“মমতা ও শুভেন্দু মিলে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছেন”, অভিযোগ হান্নান মোল্লার

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা হান্নান মোল্লা (hannan mollah) গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী…

hannan mollah acuses TMC

পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় সিপিআই(এম)-এর প্রবীণ নেতা হান্নান মোল্লা (hannan mollah) গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মিলে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন। মোল্লার (hannan mollah) মতে, এই সহিংসতা একটি “সংগঠিত ঘটনা”, যার উদ্দেশ্য ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জন করা।

হান্নান মোল্লার অভিযোগ (hannan mollah)

সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিমের সঙ্গে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে হান্নান মোল্লা (hannan mollah) বলেন, “শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে একটি জোট রয়েছে। কলকাতা শহরে তারা ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছেন। এই নির্বাচনী বছরে তারা জানতেন যে, কেবল সাম্প্রদায়িক মেরুকরণই তাদের সাহায্য করবে।

   

মমতা এবং শুভেন্দু ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। এটি একটি সংগঠিত ঘটনা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নামে যে সহিংসতা ছড়িয়েছে, তা তৃণমূল এবং বিজেপির যৌথ ষড়যন্ত্রের ফল। মোল্লার দাবি, এই দুই দলই জনগণের মনোযোগ বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এবং দুর্নীতির মতো জ্বলন্ত সমস্যা থেকে সরিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মুর্শিদাবাদে সহিংসতার প্রেক্ষাপট

গত ১১ এপ্রিল রাতে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান, সুতি এবং সমশেরগঞ্জ এলাকায় ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সময় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই সহিংসতায় অন্তত তিনজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মালদার ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে যাতে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে না পারে।

তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে যে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকতে দিয়ে এই সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি মমতা সরকারের উপর আইনশৃঙ্খলা ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে।

বামেদের চায়ের টাকাও তৃণমূল দেয়, সিপিএমের কেবল পোস্টারবাজি, কটাক্ষ দিলীপের

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদের সহিংসতাকে “ধর্মীয় উৎপীড়ন” হিসেবে চিহ্নিত করে দাবি করেছেন যে, ৪০০-এর বেশি হিন্দুকে তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছেন এবং এই ঘটনার তদন্তের জন্য জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে একটি আবেদনও দাখিল করেছেন, যেখানে তিনি এই সহিংসতাকে “জাতিবিরোধী কার্যকলাপ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে, কলকাতা হাইকোর্ট এনআইএ তদন্তের আবেদন খারিজ করে জানিয়েছে যে, এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকার প্রয়োজন মনে করলে পদক্ষেপ নিতে পারে।

Advertisements

অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং অভিযোগ করেছেন যে, বিজেপি এবং আরএসএস এই সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “আমরা একবার জন্মাই, একবার মরি। তাহলে কেন দাঙ্গা করব?” তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঘর তৈরি করবে এবং একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) এই ঘটনার তদন্ত করছে। মমতা গভর্নর সিভি আনন্দ বোসকে মুর্শিদাবাদ সফর স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন, যদিও গভর্নর তাঁর সফর অব্যাহত রেখেছেন।

সিপিআই(এম)-এর অবস্থান

হান্নান মোল্লা (hannan mollah) এবং সিপিআই(এম) দাবি করেছেন যে, মুর্শিদাবাদের সহিংসতা তৃণমূল এবং বিজেপির “প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার” ফল। তারা এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। মোহাম্মদ সেলিম ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে একটি সমাবেশে বলেন, “তৃণমূল এবং বিজেপি মিলে জনগণের মনোযোগ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা থেকে সরিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।” সিপিআই(এম) অভিযোগ করেছে যে, এই দুই দলই নির্বাচনের আগে ভোটের মেরুকরণের জন্য এই কৌশল গ্রহণ করেছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

মুর্শিদাবাদের সহিংসতায় স্থানীয় বাসিন্দারা ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অনেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী মমতা সরকারের উপর অভিযোগ তুলে বলেছেন, “এই দাঙ্গা তৃণমূল সরকারের ইচ্ছায় ঘটছে।” তিনি মমতার “ধর্মনিরপেক্ষতার ভান” নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এই ঘটনা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের এই প্রবণতা আগামী দিনে রাজ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সিপিআই(এম)-এর মতো বিরোধী দলগুলি জনগণকে সতর্ক থাকার এবং সাম্প্রদায়িক প্ররোচনায় না পড়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মুর্শিদাবাদের সহিংসতা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির একটি জটিল চিত্র তুলে ধরেছে। হান্নান মোল্লার অভিযোগ তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে একটি “নীরব জোট” এর ইঙ্গিত দেয়, যা নির্বাচনী সুবিধার জন্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকে ব্যবহার করছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ এবং স্বচ্ছ তদন্তের প্রয়োজন। মুর্শিদাবাদের জনগণ শান্তি ও নিরাপত্তার প্রত্যাশায় রয়েছেন, এবং রাজনৈতিক দলগুলির উচিত জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া।