সুপ্রিম কোর্টে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের আবেদনের শুনানি

সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। এই আবেদনটি মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের…

supreme court hearing for president rule of india

সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে দায়ের করা একটি রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে। এই আবেদনটি মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দায়ের করা হয়েছে। তবে, আদালত এই শুনানির সময় বিজেপি নেতাদের একাংশের কাছ থেকে উঠে আসা বিচারিক অতিক্রমণের অভিযোগের বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছে।

সোমবার এই মামলার উল্লেখ করা হলে, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চ বলেন, “আপনি কি চান আমরা রাষ্ট্রপতির প্রতি রাষ্ট্রপতি শাসন জারির জন্য রিট অফ ম্যান্ডামাস জারি করি? আমরা ইতিমধ্যেই নির্বাহী ক্ষেত্রে অতিক্রমণের অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছি।”

   

আবেদনের বিবরণ (supreme court)

এই রিট আবেদনটি অ্যাডভোকেট বিষ্ণু শঙ্কর জৈন দায়ের করেছেন, যিনি পশ্চিমবঙ্গে অবিলম্বে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং মুর্শিদাবাদে হিংসার তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এই কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। আবেদনে বলা হয়েছে, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন পাসের পর সংঘটিত সহিংসতায় তৃণমূল

কংগ্রেস (টিএমসি) সমর্থকরা বিজেপি সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়েছে, যার ফলে ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই অবনতিশীল যে, সাংবিধানিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে, এবং সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা প্রয়োজন।

সুপ্রিম কোর্ট (supreme court) এই আবেদনের জরুরি শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকার করেছে এবং মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এই বিষয়ে শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। আদালতের মন্তব্যে বিচারিক অতিক্রমণের অভিযোগের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রকাশ পেয়েছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক দুটি রায়ের প্রেক্ষাপটে—রাজ্যপালদের পাঠানো বিলের উপর রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ এবং ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের কিছু ধারা স্থগিত করা।

বিচারিক অতিক্রমণের অভিযোগ

সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) উপর বিজেপি নেতাদের একাংশের সমালোচনা তীব্র হয়েছে, যারা মনে করেন আদালত নির্বাহী ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে। সম্প্রতি, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেছেন, ভারত এমন গণতন্ত্র নয় যেখানে বিচারকরা আইন প্রণেতা, নির্বাহী বা “সুপার পার্লামেন্ট” হিসেবে কাজ করবেন। তিনি বিচারিক অতিক্রমণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেছেন, বিচারকদের কোনো জবাবদিহি ছাড়াই এমন ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত নয়।

এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রিম কোর্টের (supreme court) বেঞ্চ স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা রাষ্ট্রপতি শাসনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে সরাসরি নির্দেশ জারি করতে সতর্ক থাকবে। বিচারপতি গাভাইয়ের মন্তব্যে এই বিষয়ে আদালতের সংযমী অবস্থান প্রকাশ পেয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “বিজেপি বিভ্রান্ত। তারা চায় সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য নির্দেশ দিক, কিন্তু তারা ইতিমধ্যেই আদালতের উপর বিচারিক অতিক্রমণের অভিযোগ তুলছে।”

হার্টে ব্লকেজ নিয়ে হাসপাতালে সিভি আনন্দ বোস, দেখতে গেলেন মমতা

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের পটভূমি

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি এর আগেও উঠেছে। ২০২১ সালে, বিধানসভা নির্বাচনের পর সংঘটিত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে একাধিক পিআইএল দায়ের করা হয়েছিল, যেখানে টিএমসি সমর্থকদের দ্বারা বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে নোটিশ জারি করেছিল, তবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির কোনো নির্দেশ দেয়নি।

Advertisements

২০২৪ সালে, সন্দেশখালিতে টিএমসি নেতা শাজাহান শেখের বিরুদ্ধে জমি দখল এবং যৌন হয়রানির অভিযোগের পর জাতীয় তপশিলি জাতি কমিশন (এনসিএসসি) পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ করেছিল। তবে, কেন্দ্র সরকার এই সুপারিশ গ্রহণ করেনি।

মুর্শিদাবাদ সহিংসতার প্রেক্ষাপট

সাম্প্রতিক মুর্শিদাবাদ সহিংসতা ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় শুরু হয়, যেখানে তিনজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, টিএমসি সমর্থকরা এই সহিংসতার জন্য দায়ী, এবং রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই সহিংসতাকে “ধর্মীয় উৎপীড়ন” হিসেবে চিহ্নিত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিজেপি এবং আরএসএস এই সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। তিনি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আইনি ও রাজনৈতিক প্রভাব

সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারির মতো পদক্ষেপ সাংবিধানিকভাবে সংবেদনশীল এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত এই বিষয়ে সরাসরি নির্দেশ দেওয়ার পরিবর্তে রাজ্য সরকারকে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিতে পারে।

এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও তীব্র করতে পারে। সিপিআই(এম) নেতা হান্নান মোল্লার মতো বিরোধী নেতারা ইতিমধ্যেই টিএমসি এবং বিজেপির মধ্যে “নীরব জোট” এর অভিযোগ তুলেছেন, যা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের জন্য দায়ী। এই পরিস্থিতিতে, সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিচারিক ক্ষমতার সীমা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। আদালতের সংযমী অবস্থান এবং বিচারিক অতিক্রমণের অভিযোগের প্রতি সংবেদনশীলতা এই মামলার জটিলতা প্রকাশ করে। আগামী শুনানিতে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং সাংবিধানিক ভারসাম্যের উপর প্রভাব ফেলবে।