কর বিবাদ মেটাতে CBDT-র ঘোষিত চূড়ান্ত সময়সীমা জানুন!

কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT) ঘোষণা করেছে যে ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম (Vivad se Vishwas Scheme), ২০২৪-এর অধীনে ট্যাক্স বকেয়া সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র দাখিলের…

Vivad Se Vishwas Scheme

কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ড (CBDT) ঘোষণা করেছে যে ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম (Vivad se Vishwas Scheme), ২০২৪-এর অধীনে ট্যাক্স বকেয়া সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র দাখিলের শেষ তারিখ হল ৩০ এপ্রিল, ২০২৫। এই স্কিমের মাধ্যমে করদাতারা তাদের বকেয়া আপিল, রিট এবং পিটিশনগুলি নিষ্পত্তি করার সুযোগ পাবেন, যা সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট সহ বিভিন্ন আপিল কর্তৃপক্ষের সামনে বিচারাধীন রয়েছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল আয়কর সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কমানো এবং করদাতাদের জন্য একটি সহজ ও কার্যকর সমাধান প্রদান করা।

   

ইনকাম ট্যাক্স ইন্ডিয়ার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “সিবিডিটি ৩০ এপ্রিল, ২০২৫-কে শেষ তারিখ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪-এর অধীনে ট্যাক্স বকেয়া সংক্রান্ত ঘোষণাপত্র দাখিল করতে হবে।” এই ঘোষণাপত্র ফিনান্স (নং ২) অ্যাক্ট, ২০২৪-এর ৯০ নম্বর ধারা অনুসারে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

Vivad se Vishwas Scheme: একটি পরিচিতি

ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪ (ভিএসভি ২.০) গত ১ অক্টোবর, ২০২৪ থেকে কার্যকর হয়েছে। এটি ২০২০ সালে চালু হওয়া প্রথম বিবাদ সে বিশ্বাস আইনের (ভিএসভি ১.০) দ্বিতীয় সংস্করণ। প্রথম সংস্করণটি ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ পর্যন্ত বিচারাধীন আপিলগুলির জন্য চালু করা হয়েছিল এবং এটি করদাতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিল। সেই স্কিমের মাধ্যমে সরকার উল্লেখযোগ্য রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং অনেক মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল।

ভিএসভি ২.০-এর উদ্দেশ্যও একই রকম—বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমানো এবং করদাতাদের জন্য একটি সহজ পথ প্রশস্ত করা। বিশেষ করে কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স (আপিল) [সিআইটি(এ)] স্তরে বিপুল সংখ্যক আপিল জমা পড়ায় এই স্কিমের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি অনুভূত হয়েছে। সরকারের ব্যাখ্যামূলক স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, “২০২০ সালের বিবাদ সে বিশ্বাস আইনের সাফল্য এবং সিআইটি(এ) স্তরে আপিলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার কথা বিবেচনা করে, ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিতর্কিত বিষয়গুলির নিষ্পত্তির জন্য একটি কার্যকর প্রক্রিয়া প্রদান করা হবে, যা মামলার সংখ্যা কমাবে এবং সরকারের ব্যয়ও হ্রাস পাবে।”

স্কিমের প্রধান বৈশিষ্ট্য

এই স্কিমের অধীনে, করদাতারা ২২ জুলাই, ২০২৪ পর্যন্ত বিচারাধীন আপিল, রিট এবং পিটিশন নিষ্পত্তি করতে পারবেন। এটি সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (আইটিএটি) এবং সিআইটি(এ) স্তরে বিচারাধীন মামলাগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। স্কিমটি করদাতাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করে, যার মাধ্যমে তারা দীর্ঘদিন ধরে চলমান মামলা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং সরকারের সঙ্গে তাদের বকেয়া কর নিষ্পত্তি করতে পারেন।

এই স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য করদাতাদের নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণাপত্র দাখিল করতে হবে। ঘোষণাপত্রে বকেয়া করের পরিমাণ, সুদ এবং জরিমানা (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে। স্কিমের শর্ত অনুযায়ী, করদাতাদের নির্দিষ্ট হারে কর পরিশোধ করতে হবে, যা সাধারণত মূল বকেয়া করের চেয়ে কম হয়। এছাড়াও, নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সুদ এবং জরিমানা মওকুফ করা হতে পারে, যা করদাতাদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

কেন এই স্কিম গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের আয়কর বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে বিপুল সংখ্যক মামলার চাপের মুখে রয়েছে। এই মামলাগুলির মধ্যে অনেকগুলি দীর্ঘ সময় ধরে বিচারাধীন থাকে, যা করদাতা এবং সরকার উভয়ের জন্যই সময় এবং সম্পদের অপচয় ঘটায়। বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিমের মতো উদ্যোগ এই সমস্যার সমাধানে একটি কার্যকর পদক্ষেপ। এটি করদাতাদের জন্য মামলা নিষ্পত্তির একটি সহজ এবং কম ব্যয়বহুল উপায় প্রদান করে, যখন সরকার বকেয়া কর আদায় করতে পারে এবং মামলার ভার কমাতে পারে।

২০২০ সালের প্রথম স্কিমের সাফল্য এই ধরনের উদ্যোগের কার্যকারিতা প্রমাণ করে। সেই স্কিমের অধীনে লক্ষাধিক করদাতা তাদের মামলা নিষ্পত্তি করেছিলেন, এবং সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। ভিএসভি ২.০-এর ক্ষেত্রেও একই ধরনের ফলাফল আশা করা হচ্ছে।

কীভাবে অংশগ্রহণ করবেন?

এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক করদাতাদের নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
১. ঘোষণাপত্র দাখিল: নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ঘোষণাপত্র তৈরি করে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। এটি অনলাইনে বা অফলাইনে করা যেতে পারে।
২. বকেয়া পরিমাণ নির্ধারণ: ঘোষণাপত্রে বকেয়া কর, সুদ এবং জরিমানার পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। স্কিমের নিয়ম অনুযায়ী প্রদেয় পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
৩. পরিশোধ: ঘোষণাপত্র গৃহীত হলে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রদেয় পরিমাণ পরিশোধ করতে হবে।
৪. মামলা প্রত্যাহার: পরিশোধ সম্পন্ন হলে, সম্পর্কিত আপিল বা মামলা প্রত্যাহার করা হবে।

ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪ করদাতাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। এটি তাদের দীর্ঘদিনের মামলা থেকে মুক্তি দেবে এবং সরকারের সঙ্গে বকেয়া কর নিষ্পত্তির একটি সহজ পথ প্রদান করবে। ৩০ এপ্রিল, ২০২৫-এর মধ্যে ঘোষণাপত্র দাখিল করার জন্য করদাতাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এই স্কিমের সাফল্য নির্ভর করবে করদাতাদের অংশগ্রহণ এবং সরকারের কার্যকর বাস্তবায়নের উপর।

এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের কর ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই, যেসব করদাতারা এখনও তাদের বকেয়া কর নিয়ে মামলায় জড়িত, তাদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন এবং এই স্কিমের সুবিধা গ্রহণ করুন।

Advertisements