সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) সোমবার কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কথিতভাবে অক্ষমতায় ভুগছেন এমন এক আবেদনকারীকে তার রিট পিটিশন চালিয়ে না গিয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছে।
বিচারপতি বিআর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ এই মন্তব্য করেন, যখন তারা কোভিড-১৯ টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (অ্যাডভার্স ইফেক্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন বা এইএফআই) নিরসনের জন্য উপযুক্ত নির্দেশিকা প্রণয়নের দাবিতে দায়ের করা একটি আবেদনের শুনানি করছিলেন। বেঞ্চ বলেন, “আপনি যদি এখানে আপনার পিটিশন ঝুলিয়ে রাখেন, তাহলে দশ বছরেও কিছু হবে না। অন্তত আপনি যদি একটি মামলা দায়ের করেন, তাহলে দ্রুত কিছু স্বস্তি পেতে পারেন।”
আবেদনের পটভূমি
আবেদনকারী, যিনি কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ভুগে কথিতভাবে অক্ষমতার শিকার হয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টে (supreme court) একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে তাঁর শারীরিক এবং জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব পড়েছে।
তিনি কোভিড-১৯ টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলার জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা এবং নির্দেশিকা প্রণয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি নির্দেশ জারির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, তিনি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা দাবি করেছেন।
আবেদনকারীর পক্ষের আইনজীবী যুক্তি দেন, ভারতে কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ এবং নিরসনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, টিকা নির্মাতা এবং সরকারের পক্ষ থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, যার ফলে অনেক মানুষ অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ (supreme court)
শুনানির সময় বিচারপতি গাভাই এবং মাসিহ আবেদনকারীকে তাঁর দাবির জন্য রিট পিটিশনের (supreme court) পরিবর্তে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেন। বেঞ্চ বলেন, রিট পিটিশনের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিকার চাওয়ার পরিবর্তে ক্ষতিপূরণের জন্য একটি মামলা দায়ের করলে আবেদনকারী দ্রুত ফলাফল পেতে পারেন।
তারা আরও জানান, এই ধরনের জটিল মামলার শুনানি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে, যা আবেদনকারীর জন্য অসুবিধাজনক হতে পারে। বিচারপতি গাভাই বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি আপনার সমস্যা, কিন্তু এখানে পিটিশন চালিয়ে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না। একটি মামলা দায়ের করলে আপনি দ্রুত ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।”
আদালত এই পিটিশনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নির্দেশিকা প্রণয়নের দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলেও, ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণের দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতকে উপযুক্ত ফোরাম হিসেবে বিবেচনা করেছে। আদালত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধির কাছেও এই বিষয়ে জবাব তলব করেছে, বিশেষ করে টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য সরকারের বিদ্যমান ব্যবস্থা সম্পর্কে।
শালবনিতে বাংলার ঐতিহাসিক প্রকল্প, ১৫ হাজার কর্মসংস্থান, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
কোভিড-১৯ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপট
ভারতে কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচি ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়, যেখানে কোভিশিল্ড (অ্যাস্ট্রাজেনেকা) এবং কোভ্যাক্সিন প্রধান টিকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই টিকাগুলি সাধারণত নিরাপদ বলে বিবেচিত হলেও, কিছু বিরল ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধা (থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম বা টিটিএস) এবং কোভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি বা হৃদস্পন্দনের সমস্যার মতো ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে টিকাকরণের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার খুবই কম, প্রায় ০.০১%।
তবে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসা সুবিধার ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিআইএল দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মৃত্যু বা অক্ষমতার শিকার ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। সেই সময় আদালত কেন্দ্রকে এইএফআই পর্যবেক্ষণের জন্য একটি পোর্টাল চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে, আবেদনকারীদের মতে, এই ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া জটিল।
আইনি ও সামাজিক প্রভাব
সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) এই পর্যবেক্ষণ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের প্রতিফলন। আবেদনকারীর মতো অনেকেই মনে করেন, টিকাকরণ কর্মসূচির সময় সরকার এবং টিকা নির্মাতারা সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে পর্যাপ্ত সতর্কতা জারি করেনি। এই ঘটনা জনস্বাস্থ্য নীতি এবং দায়বদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছে।
সামাজিক মাধ্যমে এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “টিকা আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে, কিন্তু যারা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের কি কোনো ন্যায় পাওয়ার অধিকার নেই?” অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, টিকার সামগ্রিক সুবিধা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি।
সরকারের অবস্থান
কেন্দ্রীয় সরকার এই শুনানিতে জানিয়েছে, টিকাকরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তবে, আবেদনকারীদের মতে, এই প্রক্রিয়া ধীরগতির এবং অপ্রতুল। সরকার আরও দাবি করেছে, টিকা নির্মাতারা তাদের পণ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করেছে, এবং জরুরি ব্যবহারের জন্য টিকাগুলি কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে।
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। আবেদনকারীর মতো ব্যক্তিদের জন্য দেওয়ানি মামলা একটি বাস্তবসম্মত সমাধান হতে পারে, তবে এটি জনস্বাস্থ্য নীতির বৃহত্তর প্রশ্নগুলির উত্তর দেয় না।
কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির সাফল্য সত্ত্বেও, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি স্বচ্ছ এবং কার্যকর ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। সুপ্রিম কোর্টের ভবিষ্যৎ নির্দেশনা এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা জনগণের মধ্যে টিকাকরণের উপর আস্থা বাড়াতে সহায়ক হবে।