ভারতের রিয়েল এস্টেট খাত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (এপ্রিল-ডিসেম্বর) বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের (Alternate Investment Funds) মাধ্যমে সর্বাধিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। অ্যানারক রিসার্চের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, এই সময়ে রিয়েল এস্টেট খাতে ৭৩,৯০৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, যা মোট ৫,০৬,১৯৬ কোটি টাকার এআইএফ বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ। এই উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রিয়েল এস্টেট খাতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব এবং বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়।
বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল (এআইএফ) হল ব্যক্তিগতভাবে সংগৃহীত তহবিল, যা ঐতিহ্যবাহী সম্পদের পরিবর্তে প্রাইভেট ইকুইটি, হেজ ফান্ড এবং রিয়েল এস্টেটের মতো অপ্রচলিত সম্পদে বিনিয়োগ করে। এই তহবিলগুলো উচ্চ ঝুঁকি এবং উচ্চ পুরস্কারের সুযোগ প্রদান করে, যা অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত। এআইএফ-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ শুধু রিয়েল এস্টেট নয়, বরং আইটি/আইটিইএস, আর্থিক পরিষেবা, এনবিএফসি, ব্যাঙ্ক, ফার্মাসিউটিক্যাল, এফএমসিজি, খুচরা, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং অন্যান্য খাতেও প্রবাহিত হয়েছে। তবে, রিয়েল এস্টেট এই সমস্ত খাতের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে।
রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের বৃদ্ধি
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ অর্থবছরের শেষে রিয়েল এস্টেটে এআইএফ-এর মাধ্যমে বিনিয়োগ ছিল ৬৮,৫৪০ কোটি টাকা, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩,৯০৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির গতি টেকসই বলে মনে করা হচ্ছে এবং আগামী দিনে এটি আরও বাড়তে পারে। রিয়েল এস্টেট খাতে এই বিনিয়োগের বৃদ্ধি ঐতিহ্যবাহী অর্থায়নের সীমাবদ্ধতার মধ্যে এআইএফ-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ইঙ্গিত দেয়।
অ্যানারক গ্রুপের আঞ্চলিক পরিচালক এবং গবেষণা প্রধান প্রশান্ত ঠাকুর বলেন, “ঐতিহ্যবাহী অর্থায়নের উৎসগুলোর ক্রমবর্ধমান সীমাবদ্ধতার মধ্যে, এআইএফ রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের বিভিন্ন পর্যায়ে মূলধনের ঘাটতি পূরণের জন্য একটি চটজলদি এবং উদ্ভাবনী অর্থায়ন ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করছে। দেশীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের থেকে মূলধন সংগ্রহ করার কারণে, এআইএফ একটি টেকসই এবং সম্প্রসারণযোগ্য অর্থায়ন ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে।” তিনি আরও জানান, মিশ্র অর্থায়ন মডেল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং সুবিন্যস্ত নিয়ন্ত্রক কাঠামোর গ্রহণ এআইএফ-এর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এআইএফ-এর বৃদ্ধি এবং বাজারের প্রসার
গত এক দশকে এআইএফ-এর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাজারে মাত্র ৪২টি এআইএফ ছিল, যা ২০২৫ সালের ৫ মার্চ পর্যন্ত ১,৫২৪-এ পৌঁছেছে—অর্থাৎ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। এছাড়া, ২০১৯ সাল থেকে এআইএফ-এর মাধ্যমে সংগৃহীত প্রতিশ্রুতি পাঁচ গুণ বেড়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এআইএফ-এর মাধ্যমে সংগৃহীত প্রতিশ্রুতির বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হার (সিএজিআর) ছিল ৮৩.৪ শতাংশ, যা এই খাতের দ্রুত প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
এই বৃদ্ধির পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে ক্যাটাগরি II এআইএফ, যা গত পাঁচ অর্থবছরে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিশ্রুতি সংগ্রহের জন্য দায়ী। দেশীয় বিনিয়োগকারীরা এআইএফ তহবিল সংগ্রহে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও, ক্যাটাগরি II এআইএফ-এ দেশীয় এবং বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের (এফপিআই) অংশগ্রহণ প্রায় সমান। এই ভারসাম্য বিকল্প বিনিয়োগের প্রতি বিশ্বব্যাপী আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায়।
অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ
রিয়েল এস্টেট ছাড়াও, এআইএফ-এর মাধ্যমে অন্যান্য খাতেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রবাহিত হয়েছে। আইটি/আইটিইএস খাতে ৩০,২৭৯ কোটি টাকা, আর্থিক পরিষেবায় ২৬,৮০৭ কোটি টাকা, এনবিএফসি-তে ২১,৯২৯ কোটি টাকা, ব্যাঙ্কগুলোতে ২১,২৭৩ কোটি টাকা, ফার্মাসিউটিক্যালে ১৮,৩০৯ কোটি টাকা, এফএমসিজি-তে ১২,৭৪৩ কোটি টাকা, খুচরায় ১১,৫৫০ কোটি টাকা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে ১১,৪৩৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। অন্যান্য খাতে মোট ২,৭৭,৯৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এই বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ ভারতের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে এআইএফ-এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রমাণ দেয়।
এআইএফ-এর ভূমিকা এবং ভবিষ্যৎ
এআইএফ-এর উত্থান ভারতের রিয়েল এস্টেট খাতের অর্থায়নের ধরনকে আমূল পরিবর্তন করেছে। ঐতিহ্যবাহী ব্যাঙ্ক ঋণ এবং অন্যান্য অর্থায়নের উৎসের সীমাবদ্ধতার মধ্যে, এআইএফ প্রকল্পগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জীবনরেখা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে, সাশ্রয়ী এবং মধ্যম-আয়ের আবাসনের জন্য বিশেষ উইন্ডো (SWAMIH) ফান্ড, যা ভারতের প্রধান এআইএফ হিসেবে পরিচিত, ৩৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি তারল্য সহায়তা প্রদান করে বেশ কয়েকটি আটকে থাকা প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
অ্যানারকের চেয়ারম্যান অনুজ পুরি জানান, “এআইএফ-এর মাধ্যমে বিনিয়োগের এই বৃদ্ধি ভারতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং বিকল্প বিনিয়োগ কৌশলের প্রতি ক্রমবর্ধমান আকর্ষণের প্রতিফলন।” তিনি আরও বলেন, গত ছয় বছরে এআইএফ-এর মাধ্যমে সংগৃহীত প্রতিশ্রুতি ৩৪০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৯ সালে ২,৮২,১৪৮ কোটি টাকা থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে ১২,৪৩,০৮৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল ভারতের অর্থনীতিতে, বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট খাতে, একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৫,০৬,১৯৬ কোটি টাকার বিনিয়োগের মধ্যে রিয়েল এস্টেটের ৭৩,৯০৩ কোটি টাকার অংশ এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার প্রমাণ দেয়। এআইএফ-এর দ্রুত প্রসার, ক্যাটাগরি II তহবিলের প্রভাব এবং দেশীয়-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সমান অংশগ্রহণ ভারতের বিকল্প বিনিয়োগের ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করছে। আগামী দিনে, প্রযুক্তি-চালিত ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্কারের মাধ্যমে এআইএফ-এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই তহবিলগুলো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে, এবং রিয়েল এস্টেট খাত এই প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।