কাজ তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মশ্রী-র যোগ্য প্রার্থী করে তুলেছে। পদ্মশ্রী পুরস্কার, যা শিল্প, সমাজসেবা, শিক্ষা, চিকিৎসা, সাহিত্য, খেলাধুলা এবং সরকারি পরিষেবা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রদান করা হয়, তিনটি বিভাগে বিভক্ত: পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী।
মালার সাফল্য
মালার সাফল্য কেবল তাঁর ব্যক্তিগত জয় নয়, এটি সমাজসেবা ও সুযোগের রূপান্তরকারী শক্তির প্রতিফলন। তাঁর এই অর্জন প্রতিবন্ধী ও অনাথ শিশুদের জন্য শিক্ষা ও পুনর্বাসনের গুরুত্ব তুলে ধরে। শঙ্কর বাবার আশ্রম এমন একটি আলোকবর্তিকা, যেখানে মালার মতো শিশুরা বড় স্বপ্ন দেখতে এবং তা পূরণ করতে শিখেছে। পদ্মশ্রী পুরস্কারের মাধ্যমে শঙ্কর বাবার অবদানের স্বীকৃতি তাঁর জীবনভর সমাজসেবার প্রতি তাঁর নিষ্ঠার প্রমাণ।
নাগপুর কালেক্টরেটে নতুন দায়িত্ব
নাগপুর কালেক্টরেটে নতুন দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন মালা। তিনি কেবল একজন নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাই নন, তিনি স্থিতিস্থাপকতা ও সম্ভাবনার জীবন্ত প্রতীক। তাঁর গল্প ভারতজুড়ে অগণিত মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সমান সুযোগের গুরুত্ব এবং শঙ্কর বাবার মতো সমাজসেবীদের রূপান্তরকারী ভূমিকার উপর জোর দেয়।
মালার এই অর্জন ভারতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি ও সুযোগের প্রয়োজনীয়তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক সমর্থন ও সম্পদ পেলে প্রত্যেকের মধ্যেই সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে, তাদের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন। নতুন এই অধ্যায়ে পা রাখার সময় মালা পাপলকরের গল্প অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে চলবে এবং অন্যদের তাঁর পথ অনুসরণের পথ দেখাবে।
মালার এই যাত্রা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সংকল্প, সমর্থন এবং সুযোগের মাধ্যমে কোনো বাধাই অতিক্রম করা অসম্ভব নয়। তাঁর গল্প কেবল একটি ব্যক্তিগত বিজয় নয়, এটি সামাজিক পরিবর্তনের একটি আহ্বান। শঙ্কর বাবার মতো ব্যক্তিরা এবং মালার মতো স্বপ্নদ্রষ্টারা প্রমাণ করে যে, মানবতার প্রতি বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন বদলে দেওয়া সম্ভব।