Brigade Rally: এক সময় রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক বলে অভিযুক্ত হয়েছিল সিপিএম। বিরোধীরা প্রায়শই দাবি করতেন, এই দলই রাজ্যে কম্পিউটার বিপ্লবের সূচনায় বাধা সৃষ্টি করেছিল। সে সময়কার তীব্র সমালোচনার ফলেই অনেকদিন পর্যন্ত সিপিএমকে প্রযুক্তিবিরোধী দলের তকমা বহন করতে হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবি আজ অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখনকার সিপিএম আর আগের মতো নেই। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে তারা নতুন পথে হাঁটছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে নিজেদের বার্তা ডিজিটাল মাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়ার পরতে পরতে।
বর্তমানে বামেদের নিজস্ব আইটি সেল গঠিত হয়েছে, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সক্রিয়। বিশেষ করে যুবশক্তি এখন প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের বক্তব্য, কর্মসূচি এবং রাজনৈতিক বার্তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে বামফ্রন্টের এই ডিজিটাল রূপান্তর নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।
২০২৫-এর ব্রিগেড সমাবেশ সেই পরিবর্তনের এক বাস্তব উদাহরণ হয়ে উঠতে চলেছে। ব্রিগেডের ময়দান এই বছর শুধু জনসমাগমেই নয়, প্রযুক্তির ব্যবহারের দিক দিয়েও এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চলেছে। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো সভা পরিচালনার ক্ষেত্রে এবার বিশেষ আইটি টিম কাজ করবে। একটানা পুরো অনুষ্ঠান রেকর্ড ও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জন্য আটটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে সভাস্থলে। শুধু তাই নয়, ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে আকাশপথে সভার দৃশ্য ধারণ করা হবে, যা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৩০ জনের একটি দক্ষ প্রযুক্তি টিম মাঠে থাকবে ব্রিগেডের দিন। তারা শুধুমাত্র ভিডিওগ্রাফি বা ছবি তোলার কাজই করবে না, সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, এক্স (পূর্বতন টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি মাধ্যমে তা আপলোড করে পৌঁছে দেবে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে। সভাস্থলে উপস্থিত হতে না পারা সমর্থকদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক বিশেষ উদ্যোগ।
এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারে বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস অনেকদিন ধরেই এগিয়ে রয়েছে। তাদের মিটিং-মিছিল, প্রচার বা র্যালি – সব ক্ষেত্রেই পেশাদার সংস্থার সাহায্য নেওয়া হয়। এমনকি প্রযুক্তির প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়েও নজর থাকে। সেই তুলনায় বামফ্রন্ট অতীতে কিছুটা পিছিয়ে ছিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। তবে সময় বদলেছে, সঙ্গে বদলেছে বামেদের দৃষ্টিভঙ্গিও। আগের মতো আর কেবল আদর্শনিষ্ঠ প্রচার নয়, এখন বাস্তব ও আধুনিকতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে এগোচ্ছে তারা।
সিপিএমের এক আইটি সেল কর্মীর কথায়, “আজকের দিনে প্রচারের মাধ্যম পাল্টে গিয়েছে। মানুষ এখন মোবাইলেই সমস্ত তথ্য গ্রহণ করে। তাই আমাদের বক্তব্য, বার্তা ও আন্দোলনের রূপরেখাও মোবাইল স্ক্রিনেই পৌঁছে দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া রাজনৈতিক প্রচার সম্ভব নয় এখন।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মানুষের ধৈর্য কমেছে, মনোযোগও কম। তাই অল্প সময়ে আকর্ষণীয় কনটেন্ট তৈরি করে তা তুলে ধরতে হয়। সিপিএম সেই দিকেই এখন নজর দিচ্ছে। তারা তাদের বার্তা সংক্ষিপ্ত, কার্যকরী এবং ভিজ্যুয়ালি প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টা করছে।
এই ‘ডিজিটাল সিপিএম’ রূপান্তরের পেছনে রয়েছে এক নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব, যারা রাজনীতিকে প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে। শুধুমাত্র শ্লোগান নয়, ডেটা অ্যানালিটিক্স, ডিজিটাল ক্যাম্পেইন, ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ, গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং—এসব বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আইটি সেলের সদস্যদের।
অনেকেই বলছেন, এক সময় যারা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে ছিল বলে চিহ্নিত হতো, আজ তারাই প্রযুক্তিকে সহযোদ্ধা করে নিচ্ছে নিজেদের আন্দোলনের পথচলায়। এই পরিবর্তন বামফ্রন্টকে যে নতুন দিশা দেখাবে, সে বিষয়ে আশাবাদী নেতাকর্মীরা।
সব মিলিয়ে বলা চলে, ব্রিগেডে সিপিএমের এই ‘ডিজিটাল’ রূপ কেবল একটি সমাবেশ নয়, বরং একটি বার্তা—বামেদের আর শুধুমাত্র পুরনো ঘরানার রাজনীতি নয়, তারা এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির সঙ্গেও হাঁটতে প্রস্তুত। আগামীর রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে যে এই পথ ছাড়া উপায় নেই, তা বুঝতে আর কোনও সন্দেহ নেই।