কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে রবিবার রাতে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা পাথুরিয়াঘাটার একটি কমার্শিয়াল বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের (Kolkata Fire) ঘটনা নাড়িয়ে দিল গোটা শহরকে। রাতের নিস্তব্ধতা চিরে হঠাৎই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। ৬৫/এ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের ওই চারতলা ভবনের চারতলায় আগুন লাগে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন, (Kolkata Fire) আর মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা চতুর্থ তলা।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন, ওই তলায় একটি কাপড়ের গুদাম (Kolkata Fire) ছিল, সেখান থেকেই আগুনের (Kolkata Fire) সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ঘন ঘন দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন ছড়াতে সময় নেয়নি। এর ফলে বিল্ডিংয়ের ভিতরে থাকা মানুষজন চরম সংকটে পড়েন। তারা প্রাণ বাঁচাতে ছাদের দিকে ছুটে গেলেও সেখানে ছিল আরেক বিপদ—ছাদের দরজায় তালা। বেরোনোর আর কোনো রাস্তা না পেয়ে ভিতরে আটকে পড়েন কয়েকজন। ফলে আতঙ্ক, ধোঁয়া, ও দমবন্ধ হওয়ার মধ্যে পড়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দুইজন।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে দমকল (Kolkata Fire) । তবে পাথুরিয়াঘাটা এলাকার গলিগুলি চরম সংকীর্ণ হওয়ায় দমকলের ইঞ্জিন ঢুকতে সমস্যা হয়। অনেক চেষ্টা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে অবশেষে ১০টি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন (Kolkata Fire) নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন দমকল কর্মীরা। ততক্ষণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধার করা হয়েছে পাঁচজন আহতকে। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে একজন স্থানীয় একটি মন্দিরের পুরোহিত। দুর্ঘটনার সময় তিনি পাশের একটি দোকানে ছিলেন এবং ধোঁয়ার কারণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। আহতদের দ্রুত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতেই তিনজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তবে আরও দু’জন বিল্ডিংয়ের ভিতরে ধোঁয়ার কারণে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আটকে ছিলেন। সোমবার সকালে বিল্ডিংয়ের কুলিংয়ের কাজ চলাকালীন তাঁদের উদ্ধার করা হয়। ধোঁয়া সরাতে এবং বিল্ডিং পুরোপুরি ঠান্ডা করতে এখনো দমকল কর্মীরা কাজ করছেন।
এখনও পর্যন্ত ঠিক কী কারণে এই আগুন (Kolkata Fire) লেগেছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে দমকলের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন লাগতে পারে। দমকল ও পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, একটি বহুতল কমার্শিয়াল ভবনের ছাদে তালা দেওয়া থাকল কীভাবে? অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ঘাটতি ও নিরাপত্তা বিধি না মানার অভিযোগ উঠছে ভবনের মালিকের বিরুদ্ধে।
এই ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সবাই চাইছেন, প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিক এবং ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, শহরের বুকে সেই ভয়াবহ মুহূর্তের রেশ থেকে এখনো বেরোতে পারেননি পাথুরিয়াঘাটার মানুষজন।