Indian Beaches for Summer: গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের তাপ আর ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তির খোঁজ। যারা শান্তি, প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং ভিড় থেকে দূরে একটি নিরিবিলি ছুটি কাটাতে চান, তাদের জন্য ভারতের সমুদ্র সৈকতগুলো একটি আদর্শ গন্তব্য। ভারতের উপকূলরেখা বৈচিত্র্যে ভরা, যেখানে ব্যস্ত গোয়ার পার্টি সৈকত থেকে শুরু করে নির্জন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া সৈকত—সবই রয়েছে। এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করব ভারতের পাঁচটি এমন সমুদ্র সৈকত নিয়ে, যেগুলো গ্রীষ্মকালীন শান্ত ছুটির জন্য নিখুঁত। এর মধ্যে রয়েছে গোকর্ণ, আগোন্দা (গোয়া), রাধানগর সৈকত (আন্দামান), কোভালাম (কেরালা) এবং মান্দারমণি (পশ্চিমবঙ্গ)।
১. গোকর্ণ, কর্ণাটক
গোকর্ণকে প্রায়ই ‘মিনি গোয়া’ বলা হয়, তবে এটি গোয়ার তুলনায় অনেক বেশি শান্ত এবং আধ্যাত্মিক। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এই সৈকত শহরটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত পরিবেশের জন্য বিখ্যাত। ওম বিচ, কুডল বিচ এবং হাফ মুন বিচ এখানকার প্রধান আকর্ষণ। এই সৈকতগুলো ঘন সবুজ পাহাড়, নীল জল এবং সোনালি বালির মিশ্রণে অপূর্ব। গোকর্ণের মহাবলেশ্বর মন্দির পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়, যা এই জায়গাটিকে একটি ধর্মীয় ও প্রকৃতিপ্রেমী গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। গ্রীষ্মকালে এখানে ভিড় কম থাকে, তাই যোগব্যায়াম, ধ্যান বা শান্তভাবে সমুদ্রের ধারে বই পড়ার জন্য এটি আদর্শ। স্থানীয় শ্যাকগুলোতে সুস্বাদু সামুদ্রিক খাবার উপভোগ করা যায়। গোকর্ণে পৌঁছানোর জন্য নিকটতম রেলস্টেশন গোকর্ণ রোড, এবং বাসে বা গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়।
২. আগোন্দা, গোয়া
গোয়া মানেই পার্টি এবং ভিড়ের কথা মনে হলেও, দক্ষিণ গোয়ার আগোন্দা সৈকত একটি শান্ত এবং নিরিবিলি গন্তব্য। এই সৈকতটি তার বিশাল বালির প্রসার, পরিষ্কার জল এবং নির্মল পরিবেশের জন্য পরিচিত। আগোন্দায় ভিড় কম, এবং এটি তাদের জন্য আদর্শ যারা প্রকৃতির মাঝে শান্তি খুঁজছেন। এখানে সাঁতার কাটা, সানবাথিং বা সৈকতে হাঁটার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ। আগোন্দা সৈকত কচ্ছপের বাসা বাঁধার জন্যও বিখ্যাত, তাই প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি একটি বিশেষ আকর্ষণ। এখানকার শ্যাক এবং ছোট রিসর্টগুলো সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করে। গ্রীষ্মকালে আগোন্দায় পর্যটক কম থাকায় শান্ত ছুটির জন্য এটি নিখুঁত। নিকটতম বিমানবন্দর দাবোলিম, এবং সেখান থেকে ট্যাক্সি বা বাসে আগোন্দায় পৌঁছানো যায়।
৩. রাধানগর সৈকত, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ
আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপে অবস্থিত রাধানগর সৈকত বিশ্বের অন্যতম সুন্দর সৈকত হিসেবে পরিচিত। এশিয়ার সেরা সৈকত হিসেবে স্বীকৃত এই সৈকত তার সাদা বালি, ফিরোজা রঙের জল এবং ঘন সবুজ জঙ্গলের পটভূমির জন্য বিখ্যাত। গ্রীষ্মকালে এখানে ভিড় কম থাকে, তাই শান্তিপ্রিয় পর্যটকদের জন্য এটি একটি স্বর্গ। রাধানগর সৈকতে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব, যা ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং এবং সাঁতারের জন্য এটি উপযুক্ত। এখানে কোনো জলক্রীড়া বা জমজমাট পার্টি নেই, তাই শান্তি ও প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করা যায়। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ফেরি বা স্পিডবোটে হ্যাভলক পৌঁছে স্কুটার বা অটোরিকশায় রাধানগর সৈকত যাওয়া যায়। থাকার জন্য বেশ কিছু ইকো-ফ্রেন্ডলি রিসর্ট রয়েছে।
৪. কোভালাম, কেরালা
কেরালার তিরুবনন্তপুরমের কাছে অবস্থিত কোভালাম সৈকত তার শান্ত পরিবেশ এবং নারকেল গাছের সারি দিয়ে ঘেরা উপকূলের জন্য পরিচিত। লাইটহাউস বিচ, হাওয়া বিচ এবং সমুদ্র সৈকত এখানকার প্রধান আকর্ষণ। গ্রীষ্মকালে কোভালামে পর্যটকের ভিড় কম থাকে, যা শান্ত ছুটির জন্য আদর্শ। এখানে আয়ুর্বেদিক স্পা এবং ম্যাসাজ সেন্টারগুলো পর্যটকদের মধ্যে জনপ্রিয়, যা শরীর ও মনকে সতেজ করে। সৈকতে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের জাল ফেলার দৃশ্য এবং তাজা সামুদ্রিক খাবার এখানকার বিশেষত্ব। কোভালামে সাঁতার কাটা এবং সানবাথিং ছাড়াও নিকটবর্তী পদ্মনাভস্বামী মন্দির পরিদর্শন করা যায়। তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই সৈকত সহজেই পৌঁছানো যায়।
৫. মান্দারমণি, পশ্চিমবঙ্গ
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে অবস্থিত মান্দারমণি সৈকত বঙ্গোপসাগরের তীরে একটি লুকানো রত্ন। এটি ভারতের দীর্ঘতম ড্রাইভেবল সৈকতগুলোর একটি, যেখানে গাড়ি নিয়ে সৈকতে ঘোরার অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। মান্দারমণির শান্ত পরিবেশ, লাল কাঁকড়ার উপস্থিতি এবং নির্জনতা এটিকে গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য নিখুঁত করে। এখানে জলক্রীড়ার চেয়ে প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে তাজা মাছ, চিংড়ি এবং ইলিশের পদ উপভোগ করা যায়। মান্দারমণিতে থাকার জন্য বাজেট-বান্ধব রিসর্ট এবং গেস্টহাউস রয়েছে। কলকাতা থেকে গাড়িতে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার পথ, এবং নিকটতম রেলস্টেশন কাঁথি। গ্রীষ্মকালে এখানে ভিড় কম থাকায় শান্তিপ্রিয় পর্যটকদের জন্য এটি আদর্শ।
ভারতের এই পাঁচটি সৈকত—গোকর্ণ, আগোন্দা, রাধানগর, কোভালাম এবং মান্দারমণি—গ্রীষ্মকালীন শান্ত ছুটির জন্য আদর্শ গন্তব্য। এই সৈকতগুলো শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নয়, বরং নিরিবিলি পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও উপহার দেয়। গ্রীষ্মের তাপ থেকে মুক্তি পেতে এবং প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে এই সৈকতগুলোতে একটি ছুটি পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণের আগে আবহাওয়া এবং থাকার জায়গা বুকিং নিশ্চিত করে নিন, যাতে আপনার ছুটি নির্বিঘ্ন এবং আনন্দময় হয়। এই সৈকতগুলোর শান্তি ও সৌন্দর্য আপনার মনকে সতেজ করে তুলবে, এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটির একটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি উপহার দেবে।