ব্রিগেড থেকে পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক বামেদের

কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক-বিরোধী শ্রম কোড এবং কৃষকদের প্রতি অবহেলার নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ২০ মে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ঘোষণা করেছে বামপন্থী (left) শ্রমিক ও কৃষক…

left calls strike

কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক-বিরোধী শ্রম কোড এবং কৃষকদের প্রতি অবহেলার নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ২০ মে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ঘোষণা করেছে বামপন্থী (left) শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনগুলি। এই সমাবেশে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত আছেন , যারা তাদের ক্ষোভ ও দাবি তুলে ধরছেন। তবে, এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—এটি কি শ্রমিকদের জন্য সত্যিকারের লড়াই, নাকি ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক মঞ্চ তৈরির কৌশল?

Advertisements

ব্রিগেড আসলে কাদের? (left)

তীব্র মেরুকরণের রাজনীতির আবহে আজ ব্রিগেডে সমাবেশ বামেদের(left)। বাংলার খেটে খাওয়া মানুষদের হাল ফেরাতেই এই সমাবেশকে ঘিরে সারা বাংলার খেটে খাওয়া মানুষ এসে উপস্থিত হচ্ছেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে এই ব্রিগেড আসলে কাদের? উচ্চবিত্তদের না প্রান্তিক মানুষদের জন্য। বামপন্থা (left)সবসময়ে ই শ্রমিক দের কথা বলে। তবে কেউ কেউ বলছেন ভোটের দায় বড়ো দায়, তাই এখন বামপন্থীরা প্রান্তিক মানুষদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চক চকে মুখেদের উপরেই ভরসা রেখেছে।

   

তবে সবচেয়ে বড়ো প্রশ্ন হল ধর্মঘটের ডাক কেন? কেন এখনো পুরোনো ভাবমূর্তি থেকে বেরোতে পারছে না বামেরা (left)। জনজীবনকে অচল করে দিয়ে কি সত্যি মানুষের মন জয় করা যাবে নাকি আরো দূরে সরে জাবেদ মন থেকে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

বাম শাসনের স্মৃতি ও সমালোচনা

ব্রিগেডে আজ আলোচনার বিষয় বস্তু হতে পারে চালের দাম বৃদ্ধি, এস এস সি দুর্নীতি এবং অভয়া কাণ্ডের মতো ঘটনা নিয়েও। রাজ্যের শিল্পের এবং শিক্ষার অবস্থা নিয়েও অনেক বাম সমর্থক প্রশ্ন তুলছেন, তাদের ক্ষোভ সামনে এনেছেন। বলাই বাহুল্য এই ব্রিগেডের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচন। আজ অনেকেই হয়তো মুখে মুখোশ পরে বলবেন ভোট নয়, মানবিকতার খাতিরেই এই ব্রিগেড সমাবেশ। তবে স্মৃতি যে বিষাদের তা ৩৪ বছরের বামেদের শাসন কাল পর্যালোচনায় বোঝা যায়।

প্রাথমিকে ইংরেজি ভাষা তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে একাধিক কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সাক্ষী হয়ে রয়েছে বঙ্গবাসী। মরিচ ঝাঁপির গণ হত্যা, সাঁই বাড়ির নৃশংস হত্যা কান্ড থেকে শুরু করে নন্দীগ্রামের ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো মানুষের স্মৃতিতে অমলিন। সেই দলের ই নেতারা এখন মঞ্চে অভিযোগ করছেন রাজ্যের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে।

কথায় কথায় ধর্মঘট

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তার বক্তব্যে ব্রিগেড নিয়ে বলেছিলেন বিজেপি কে বাংলায় আটকানোর জন্যই চেষ্টা করছে বামফ্রন্ট। পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করছে তৃণমূলকে। তবে একটা প্রশ্ন বারে বারে মনে আসতেই পারে মিটিং, মিছিল কিংবা ব্রিগেড সমাবেশের মতো কর্মকান্ড করলেই কি হৃত গৌরব পুনরুজ্জীবিত হবে বামেদের (left)।

দেশ ব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়ে ২০২৬ এর বিধানসভায় কি তারা প্রমাণ করতে পারবে শুন্য শুধু শূন্য নয়। ভোটের ফলাফল কি হবে তা সময় বলবে। তবে সময় বদলেছে। যে বামফ্রন্ট কম্পিউটার শিক্ষার বিরোধিতা করেছিল আজ মানুষ অনেক বেশি ডিজিটাল এবং প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের কাছে সময় নেই আজ, ৩৪ বছরের শাসনে কথায় কথায় ধর্মঘট আর লোডশেডিং এর বাড়াবাড়ি এই যুগে আর মানুষ সহ্য করবে না।

Advertisements

ননন্দকাননে শাহরুখ ব্রিগেডের সম্মুখীনের পূর্বে হোঁচট খেল গিলের গুজরাট?

বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এই সমাবেশকে তৃণমূলের সঙ্গে বামফ্রন্টের ‘গোপন সমঝোতা’র অংশ বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “বামেরা ব্রিগেডে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে, কিন্তু এটা তৃণমূলকে সাহায্য করার কৌশল। বাংলায় বিজেপিকে আটকাতে বাম-তৃণমূল এক হয়েছে।” তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ পালটা বলেন, “বামেদের সমাবেশে কতজন এল, তা দেখার বিষয়। জনগণ তৃণমূলের উন্নয়নের পক্ষে। বামেরা ৩৪ বছর শ্রমিকদের শোষণ করেছে, এখন তাদের নাটক কেউ বিশ্বাস করে না।”

রাজনৈতিক লক্ষ্য: ২০২৬-এর নির্বাচন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই সমাবেশ ও ধর্মঘটের ডাক বামফ্রন্টের ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভিত্তি তৈরির কৌশল। ২০১১ সালে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্রিগেড সমাবেশ ও দেশব্যাপী ধর্মঘটের মাধ্যমে তারা শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে সমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। তবে, বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চলমান মেরুকরণের আবহে বামেদের এই প্রচেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স-এ সমাবেশ ও ধর্মঘটের ডাক নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ব্রিগেডে বামেদের ধর্মঘটের ডাক শ্রমিকদের জন্য আশার আলো। তৃণমূল ও বিজেপির শোষণের বিরুদ্ধে এই লড়াই জরুরি।” আরেকজন লিখেছেন, “মারিচঝাঁপি, নন্দীগ্রামের পর বামেদের শ্রমিকদের জন্য কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই। এটা শুধু ভোটের নাটক।”

ব্রিগেড সমাবেশ থেকে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক বামফ্রন্টের শ্রমিক-কৃষকদের ইস্যুতে সরব হওয়ার প্রচেষ্টার অংশ। এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হলেও, অতীতের কলঙ্ক এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এই সমাবেশের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০ মে’র ধর্মঘট কতটা সফল হবে এবং ২০২৬-এর নির্বাচনে বামেদের অবস্থান কী হবে, তা সময়ই বলবে।