২০২৫ সালে বিনিয়োগের জগতে সোনা (Gold prices) হয়ে উঠেছে সবচেয়ে লাভজনক সম্পদ। অন্যান্য সব অ্যাসেট ক্লাসকে পিছনে ফেলে এই বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সোনার দাম (Gold prices) বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। গত এক বছরে এই মূল্যবৃদ্ধি(Gold prices) দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশেরও বেশি। সোমবার সকালে বিশ্ববাজারে সোনার দাম ইতিহাসে প্রথমবার $৩,৩৮২ প্রতি আউন্স ছুঁয়ে ফেলেছে। এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে যেমন রয়েছে বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা, তেমনই যুক্ত হয়েছে মার্কিন ডলারের তিন বছরের সর্বনিম্ন স্তরে পতন।
Also Read | কম খরচে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটানোর সেরা কৌশল
বিশ্বের আর্থিক বাজারে যখন ধোঁয়াশা, তখন বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে সোনার (Gold prices) দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রবণতা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে। ডলার ইনডেক্স ১০০-এর নিচে নেমে এসে ৯৮-তে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন। দুর্বল ডলার সাধারণত সোনার দামের (Gold prices) ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ এতে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জন্য সোনার দাম তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে ওঠে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা আরও একধাপ বেড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আমদানিকৃত খনিজ সম্পদের ওপর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি, দুই দেশের মধ্যকার পণ্যের ওপর শুল্কের হার ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যা দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
Also Read | লাভবান হতে ১০০ টাকার নিচে এই ৩টি শেয়ারে বিনিয়োগ করুন
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প একটি নতুন “নন-টারিফ চিটিং লিস্ট” প্রকাশ করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে মুদ্রা হেরফের, রপ্তানি ভর্তুকি, ভ্যাট বা পরোক্ষ শুল্ক, পণ্য ডাম্পিং, পেটেন্ট চুরি, নকল পণ্য তৈরি এবং ট্যারিফ এড়াতে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির মতো বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ। এই তালিকা মার্কিন বাণিজ্যিক ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেছে, এবং এতে স্পষ্ট যে ট্রাম্প ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের উত্তেজনামূলক বাণিজ্যনীতি এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সোনার দামের ঊর্ধ্বগতিকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে। কারণ বিশ্ববাজারে অনেকে এই ধরনের সংকটে সোনা (Gold prices) কেনাকাটাকে সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।
অন্যদিকে, চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নতুন বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগতে পারে। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, এবং বিনিয়োগকারীরা নিজেদের সম্পদ সুরক্ষিত রাখতে সোনা কেনায় ঝুঁকছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখন সোনা মজুতের পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ভারত, চীন এবং রাশিয়া তাদের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের একটি বড় অংশ এখন সোনায় রূপান্তর করছে। এর ফলে বাজারে চাহিদা আরও বাড়ছে এবং দাম ঊর্ধ্বমুখী।
সব মিলিয়ে, ২০২৫ সালের এই সময়টা সোনার (Gold prices) বাজারে এক নতুন যুগের সূচনা করছে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। যেখানে অনিশ্চয়তা যত বাড়বে, সোনার দামও তত উপরের দিকে উঠবে—এ যেন এক অলিখিত সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।